যত্ন শব্দের অর্থ হচ্ছে, পরিশ্রম সহকারে চেষ্টা, প্রয়াস,শুশ্রুষা,আদর,অধ্যবসায়,উদ্যম, আপ্যায়ন, খাতির ইত্যাদি। মূল কথা হচ্ছে কোনো কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা।
আমরা ব্যক্তি জীবনে কোনো কিছুর যত্নের ত্রুটি রাখি না। ছেলেবেলায় খেলাধূলার প্রতি যত্নশীল, তারপর লেখাপড়া,আবার শখের কোনো জিনিসের প্রতিও আমরা দারুণ ভাবে যত্নশীল হয়ে পড়ি।
যেমন শখের কোনো জামা,কলম,ঘড়ি কিংবা ফুল বা ফলের গাছ। যার যে জিনিসের প্রতি যত যত্নশীল সেটা তত টেকসই এবং সুন্দর হয়।
কারো শখের কোনো ড্রেস সে চায় না যত্রতত্র ব্যবহার করে নষ্ট করে ফেলতে। কিন্তু শ্রম দ্বারা লব্ধ অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করলে নষ্ট হয়না।অপরের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হয়। জ্ঞান যত ব্যবহার করা হবে সেটা তত সুন্দর এবং টেকসই হবে।
পৃথিবীতে সব কিছুই নশ্বর। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। জড় থেকে জীব, মানুষের তৈরী থেকে আল্লাহর সৃষ্টি সব কিছুর লয় আছে। কিন্তু জ্ঞানের কোনো লয় নেই, ধ্বংশ নেই,বিনাশ নেই। যতদিন বেঁচে থাকবে জ্ঞান অর্জন করতে থাকবে। অর্জিত জ্ঞান সুপথে বা সৎকাজে সৎভাবে ব্যবহার করবে। অর্জিত জ্ঞান যদি অসৎ উদ্দেশ্যে বা খারাপ পথে মন্দ কাজে ব্যবহৃত হয় তা ধ্বংস ডেকে আনবে। যে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্যে,ড্রোন হাইপারসনিক মিসাইলে,রকেট ইত্যাদিতেও জ্ঞান অর্জন করতে হবে যত্নের সাথে।
আসলে যত্নে আমরা কতোকিছুই গড়ি। পুতুল খেলা থেকে বিবাহ,সংসার। সংসার ধর্ম পালনে আমরা কতোটা যত্নশীল, কতো নিয়মানুবর্তিতা। তবুও ভেঙে যায় সংসার।স্বামী নামক দেবতার কতো যত্ন করি সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে সকাল অব্দি।
তবুও সে এক সময় চলে যায় তার সঙ্গিনীকে সাগরে ভাসায়ে। কতো আদরের সন্তান, কতো ভালোবাসা, কতো যত্নে তাকে লালন-পালন করে। তবুও সে একদিন মা-বাবাকে ছেড়ে দূরে চলে যায়, নয়তো তাদের পাঠায় বৃদ্ধাশ্রমে।
নিজের দেহের কতো যত্ন করে মানুষ। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, এক্সারসাইজ, ঔষধ আরো কতো কী! যৌবনকে ধরে রাখার যতো রকম প্রচেষ্টা চলে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মহলে। উচ্চবিত্তে তো যৌবন বা সুন্দরের প্রতিযোগিতা চলে। এবার সেরা সুন্দরীর তালিকায় আছে, জোডি কামার।
কম্পিউটার প্রোগ্রাম মতে, জোডি কামার পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। অষ্টমে আছে ভারত বর্ষের দ্বীপিকা পাণ্ডে। একসময় ঐশ্বরিয়া ছিলেন, ছিলেন সুচিত্রা সেন। এছাড়াও আরো অনেক নামকরা সেরা সুন্দরী রয়েছেন। তাদের গ্ল্যামার ও সৌন্দর্যের চর্চা চলে স্পেশাল ভাবে। তবুও তা একদিন নষ্ট হয়ে যায়।এতো যত্নের সৌন্দর্যকে আর ধরে রাখতে পারেনা।
শুনেছি সুচিত্রা সেন নাকি শেষ বয়সে তার চেহারাটা কাওকে দেখাতে চাইতেননা। তিনি খুবই দুঃখিত ছিলেন তার পরিবর্তিত চেহারা নিয়ে। এমনটা সবার ক্ষেত্রেই। তাই বলে কী কেউ নিজেকে অযত্নে ফেলে রাখে? হ্যা রাখে, যার যত্ন করার সুযোগ নেই সামর্থ নেই সে রাখে।তবুও তার সীমাবদ্ধতার ভিতরেও সে চেষ্টা করে।
একজন পুরুষ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরেই বৃদ্ধের রূপ পায়,যদি সে নিজেকে যত্নে না রাখে,পরিপাটি না রাখে। আবার একজন সত্তর বছর বয়সেও বৃদ্ধ হয়না।তার মন মানসিকতা,তার ফিটনেস,তার রুচিবোধ ইত্যাদি সার্বিক দিক দিয়ে যত্নের ছোঁয়ায় সে নিজেকে অনেকটাই ঠিক রাখতে পারে। উদাহরণ দিতে গেলে আমার পরিচিতই একজন আছেন। তাছাড়াও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সমাজসেবক ও কবি আফছার উদ্দিনের কথাও বলা যেতে পারে।আবার আমার ক্যাপশনের কথাই ভাবুননা। কাজী নজরুলের যৌবনের রাজটিকা তব ললাটে।
তাই বলছি, আসুন,নিজেকে যত্ন নিন,নিজের খেয়াল রাখুন,ভালোটা গ্রহণ করন,খারাপটা বর্জন করুন। যতটুকু সম্ভব সময় পেলে বই পড়ুন।পরনিন্দা পরচর্চা পরিত্যাগ করুন। প্রত্যেক কাজে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন।ভালো-মন্দের উত্তর পেয়ে যাবেন।
হোক পৃথিবী নশ্বর তাতে কী? যতদিন বাঁচবো ভালোভাবে বাঁচবো,সুন্দর ভাবে বাঁচবো। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যাবো কিছু নিদর্শন।
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, নিজেকে ভালোবাসুন, নিজ দেশকে ভালোবাসুন।