সাদিয়া আক্তার:
শীতের আবেশ কাটিয়ে প্রকৃতি নতুনরূপে জেগে উঠেছে। চারিদিকে গাছের নতুন পাতা, ফুল ও ফলে গাছ আবির রঙে মেতেছে, কোকিলের কুহু কুহু ডাকে সবার মনে লেগেছে বসন্তের দোলা। ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতেই যেন প্রকৃতির এমন সাজ। এমনই এক মুহুর্তে প্রতিবারের মতো এবারেও ফাগুনের বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ। ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ১০ ঘটিকায় ফাগুনের মলাটে সবাই এই অনুষ্ঠানটি খুব আনন্দের সাথে উদযাপন করে।
‘বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসব- ১৪৩১ বঙ্গাব্দে’ এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসবের আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. তৌহিদা জেসমিন শম্পা এবং সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কার্তিক সূত্রধর। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অত্র কলেজের নবীণ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবদুল হামিদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অত্র কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আজিজ আহমেদ হুমায়ুন এবং আরও উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক জনাব মোহাম্মদ জাকির হোসেনসহ কলেজের সকল শিক্ষকমন্ডলী। সেইসাথে উপস্থিত ছিলেন আমাদের মতো উৎসব প্রিয় শিক্ষার্থীরা।
বসন্তের সংগীত, একক নৃত্য, দলীয় নৃত্যসহ মালকা বানুর বিয়ে শিরোনামে ১১জন চরিত্র নিয়ে মজার একটি নাটক পরিবেশন করা হয় এবং সেই সাথে কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে বরণ নেওয়া হয়েছে ফাগুনের এই বসন্তকে। নাটক সাহিত্যের একটি বিশেষ ধরণ। একটি লিখিত পান্ডুলিপি অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরা এ নাটক পরিবেশন করে। দর্শনকরাও অনেক আনন্দের সাথে উপভোগ করে নাটকটি। শুধু তাই নয়, পিঠার স্টলগুলোর বিভিন্ন নাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও আকর্ষণীয় করে তুলে পিঠা উৎসবকে। কিছু স্টলের নাম ছিল এমন পিঠাপুলির ঝুড়ি, চন্দ্রপুলি, পিঠা প্যারাডাইস,পিঠা বিন্নি উৎসব, পিঠা কুঞ্জ, কোয়ান্টাম পিঠা কুঞ্জ, বাহারি পিঠার সমাহার,ঝাউ বন, লেনদেন পিঠার বাড়ি (A=L+OE),পিঠা ঘর,পল্লী পিঠা ঘর, বাসন্তী বাহারি ও পিঠা উৎসবে রোকেয়ার বাড়ি প্রভৃতি। ১৪২ ধরনের পিঠার পসরা বসে এ উৎসবে। নতুন পিঠাসহ পল্লী পিঠার সমাহারও দেখতে পাওয়া যায় সেখানে। যা ছিল এক কথায় অসাধারণ পরিবেশ। এই মনোরম দৃশ্য দেখতে অনেকটাই সপ্নের মতো লাগছিলো। ঘুরতে ঘুরতে কলেজ মাঠে হঠাৎ বড় আপুরা ও ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা। সবাইকে নিয়ে অনেক আনন্দ হলো। মজা করে সবাই পিঠা খেতে খেতে বসন্তের বাতাসে উড়াল দিতে ইচ্ছা জাগলো। এক অনিন্দ্য সজীবতা, উচ্ছ্বাস আর আনন্দের পূর্ণরূপ শোভিত হয় বসন্তের এই দিনে। ষড়ঋতুর বাংলায় বসন্ত বাংলা বছরের সর্বশেষ ঋতু হলেও বসন্তকে ঘিরেই যাবতীয় উচ্ছ্বাস বাঙালির। তাইতো রবীন্দ্রনাথ বসন্তের গানে লিখেছেন,
‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
তব অবগুণ্ঠিত জীবনে
করো না বিরম্বিত তারে
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীত – মুখরিত গগনে
তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।’
সবশেষে প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকমন্ডলী ও শিক্ষার্থীদের পিঠার স্টল প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তাদের মধ্যে পিঠা উৎসবে প্রথম স্থান অর্জন করেছে অর্থনীতি বিভাগ, ২য় স্থান অর্জন করেছে ইতিহাস বিভাগ এবং ৩য় স্থান অর্জন করেছে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ। উৎসবটি সবাই মিলে খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করে। এ উৎসব শুধু উৎসব নয়, এর মধ্যে বেঁচে আছে আমাদের পুরোনো সব ঐতিহ্যবাহী পিঠাগুলো। কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের এই উদ্যোগ আগামী দিনগুলোতেও এভাবে চলমান থাকবে – এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
সাদিয়া আক্তার
শিক্ষার্থী (অর্থনীতি বিভাগ),কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ।
সেশন:২০২০-২১
নান্দাইল, ময়মনসিংহ।