শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন

বিশেষ সাক্ষাৎকার: গুম-নির্যাতনের পরও আমি মানুষের রাজনীতি থেকে সরিনি: মোমিন মেহেদী

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১২ Time View

আহমেদ হোসাইন ছানু।।

 

মোমিন মেহেদী নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির চেয়ারম্যান । ১৯৯৫ সাল থেকে নিয়মিত লিখছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার আন্দোলন জোটের সাধারণ সম্পাদক থাকা কালে শিক্ষার্থীদের দাবিতে কর্মসূচিকালে গ্রেফতার হন। ২০১২ সালে তাঁর নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি। ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি শেষে বাসায় ফেরার পথে গুমের শিকার হন। ১০ দিন নির্মম নির্যাতনের পর অর্ধ মৃত অবস্থায় বাসার সামনে ফেলে রেখে যায় তৎকালিন প্রশাসনের কর্তারা। নতুনধারার রাজনীতির ১২ বছর এবং ফ্যাসিবাদ পতন-চলমান রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।

 

• বাংলাদেশের রাজনীতি প্রসঙ্গে আপনার মতামত জানতে চাই

মোমিন মেহেদী: বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতারিত হয়েছে। এই দেশ ব্যবসা করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে বারবার। এমনকি ক্ষমতায় আসা আর থাকা প্রতিটি সরকার প্রধান নির্মমভাবে বাংলাদেশের স্বার্থ-মানুষের স্বার্থ ভুলে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছে বারবার। বিনিময়ে আমজনতা ১ টাকার পণ্য কখনো কখনো ১০ টাকায় কিনতে বাধ্য হয়েছে এবং হচ্ছে। একথা সত্য যে, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী ধরনের সংস্কারের কথা বললেও হাঁটছে সেই ফ্যাসিবাদের পথেই। আমরা এখন পর্যন্ত মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার সঠিক পথে নেই। কমিশনগুলো থেকে প্রতিবেদন দিলেও তা জনবান্ধব-বাংলাশেবান্ধব হয়নি বলেই ধারণা করছি। তাছাড়া কোটা বিরোধী আন্দোলন করতে আসা শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করেছে, সেই আন্দোলন নির্মমতার পথে ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে।সেই সাথে অন্তর্ভুক্তিমূলকতা, বহুত্ববাদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার অন্তরায় তৈরি করছে ছাত্র নামধারী কিছু ষড়যন্ত্রকারী। সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক স্বরগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বাদ পড়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা আক্রান্তও হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদেরকে বলবো- বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের মানুষকে বাদ দিয়ে কিছু করতে চাইলে দেশের মানুষ অতিতের মত রুখে দাঁড়াবে। বায়ান্ন, ঊণসত্তর, একাত্তর, নব্বই এবং চব্বিশ বড় উদাহরণ হিসেবে আমাদের সামনে আছে।

• কেমন বাংলাদেশ চায় নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি?

মোমিন মেহেদী: বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের যে আকাঙ্ক্ষা, তার সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি-দুর্নীতি-খুন-গুম-মব জাস্টিস সরাসরি সাংঘর্ষিক। প্রতিটি বড় আন্দোলনের ক্ষেত্রে দুই ধরনের প্রবণতা থাকে। একটা প্রবণতা থাকে গণতান্ত্রিক, অর্থাৎ সবাইকে নিয়ে ইতিবাচক একটা দিকে যাওয়া। অন্যদিকে আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছিল, যেসব প্রবণতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছিল, বিপরীত পক্ষ হিসেবে কেউ কেউ সেই চর্চাগুলোকেই সামনে নিয়ে আসে। অভ্যুত্থান একটা গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষাকে সামনে এনেছে। মানুষ আশা করছে এমন একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা পাবে যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, জীবনচর্চা, লিঙ্গীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে প্রত্যেকে নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং রাষ্ট্র তার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদার গ্যারান্টি দেবে।

অন্যদিকে আমরা দেখছি, নানা ধরনের উগ্রতার একটা প্রকাশ ঘটছে। অভ্যুত্থান–পরবর্তী যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, সেটাকে কাজে লাগিয়ে একটা গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। মাজারের ওপর হামলা হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়, পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগত সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে, নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, এটা সত্যি। একই সঙ্গে আবার এ ঘটনাগুলোকে সংখ্যায় অনেক দেখিয়ে, অনেক রং চড়িয়ে, সারা দুনিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে। এখানে আমরা পতিত ফ্যাস্টিস্টদের ভূমিকা দেখছি; আবার ভারতের মিডিয়ার একাংশ ও তাদের শাসক দলের দিক থেকেও এ প্রচারণা দেখছি। এখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে তারুণ্যে রাজনৈতিক ঐক্যবদ্ধতার কোনো বিকল্প নেই।

 

• যতদূর জানি- ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ আপনি গুম হয়েছিলেন, সেই বিষয়ে বলবেন কি?

মোমিন মেহেদী: অবশ্যই। আমি মোমিন মেহেদী বরাবরই অন্যায়-অপরাধ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে থেকেছি ছাত্র জীবন থেকেই। যে কারণে ছাত্র জীবনে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। ২০১২ সালে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ‘রেডর‌্যালী’র মধ্য দিয়ে আমার নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করেছিলো নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি। এরপর থেকে নতুনধারার রাজনীতিকরা অন্যায়-অপরাধ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই প্রতিবাদ করেছে। যে কারণে নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির এক কর্মসূচির পর ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ রাতে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় তৎকালিন প্রশাসনের কর্তারা। টানা ১০ দিন নির্মম নির্যাতন চলেছে, আর ছাত্র-যুব-জনতার রাজনৈতিক মেলবন্ধন নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি আমার সন্ধানের দাবিতে অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়েছে। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষকবন্ধু আবদুল মান্নান আজাদ, শান্তা ফারজানা, কিরণ খান, মাহমুদ হাসান তাহের, ডা. নূরজাহান নীরা, মনির জামানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের একের পর এক পদক্ষেপের কারণে ফ্যাসিবাদ সরকার শেখ হাসিনার প্রশাসনের কর্তারা মৃত ভেবে যেখান থেকে নিয়েছিলো, সেখানেই ফেলে যায়। ২৫ মার্চ থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকি। সুস্থ্য হওয়ার পর আবারো আন্দোলনে নেমেছি। আমরা অসত্যের বিরুদ্ধে সত্য নিয়ে লড়াই করেছি। আমি মনে করি আয়না ঘরের বন্দী আর আহতদের পাশে সরকারের থাকা উচিৎ। দেশে আইন-শৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে একটা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রকেও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

আগেও আমরা দেখেছি, এ ধরনের ঘটনায় যথাযথ তদন্ত হয় না, প্রতিকার মেলে না, এমনকি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না। সে কারণে আমরা জোরালো দাবি করে আসছি, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করতে হবে এবং কর্তব্যরত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এটা করা গেলেই যে মিথ্যা প্রচারণাটা চলছে, সেটাকে আমরা যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারব।

একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে উগ্রতার বিরুদ্ধে একটা সামাজিক গণপ্রতিরোধ সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশে এ ধরনের উগ্রতার চর্চা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অনুমোদিত নয়, সেই বার্তাটি সুস্পষ্টভাবে তাদেরকে দিতে হবে।

 

• সারাদেশে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য কেন বাড়ছে বলে মনে করেন?

মোমিন মেহেদী: প্রথমত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হচ্ছে। রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে বর্বরতার সাথে। একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের একটা জাতীয় ঐকমত্য দরকার। এর অর্থ হচ্ছে, আমরা এত দিন যে রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্যে ছিলাম সেটা একটা স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত। সেখানে ক্ষমতাসীনেরা বাকি সবাইকে রাজনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। আমরা বলছি, একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যেটা হবে গণতান্ত্রিক, যেখানে সবাই এই ব্যবস্থার অংশীদার মনে করবে। এটাকে বলা যেতে পারে রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হবে, ক্ষমতা কীভাবে পরিচালিত হবে, তার একটা নিয়ম ঠিক করা। সবার স্বার্থই এটার সঙ্গে জড়িত। সে কারণে এ ধরনের একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরিতে সবারই একটা ন্যূনতম ঐক্যের মধ্যে থাকা দরকার। কিন্তু এর মানে এই নয় যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বিলীন হয়ে যাবে। দুটোই পাশাপাশি চলতে পারে। বিচ্যুতি অনেক জায়গায় থাকতে পারে। কিন্তু সব রাজনৈতিক পক্ষকে এ বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার, যাতে পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্মাণের যে কর্তব্য, সেটা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এই পরিবর্তনের জন্য সব পক্ষকে আরও অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। সেই সাথে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ-প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলেও আমি মনে করি।

• দেশে সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার কি দীর্ঘায়িত হবে, না কি নির্বাচন হবে?

মোমিন মেহেদী: দ্রব্যমূল্য কমাতে-দুর্নীতি থামাতে ব্যর্থ হলে সরকার আরো বেকায়দায় পরবে বলে আমি মনে করি। নতুনধারার রাজনীতিকরা বাবরবার বলে এসেছি, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে এমন জায়গায় নিয়ে এসেছিল যে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ফলে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলেও রাজনৈতিক ব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন দরকার, অনেক জায়গায় সংস্কার করতে হবে। আবার পুরো সংস্কারপ্রক্রিয়া শেষ করতে হলে তাহলে আবার নির্বাচন লাগবে। কেননা মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার, সংবিধান সংস্কার—এগুলো একটা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরই করতে হবে। চূড়ান্ত বিচারে সংসদেই সেটা চূড়ান্ত করতে হবে।

এখানে যাতে কোনো পক্ষ সৃষ্টি না হয়, সেভাবেই এখন সবার ভূমিকা পালন করা দরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকতর আলাপ-আলোচনাই পারে এ ধরনের পক্ষ-প্রতিপক্ষ তৈরি করার পথটা বন্ধ করতে। আলাপ-আলোচনা হলে নির্বাচনের আগেই কোন ধরনের সংস্কারগুলো দরকার, সেটা সুনির্দিষ্ট করা যাবে। আবার কোন সংস্কারগুলো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা করবেন, সেটাও সুনির্দিষ্ট করা যাবে।

আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলাম, জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল গঠন করার জন্য। এ কাউন্সিলে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার অংশীজন থাকবে এবং সরকার নিয়মিত বিরতিতে দৈনন্দিন রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনৈতিক উত্তরণের এই বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। তাতে দূরত্বটা কমবে এবং বাংলাদেশ সোজা রাস্তায় অগ্রসর হবে বলে আমি মনে করি।

 

• নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে আপনার অবস্থান কী?

মোমিন মেহেদী: নতুনধারার রাজনীতির একজন কর্মী হিসেবে বলতে চাই- নির্বাচন সুষ্ঠু হতে গেলে নির্বাচনের আগে অনেকগুলো সংস্কার করা দরকার। যেসব মৌলিক সংস্কার সংসদে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা করতে হবে, সে ক্ষেত্রেও আমাদের ন্যূনতম ঐকমত্য কোন জায়গায় হচ্ছে এবং আগামী নির্বাচিত সংসদ যাতে সেগুলো করে, তার জন্য একটা আইনি বাধ্যবাধকতা কীভাবে তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে একটা ঐকমত্য দরকার। আগামী নির্বাচনটা কী হবে? সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নটা কি সংশোধনী হিসেবে থাকবে, নাকি জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সেটা হবে। এ বিবেচনায় আমরা মনে করি, আগামী নির্বাচনটা গণপরিষদ, নিদেনপক্ষে সংস্কার সভার নির্বাচন হলে, জনগণের সম্মতির ভিত্তিতেই কিন্তু সংবিধানের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে, আমরা একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আর এজন্য প্রকৃত দেশপ্রেমিকদেরকে নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি ১২ বছর কাজ করছে, আগামীতেও সেই ধারা অব্যাহত রাখবে

 

• এই সময়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনকে কীভাবে দেখছেন?

মোমিন মেহেদী: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠাটা অস্বাভাবিক। এ ধরনের রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলে সেটাকে হবে বাংলাদেশের মানুষের সাথে-অনুভূতির সাথে প্রতারণা। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা দেখেছি, ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন করলে মানুষ সেটাকে ইতিবাচকভাবে নেয় না। ফলে যারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইবে, তাদেরকে এ বিষয়টা মাথায় রেখে এগিয়ে যাওয়া। ক্ষমতার সুবিধা না নিয়ে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, জনগণের ভেতর থেকে যাতে রাজনৈতিক দল যেন জন্ম না নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।

• নতুনধারা এবং আপনি কেমন বাংলাদেশের পক্ষে?

মোমিন মেহেদী: ২০১৮ সালে গুমের শিকার-নির্যাতনের শিকার আমি মোমিন মেহেদী মনে করি ৩৬ দিনের আন্দোলন বাংলাদেশের সামনে অসাধারণ অগ্রগতির সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, পুরো দক্ষিণ বিশ্বে বাংলাদেশ একটা নেতৃস্থানীয় দেশ হতে পারে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে গেলে একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রাথমিক শর্ত। সে জন্য সমাজে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর একটা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল, অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে তারা নিজেদেরকে বদলে নেবে। নবীন রাজনৈতিক শক্তিগুলো তারাও অধিকতর শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

আমরা মনে করি, একটা শক্তিশালী অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশের মানুষের যে ভবিষ্যৎ ও স্বপ্ন, সেটা বাস্তবায়ন করতে পারব। বাংলাদেশে যাতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, সেই লক্ষ্যেই সংগ্রাম করছে ছাত্র-যুব-জনতার রাজনৈতিক মেলবন্ধন নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি

 

একজন রাজনীতিক-কলামিস্ট হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কি ভাবছেন?

মোমিন মেহেদী: আমি মনে করি বাংলাদেশের অর্থনীতির হাল বুঝতে রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করলে, মানুষের সঙ্গে কথা বললে একই ফলাফল আসত। অর্থনীতির হালচালের দুটি স্তর আছে। প্রথমটি হচ্ছে একদম চরম বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলায় আনা। দ্বিতীয় স্তরটি হচ্ছে অর্থনীতিকে বেগবান করা। দুটি আলাদা কাজ। প্রথমটা প্রশাসনিকভাবে করা সহজতর। যেমন দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের বাদ দিয়ে দেওয়া, সুনির্দিষ্ট অপচয়ের খাতগুলো বাদ দেওয়া, রিজার্ভকে একটু স্থিতিশীল করা। এই জায়গায় সরকার কিছুটা সফল হয়েছে। কিন্তু বড় কাজটা হলো অর্থনীতিকে বেগবান করা। এটা শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ দিয়ে সম্ভব নয়। এখানে মূল বিষয়টি হলো অর্থনীতির চাকা যাঁরা ঘোরান, তাঁদের জন্য পরিবেশ তৈরি করা, তাঁদের জন্য প্রণোদনাগুলো কী হবে, সেটা ঠিক করতে হবে, তাঁদের জন্য আস্থার জায়গা তৈরি করা। আমাদের এখানে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তা যাঁরা, এমন নয় যে তাঁরা অর্থের জন্য বসে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশকে নিয়ে সবার আগে সবার ভাবা উচিৎ। তা না করে একের পর এক ক্ষমতা কেন্দ্রিক কথা বার্তা আলোচনা আমার মনে হয় হিতে বিপরীত হয়ে উঠছে। চলুন সবাই দেশকে নিয়ে ভাবি

 

• আপনাকে ধন্যবাদ

মোমিন মেহেদী: অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন—এ ধরনের শব্দের মধ্যে আটকে থাকাটাও একটা সমস্যা। এই সমস্যার মধ্যে উত্তরণের স্বপ্ন নিয়ে চলুন এগিয়ে যাই। আপনাকে ও সকল পাঠককে ধন্যবাদ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102