সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

ইয়াহিয়া খান ও জ্যোতিষী!

Coder Boss
  • Update Time : শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১০ Time View

লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম।

পাকিস্তানের লেখক ‘আরশাদ সামি’ তার বই “Three Presidents and an Aide Life, Power Politics” এ লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ১ লা ডিসেম্বর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘আই এস আই’ প্রেসিডেন্ট ‘ইয়াহিয়া খানকে’ জানিয়েছিলো বিশ্ব খ্যাত জ্যোতিষী “জিন ডিক্স” বলেছেন, ইয়াহিয়া খান আরো দশবছর ক্ষমতায় থাকবেন! তিনি ঐদিন ই তিন জেনারেল মিঃ গুল হাসান, মিঃ মিথা ও মিঃ হামিদ কে ডেকে বলিলেন, ” “পাকিস্তানের এক ইঞ্চি মাটি ও” হাত ছাড়া না হয়!” ২ রা ডিসেম্বর ইয়াহিয়া খান খবর পান, যশোর শহরের পতন ঘটেছে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারত বাহিনীর হাতে! তিনি ৩ রা ডিসেম্বর রওয়ানা হন এয়ার বাহিনী প্রধান ‘রহীম খানের অফিসে!’ জেনারেল হামিদ গাড়ী ড্রাইভ করছিলেন, ইয়াহিয়া খান তার পাশের সিটে এবং লেখক আরশাদ পিছনের সিটে একা!

গাড়ী চলছে একক পথে, হঠাৎ একটা শকুন গাড়ীর সামনে রোডে উড়ে এসে বসলো! হামিদ হর্ন দিচ্ছেন, শকুন কোন কেয়ার করছে না, গাড়ী থেকে প্রেসিডেন্ট নিজে নেমে এগিয়ে গেলেন শকুন কে ভয় দিয়ে তাড়াতে, শকুন প্রেসিডেন্ট বলে মূল্য দিলো না এবং শেষ পর্যন্ত একটা পাশের জমির শ্রমিক তার কোদাল দিয়ে তাড়া করে শকুন তাড়ালো!
ইয়াহিয়া খান পৌঁছাতে রহীম খান পরিকল্পনা শেষ করেছেন,”স্যার আমার মোট ২৭৮ টা যুদ্ধ বিমান, ৩০/৩৫ টা একযোগে ভারতের সব কয়টা বিমানবন্দর ক্ষতবিক্ষত করে দিবে যাতে ভারতের যুদ্ধ বিমান উড়তে না পারে, আমাদের জয় হবে ইনশাআল্লাহ!” কয়েক মিনিটের ভিতর চমৎকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন ৩ রা ডিসেম্বর ই বিকেল ৫ টার পর ভারত কে আক্রমন করে পাকিস্তান, একযোগে ৩২ টা বিমান দিয়ে! ভারতের ১২ টা বিমান ঘাটি দারুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ইন্দ্রা গান্ধী কলকাতা বাঙালি শরনার্থী শিবির পরিদর্শনে ছিলেন, তিনি দ্রুত উড়ে দিল্লি যেয়ে সেনাপ্রধান মানেকশাহ কে তলব করেন!

প্রিয় পাঠক, পাকিস্তানের ‘হাসান আব্বাস’ তার বই “Pakistan Drift into Extremism’ লিখেছে, ” যখন ভারতে বোম্বিং করছে পাকিস্তানের যুদ্ধ বিমান তখন
ইয়াহিয়া খানের রাজদরবারে চলছে মদের মাতম।
দেখলাম ইয়াহিয়া ও হামিদ মদ খাচ্ছেন এবং অনেকটা নেশায় টাল, এমন সময় তার খ্যাতিমান গায়িকা “নূর জাহান ” ফোন করলে তিনি নূর জাহান কে ফোনেই একটা গান গাইতে বলেন! উল্লেখ্য, আবেদনময়ী নূর জাহান দীর্ঘদিনের বেড পার্টনার ছিলেন ইয়াহিয়া খান সাহেবের!

ভারত আক্রমণ জোরদার করে পূর্ব পশ্চিম দুই সেক্টরে।
প্রথম পাকিস্তান রাজস্থানে স্থলপথে সফল হয় এবং এয়ার এ্যটাকে ভারতের একটা যুদ্ধ জাহাজ ডুবাতে সক্ষম হলে ইয়াহিয়া খানের বিশ্বাস বেড়ে যায়! বিশাল ভারতের তখনই ৯২০ খান যুদ্ধ বিমান, দ্রুত পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক অংশে এয়ার এ্যাটাক সহ ট্যাংক বাহিনীর জঙ্গি হামলায় পাকিস্তান প্রমোদ গুনে!
ইরানে, জর্ডানের কাছে সাহায্য চাইলে ইরানের “রেজা শাহ” রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়াতে চায় না সাব জানিয়ে দেয়! লেখক ইউনূস তার বই ‘Bhutto and the Breaking of Pakistan’ এ বলেছেন, ইরান পাকিস্তানের সাথে ভারত বিরোধী WAR PACT পাকিস্তান ইরান কে স্মরন করালে তারা সাব বলে “That pact was only war between Pakistan and India, not third country !

পাঠক, পাকিস্তান লেখক সুলতান আহমদ তার বই, “Memories of Reflections” এ বলেছেন , জর্ডান ইরান সরে গেলে পাকিস্তান চীন কে অনুরোধ করে, এমন কি কিসিঞ্জার চায়নাকে ভারত আক্রমণ করতে বললে,” তারা তা অগ্রাহ্য করে এবং নৈতিক সমর্থন থাকবে কিন্তু war Field এ নয় বলে জানায় দেয়! ৬ ই ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি দিয়ে সর্ব শক্তি নিয়োগ করে! পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক অংশ দখলে নেয়, ঢুকে যায় হাজার মাইল বিভিন্ন সীমান্তে! বাংলাদেশের অনেক জায়গার পাকসেনারা শহরগুলো ছেড়ে ঢাকা মুখী হয়! পাকিস্তান আমেরিকার সাহায্যের দ্রুত হস্তক্ষেপ চায় বার-বার! আমেরিকা সপ্তম নৌবহর এন্টারপ্রাইজ যা ভিয়েতনাম এলাকায় ছিলো, পাঠানোর কথা বলেন, কিন্তু আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার নবম নবম নৌবহরে ভীত ছিলো। এতক্ষণে রাশিয়ার নৌ যুদ্ধ জাহাজ ভারত মহাসাগরে শত খান টহল দিচ্ছে! ভারতের তখন মাত্র ১২০ খান যুদ্ধ শীপ যা তারা বঙ্গেপসাগর মুখে টহল দেয়ায় নিয়োজিত রেখেছিলো, যদিও আমেরিকার সেভেন ফ্লিটের সামনে তা ছিলো খুবই দুর্বল! ব্রেজনেভ হুমকি দিয়েছেন, “চায়না একটা গুলি ছুড়লে রাশিয়ান কয়েক সহস্র সেনা বেইজিং উপস্থিত পাবে!” অবস্থা বেগতিক দেখে জাতিসংঘে যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব যতবার দেয় ততবার সোভিয়েত ভেটো তে তা অকার্যকর হয়ে যায়। মিঃ বিদেশ মন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টা সেখানে প্রতিনিধিত্ব করতেছিলেন! তিনি ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লোভে পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হোক চাচ্ছিলেন! ইয়াহিয়া পোলান্ড প্রস্তাব মেনে নিতে বলতে যতবার ফোন করেছেন ততবার ভুট্টা বলেছেন শুনতে পাই না, অথচ অপারেটর বলে যাচ্ছে ” পুরা লাইন ক্লিয়ার”, ভুট্টা তাকে ধমক দেন!

লেখক বলেছেন তার বইয়ে,”১৬ ই ডিসেম্বর ভোরে কাদের সিদ্দিকী ও মেজর নাগরা মিরপুর ব্রিজের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করতে বলেন এবং অরোরা তেজগাঁও বিমান বন্দরে ‘সহ স্ত্রীক’ নেমে নিয়াজিকে আত্মসমর্পণ দলিল সই করান ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে, তখন মনে হয়েছিলো, জ্যোতিষীর ১০ বছর ইয়াহিয়া খানের ১০ দিনে রূপ নিলো আর “শকুন” পথে বাঁধা দিয়েছিলো কারন সে বুঝেছিল, “রাজাকে রাজনীতি জানতে হয়, ভারত আক্রমণ শুভ নয়! ”

ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন নিজ দেশকে ভালোবাসেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102