বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
খুলনা আর্ট একাডেমির শিশু শিল্পী সম্প্রীতি বিশ্বাস ছবি এঁকে পুরস্কার অর্জন করে জগন্নাথপুরে স্বাস্থ্য ও রুচিসম্মত খাবারের নিশ্চয়তায় উদ্বোধন হলো মেজবান রেস্তোরাঁ গণধর্ষণে হত্যার প্রায় ৫ মাস পর ময়নাতদন্তের জন্য ভিকটিম কলেজ ছাত্রীর লাশ উত্তোলন সাপ্তাহিক আজকের জনকথা’র সিলেট বিভাগীয় ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পেলেন কবি হাফিজুল ইসলাম লস্কর কলকাতায় সৃজন সাথী শিল্পচর্চা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত তিতুমীরে ‘শাট ডাউন’ কর্মসূচি’, মহাখালী অবরোধের ঘোষণা চাঁপাগাছি হাই স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া সহ একগুচ্ছ অনুষ্ঠান আয়নাঘরের বন্দী ছিলাম, আমাকে ভয় দেখাবেন না : মোমিন মেহেদী পশ্চিমবঙ্গের জনমুখী প্রকল্প ‘দুয়ারে সরকার’ চলছে বিষ্ণুপুর বটতলা খেলার মাঠে রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী ইউনিয়ন কৃষকদলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত

গরিবের টাকায় ধনীদের অট্টালিকা

Coder Boss
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ২৫ Time View

জহিরুল ইসলাম ইসহাকী

গরিবের ঘামে ভেজা মাটিতে ধনীদের অট্টালিকা দাঁড়িয়ে আছে। এই অট্টালিকা শুধু বিলাস আর প্রাচুর্যের প্রতীক নয়, এটি বৈষম্য আর শোষণেরও এক নির্মম চিত্র। বাংলার মাটি, বাংলার মানুষের শ্রম, এবং তাদের অশ্রু দিয়ে তৈরি হচ্ছে এমন সব প্রাসাদ, যেগুলো ধনীদের ঐশ্বর্য বাড়াচ্ছে, আর গরিবের স্বপ্নকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে।

ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে এই বৈষম্য নতুন কিছু নয়। যুগে যুগে শক্তিমানরা দুর্বলদের শোষণ করেছে। কিন্তু স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, এবং উন্নয়নের কথা বলে এই শোষণকে আজ বৈধ করা হচ্ছে। একদিকে সমাজের এক শ্রেণি অঢেল সম্পদে ভেসে যাচ্ছে, অন্যদিকে গরিব মানুষ জীবনযুদ্ধে হার মানছে। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ আর করের টাকা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিলাসবহুল অট্টালিকা, প্রাসাদোপম বাড়ি, আর আকাশছোঁয়া স্থাপনা। অথচ সেই গরিব মানুষগুলো দিনের শেষে দু’মুঠো ভাতের জন্য সংগ্রাম করে।

যেখানে একজন ধনী ব্যক্তি বিলাসী জীবনযাপন করছে, সেখানেই একজন দিনমজুর তার পরিবারের জন্য এক মুঠো চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। গরিবের রক্তঝরা করের টাকা দিয়ে যখন শাসকেরা নিজেদের প্রাসাদ নির্মাণ করে, তখন তা কেবল অর্থের অপচয় নয়, বরং মানবতার অপমান। সরকারি প্রকল্পের নামে জনগণের করের টাকা লুটপাট করা হয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং কৃষিতে ব্যয় করার বদলে, সেই টাকা দিয়ে ধনীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়।

এই বৈষম্যের মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক অসাম্য আর শোষণের রাজনীতি। একজন কৃষক বছরের পর বছর মাঠে কাজ করে, তার উৎপাদিত শস্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। একজন গার্মেন্টস কর্মী দিনের পর দিন কারখানায় কাজ করে, অথচ তার মাসিক আয় দিয়ে পরিবারের ন্যূনতম চাহিদাও পূরণ হয় না। অথচ তাদের শ্রমেই তৈরি হয় দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি। সেই অর্থ ধনী ব্যবসায়ী, কর্পোরেট লুটেরা আর শাসকশ্রেণির হাতে চলে যায়।

অন্যদিকে, ধনীরা নিজেদের আয়ের উৎস আর লুটপাটকে ন্যায্য প্রমাণ করার জন্য নানা কৌশল গ্রহণ করে। তারা দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়, যা পরবর্তীতে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। এই ঋণের বোঝা বহন করে দেশের সাধারণ মানুষ। গরিবের টাকায় ধনীদের ব্যবসা বাড়ে, তাদের প্রাসাদ বড় হয়, কিন্তু গরিবের জীবনে সেই অর্থ ফেরে না।

এই বাস্তবতা আমাদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে। একদিকে অট্টালিকার ঝলক, অন্যদিকে খোলা আকাশের নিচে গরিব মানুষের আশ্রয়। একদিকে ধনীদের বিলাসবহুল জীবনযাপন, অন্যদিকে হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসার অভাবে মানুষের মৃত্যু। এই বৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ও সামাজিক পতনের ইঙ্গিত বহন করে।

সমাজে এই বৈষম্য দূর করতে হলে আমাদের সিস্টেমিক পরিবর্তন আনতে হবে। গরিবদের করের টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সেই প্রকল্পের সুবিধা ধনীদের বদলে দরিদ্রদের কাছে পৌঁছায়। ধনীদের শোষণের হাত থেকে গরিবদের বাঁচাতে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।

ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান যদি এভাবেই বাড়তে থাকে, তবে তা কেবল সামাজিক অস্থিরতা এবং হিংসার জন্ম দেবে। আমরা একটি এমন সমাজ চাই, যেখানে প্রতিটি মানুষ তার শ্রমের সঠিক মূল্য পাবে। যেখানে কারও অট্টালিকা গড়ে উঠবে না অন্যের রক্ত, ঘাম, আর অশ্রুর বিনিময়ে।

বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে বৈষম্য একটি বড় বাধা। আমাদের নীতি-নির্ধারকদের যদি এই বৈষম্য দূর করার সদিচ্ছা থাকে, তবে এ দেশের গরিব মানুষও একদিন তাদের কষ্টের শেকল ভেঙে মুক্তির আলো দেখতে পাবে। ধনীদের অট্টালিকা যেন গরিবের কান্নার স্মৃতি না হয়, বরং সবার জন্য সমান অধিকার আর সম্মানের একটি সমাজ গড়াই হোক আমাদের লক্ষ্য।

“গরিবের টাকায় ধনীদের প্রাসাদ নয়, গরিবের স্বপ্ন গড়ার সমাজ চাই।”

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102