মোঃ সাইফ উদ্দিন:-
মাদক দ্রব্য গ্রহণের প্রতি তীব্র ইচ্ছাশক্তি কাজ করাকেই মাদকাসক্তি বলা হয়। মনের দুঃখ,কষ্ট, যাতনা স্বল্প সময়ের জন্য লাঘবের মিথ্যা আকাংখা থেকে মাদকাসক্তির জন্ম। মাদক দ্রব্য সেবনকারী ব্যক্তি কে পৌঁছে দেয় এক ভিন্ন জগতে এই কাল্পনিক কল্পনা থেকেই মূলত মাদকাসক্তির বিস্তার। সম্প্রতি সেবন কৃত মাদক দ্রব্যের মধ্যে আমাদের সবথেকে পরিচিত হচ্ছে ধুমপান। এছাড়াও মদ, ম্যারিজুয়ানা, আফিম, হেরোইন, কোকেন,ভাং, ড্রাগ ইত্যাদি মাদক দ্রব্য বর্তমানে লক্ষনীয়। তবে বর্তমানে হেরোইনের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। জীবনে হতাশা, ব্যর্থতা, কৌতুহল, অল্প বয়সে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়া, পারিবারিক কলহ, সঙ্গদোষ ইত্যাদি থেকে মাদক দ্রব্য গ্রহণের সূত্রপাত। দিনে দিনে এর গতি লাগামহীন ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।যার উপদ্রব ঢাকা বিভাগে সবথেকে বেশি। বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী দেশের মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লক্ষ।এর মধ্যে প্রায় ৮০% যুবক যুবতী যা সবথেকে আসংখ্যাজনক ঘটনা। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় আঠারো বছর বয়স জানে রক্ত দানের পুণ্য, কিন্তু আজ সেই আঠারো বছর বয়সী হচ্ছে রক্ত দূষণের কাজে গন্য। অধিক পরিমাণে মাদক দ্রব্য সেবনের ফলে সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে মনস্তত্ত্ব নামক শব্দটি। মাদক দ্রব্যের মূল্য অধিক হওয়ায় তা ক্রয়ের জন্য সেবনকারীরা জরিয়ে পারছে নানান অপরাধ মূলক কাজে। মাদক দ্রব্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০৳ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫০৳ ব্যয় করে থাকেন তার প্রয়জনীয় মাদক দ্রব্য ক্রয়ের জন্য।যা ব্যাক্তির নিত্য দিনের অপচয় জনিত ব্যয়ের শিষে অবস্থান করছে। এই নিকৃষ্ট দ্রব্য অর্থাৎ মাদক দ্রব্য সেবনের ফলে অর্থ অপচয় হচ্ছে শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে মানুষের সুস্থ জীবন ।চারা গজাচ্ছে নতুন প্রনঘাতি রোগ ব্যাধি। ব্যাহত হচ্ছে মানুষের জীবনের স্বাভাবিক গতি। সাম্প্রতি ৪০ বছরের পর অনাকাঙ্ক্ষিত অকাল মৃত্যুর প্রায় ৫০% ঘটছে মাদক দ্রব্য সেবনের ফলে। মাদকাসক্তি ঘটিত প্রাণঘাতক রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফুসফুসের ক্যান্সার,মূএথলিতে ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস, রক্ত ঘটিত রোগ যেমন Hepatitis C ইত্যাদি। তবে সরাসরি মাদক দ্রব্য গ্রহণ যতনা ভয়াবহ, তার থেকে ভয়াবহ হচ্ছে মাদক সেবনকারীদের মাদক থেকে নির্গত ধোঁয়া।যা একজন সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে তুলতে পারে। এমনকি এই ধোঁয়া যদি শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে মাতৃ গর্ভে প্রবেশ করে, তাহলে নবজাতক শিশু নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মগ্রহণ কোরবে। তাই মাদকাসক্তি নামক এই ভয়ংকর ছোবল থেকে দেশের মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রদিপ যুবসমাজকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।আর এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সঠিক আইন প্রণয়ন এবং আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে মানুষকে মাদক দ্রব্য সেবনের ভয়াবহতার ও ভবিষ্যৎ পরিনতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি মাদক দ্রব্য ক্রয় বিক্রয় বন্ধ ও মাদক দ্রব্য চোরাচালানীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।এর মাধ্যমেই মাদকাসক্তির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।