লেখক: ইয়াকুব আলী তুহিন
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ কৃষি। দেশের ৪০ শতাংশেরও বেশি জনসংখ্যা কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে কৃষকের মূল্য বৃদ্ধি এবং তার প্রকৃত সম্মান পাওয়ার বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। এই কলামে আমরা কৃষকের মূল্য নির্ধারণের কিছু প্রেক্ষাপট আলোচনা করব।
প্রথমত, কৃষকের অবদান। কৃষকরা দেশের খাদ্য উৎপাদনের মূল নিয়ামক। তাঁরা দেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৫ কোটি ৭০ লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এই বিশাল পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনের পেছনে কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে। কিন্তু এই অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি? কৃষকরা সঠিক দামে তাদের উৎপাদিত পণ্য পাচ্ছেন না। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকদের লাভ কমে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, কৃষকরা এখনও সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে। বাংলাদেশের কৃষকরা সাধারণত কষ্টকর জীবনযাপন করেন। তাদের জন্য উন্নত প্রযুক্তি, সেচ ব্যবস্থা ও ব্যাংক ঋণ সুবিধা খুবই সীমিত। কৃষকদের জন্য একটি সঠিক নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের কৃষকদের জন্য সরকারীভাবে শুরু করা 'কিষাণ ক্রেডিট কার্ড' প্রকল্পটি তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।
তৃতীয়ত, কৃষকের সম্মান বৃদ্ধি। কৃষকদের মূল্যায়ন ও সম্মান দিতে হলে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। কৃষককে সমাজের একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার ও সমাজ কীভাবে কৃষকদের মূল্যায়ন করবে? এর জন্য কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং কৃষি পণ্যের উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণের সময় তাদের শ্রমের মূল্যও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশেষত, কৃষকদের সংগঠিত করে শক্তিশালী কৃষক সংগঠন গড়ে তোলা জরুরি।
সার্বিকভাবে, কৃষি প্রধান দেশে কৃষকের মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কৃষকের অবদান, তাদের জীবনযাত্রা ও সম্মান প্রদানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এসেছে। কৃষকরা এই দেশের অগ্রগতির মূল ভিত্তি, তাই তাদের মূল্যায়ন ও মর্যাদা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।