মো. সোহান হোসেন:
একাকীত্ব হলো একটি মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন বা আলাদা অনুভব করেন। এটি শুধু শারীরিকভাবে একা থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং মানসিক ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিও একাকীত্বের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে হতাশা হলো একটি মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি ব্যর্থতা, অপ্রাপ্তি, বা অসফলতার কারণে দুঃখ, নিরাশা, এবং অসহায়ত্ব অনুভব করেন। যখন কোন কিছুর প্রতি উচ্চ প্রত্যাশা থাকে কিন্তু তা পূরণ হয় না, তখন মানুষ হতাশা অনুভব করে। আবার আত্মহত্যা হলো নিজের ইচ্ছায় নিজের জীবন শেষ করার প্রচেষ্টা বা প্রক্রিয়া। এটি একটি মারাত্মক মানসিক অবস্থা বা সমস্যার ফলাফল হতে পারে, যেখানে একজন ব্যক্তি মনে করে যে তার জীবনে আর কোনো সমাধান বা আশা নেই। গবেষক কর্তজেন হকলে (Cacioppo and Hawkley) সহ অন্যান্য গবেষকরা দেখিয়েছেন যে দীর্ঘমেয়াদী একাকীত্ব শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তারা বলেন, একাকীত্ব মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে এবং এর ফলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আবার গবেষক বেকের মতে, হতাশার কারণে ব্যক্তির আত্মসম্মান কমে যায় এবং জীবনযাপনের প্রতি তার আগ্রহ হারিয়ে যায় এবং গবেষক ডেভিড ক্লার্ক, আত্মহত্যার কারণ হিসেবে মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, এবং উদ্বেগের প্রভাবের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তার মতে, দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ এবং বিষণ্নতা আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে যা খুবই ভয়াবহ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, একাকীত্ব একটি গুরুতর পাবলিক হেলথ সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৫% মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময়ে একাকীত্বের শিকার হয়। তারা আরো গবেষণা করে যে, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুবরণ করে। এটি প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৩৪০ জনের মৃত্যুর সমান। যা বাংলাদেশে বর্তমানে বিশাল আকার ধারণ করেছে।
এখন আমরা যদি এর সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে পারি তাহলে আমরা একাকীত্ব, হতাশা ও আত্মহত্যার কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে তা বুঝতে পারবো। আমরা যদি একাকীত্বের করণ গুলো খুঁজি তাহলে দেখতে পাবো প্রিয়জনের মৃত্যু, বিচ্ছেদ, বা সম্পর্কের ভাঙনের কারণে একাকীত্ব আসতে পারে। এছাড়াও নতুন শহরে যাওয়া, চাকরি পরিবর্তন, বা অবসর গ্রহণের মতো বড় জীবনের পরিবর্তনের ফলে একাকীত্ব দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে দিকে প্রেম বা বিবাহিত জীবনে ব্যর্থতা, বিচ্ছেদ, বা পরিবারিক কলহের কারণে হতাশা সৃষ্টি হয় ও মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ও মারা যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ।
যখন একজন আবেগের বাসায় আত্মহত্যা করা সিদ্ধান্ত নয় ও আত্মহত্যা করে তখন শুধুমাত্র সে শুধু নিজেই মারা যায় না একটা পরিবারকে মেরে ফেলে। তার কারণে ওই পরিবার অনেক সময় আর উঠে আসতে পারে না। অনেক সময় পরিবারের মা ও বাবা এছাড়াও অন্যান্য সদস্যরা সেটা ভুলতে পারে না। ফলে তার স্মৃতি রয়ে যায় শত শত বছর। তাই একাকীত্ব হতাশা ও আত্মহত্যার নিষ্ঠুর কাজ কিভাবে আমাদের জীবনে মোকাবেলা করা যায় নিচে দেওয়া হলো –
১. মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া : যদি একাকীত্ব ও হতাশা আপনার জীবনের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলছে, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তারা আপনার জন্য উপযুক্ত থেরাপি বা চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে পারবেন।
২. নতুন কিছু শিখুন : নতুন কোনো স্কিল বা হবি শেখার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে ব্যস্ত রাখবে এবং একাকীত্বের অনুভূতি কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
৩. সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করুন : আপনার এলাকায় বা অনলাইনে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে অংশ নিন। অন্যকে সাহায্য করতে পারলে আপনার নিজের মনের অবস্থাও ভালো হতে পারে।
৪. শারীরিক ব্যায়াম করুন : নিয়মিত ব্যায়াম আপনার শরীর ও মনের জন্য ভালো। এটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে এবং হতাশার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে।
৫. নিজের প্রতি যত্নশীল হন : নিজের যত্ন নিন, যেমন ভালো খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য ধ্যান বা যোগব্যায়াম করা।
মো. সোহান হোসেন
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।