মনিরুজ্জামান খান সোহাগ।
৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীর প্রতি ন্যায় ও সমতার কথা বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দেওয়ার এক মহান উপলক্ষ্য। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ‘দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন’ থেকে জার্মান রাজনীতিবিদ ও জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থাপতিদের একজন, সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চ কে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। যদিও ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক ৮ মার্চ কে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়ে আসছে এই মহান দিনটি।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারী-পুরুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য নিশ্চিতকরণ সহ নানা আয়োজন থাকে এই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে। যদিও আইএমএফ -এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে ভিন্ন কথা! নারীর অগ্রগতির বর্তমান হার বিবেচনায়, পূর্ণ লিঙ্গ সমতা অর্জনে সময় লাগবে ২১৫৮ সাল পর্যন্ত (আইএমএফ), যা প্রকৃত অর্থেই আশঙ্কাজনক! কেননা, পরবর্তী পাঁচটি প্রজন্মকে অপেক্ষা করতে হবে সেই ডেডলাইন অতিক্রম করার জন্য!
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুরুটা জড়িয়ে আছে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত এক শ্রমিক আন্দোলনের সাথে। সে বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুচ কারখানায় নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনায়ন, ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করণের দাবিতে আন্দোলনে নেমে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে, আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে বহু নারীকে গ্রেফতার করা হয়। অনেক নারীকেই পাঠানো হয় কারা-অন্তরালে। অমানুষিক নির্যাতন করা হয় অনেকের উপর। আর সেই ধারাবাহিকতায় ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ গঠিত হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। প্রসঙ্গত, ১৯০৮ সালে নারী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করে নেন তাদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।
৮ মার্চ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হলো নারীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণ করা এবং ভবিষ্যতের পথ পরিক্রমা নির্ধারণ করার এক বিশেষ দিন, যেই দিন জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক বৈষম্য ভুলে সর্বক্ষেত্রে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেবার দিন। তাইতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস কে শুধুমাত্র ৮ মার্চের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব পর্যায়ের নারীদের যথাযথ সম্মান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব সময়ের জন্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নারীরা শুধু নারী নন। তারা কারো মা-বোন, কারো স্ত্রী-কন্যা, কারো দাদি-নানি, কারো বা ভাগ্নি-ভাতিজি। তাইতো নারীকে তার যথাযথ সম্মানের আসনে রাখা অপরিহার্য।