লেখকঃ অথই নূরুল আমিন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে নানা প্রশ্ন, নানা শঙ্কা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আজ আন্দোলনে নেমেছে—শুধু নির্বাচন চাই, নির্বাচন চাই। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, নির্বাচন হলেই কি দেশে শান্তি ফিরবে? নাকি পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে?
আমাদের ভাবতে হবে—একটি দল হঠাৎ ক্ষমতায় এলেই কী দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা কেটে যাবে? মানুষের হাহাকার, বেকারত্ব, দুর্নীতি—এসব কি রাতারাতি দূর হয়ে যাবে ? চারপাশে এখনই দেখছি শুধু হায় হায় আর খাই খাই অবস্থা। অথচ, একটি জাতি তখনই উন্নতির পথে হাঁটে, যখন তার নেতৃত্ব দূরদর্শী হয়, কল্যাণকামী হয়।
দেশের শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করতে হলে এখনই প্রয়োজন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। প্রয়োজন এমন একটি রূপরেখা, যা দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে। তাই আমার প্রস্তাব—একটি জাতীয় সম্মিলিত সরকার গঠন করা হোক, যার মেয়াদ হবে চার বছর। এই সময়ের মধ্যে জাতির প্রধান সমস্যাগুলোর সমাধান করে, তারপর একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন হোক। যেখানে ভোট দেবে দেশের প্রতিটি ভোটার আনন্দ চিত্তে।
জাতীয় সম্মিলিত সরকারের কাঠামো ও দায়িত্ব:
১. তিনশ সংসদীয় আসনে তিনশ পরিচালক:
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতাদের নিয়ে এই কাঠামো গড়া হবে। যেসকল রাজনৈতিক দলগুলো ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। শুধুমাত্র তাদের প্রতিনিধিরা জাতীয় সম্মিলিত সরকারে স্থান পাবেন।
২. সংরক্ষিত আসনে একশ নারী:
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। শর্ত থাকবে—তারা মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং কর্মজীবনে সাবেক বিভিন্ন পদাধিকারী পদস্থ হতে হবে।
৩. সাতটি বিভাগে সাতজন বিভাগীয় প্রশাসক:
প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন সমাজের সম্মানিত সুশীল ব্যক্তিরা।
৪. ঢাকা ছাড়া প্রতিটি জেলায় একজন করে জেলা পরিচালক:
এখানে দায়িত্ব পাবেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা বা সাবেক সচিব পদমর্যাদার অভিজ্ঞ এবং সম্মানিত নাগরিকেরা।
৫. ঢাকা মহানগরকে চার ভাগে ভাগ করে চারজন পরিচালক:
উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম—প্রত্যেক অঞ্চলে হাল ধরবেন বর্তমান জেনারেল পদমর্যাদার সেনা, নৌ বা বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাগণ।
৬. প্রতি উপজেলায় একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি কর্মকর্তা:
অভিজ্ঞ সাবেক যুগ্ম সচিবদের এই দায়িত্বে রাখা হবে।
৭. প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার দায়িত্বে থাকবেন:
সাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বা প্রোভিসি—তবে সবাই অরাজনৈতিক হতে হবে।
৮. প্রতিটি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকবেন:
সেই এলাকার সবচেয়ে সচ্ছল কৃষক পরিবারের প্রতিনিধি, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক।
৯. সর্বদলীয় ২৫ সদস্যের উচ্চকক্ষ:
উনারা সবাই মন্ত্রী পদমর্যাদার হবেন। রাজনৈতিক দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক বা সিনিয়র সহ-সভাপতি পর্যায়ের নেতা। সম্মিলিত সরকারের বাজেটসহ নীতিগত কাজে সহযোগিতা করবেন। এবং ভালো কাজ অথবা বাজেটে অনুমতি প্রদান করবেন।
১০. বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপস্থিতি:
প্রয়োজনে উচ্চকক্ষের আপত্তিতে প্রয়োজনে পরিবর্তন আনা যাবে।
কঠোর শর্ত ও আদর্শিক নীতি:
জাতীয় সম্মিলিত সরকারের পদে থাকা কেউ ভবিষ্যতে জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
দায়িত্বগ্রহণের আগে এবং দায়িত্ব শেষে দায়িত্বে থাকা সকলের সম্পদের হিসাব, জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। চার বছরের মধ্যে দেশে শান্তি, সুশাসন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করাই হবে জাতীয় সম্মিলিত সরকারের মূল কাজ। ভবিষ্যতে কখনও যেন বিশেষ কারণ ছাড়া শাহবাগে বা জাতীয় প্রেসক্লাবে কোন জাতি গুষ্ঠি বা শ্রেণির, দাবি আদায়ের মিছিল না করা লাগে। পুলিশের লাঠিচার্জ গরম পানি যেন আর কোনো নাগরিকের গায়ে না লাগে। মনে রাখতে হবে। দেশের প্রতিটা নাগরিক সমাজের মূল্যবান জনতা।
উদ্দেশ্য এবং স্বপ্ন: এই চার বছরে— বেকারত্ব দূর হবে,
অর্থনীতি হবে শক্তিশালী, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আসবে আমূল পরিবর্তন, অসামাজিকতা নির্মূল হবে,বিশ কোটি মানুষ পাবে সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা।
পরিশেষে বলবো, এটাই হবে বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস গড়ার মুহূর্ত। আর এই পথেই জাতি খুঁজে পাবে এক নতুন প্রত্যয়—এক নতুন ফুটন্ত সকালের মত এক পরিবেশ।
এখনই সময় সকলের সম্মিলিত হওয়ার, দেশকে বাঁচানোর জন্য মানুষের জীবনমান উন্নত করার জন্য। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে এগিয়ে যেতে হবে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। অন্যথায়, আমাদের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার হয়ে যেতে পারে। আগামী প্রজন্মের জন্য সুখ শান্তি সুন্দর সমাজ নিয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে।
চাই একটি জাতীয় সম্মিলিত সরকার, হোক দেশেরও জাতির উন্নয়ন। দেশের রিজার্ভ হোক লাখো বিলিয়ন ডলার। আসুন সবাই মিলে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় সম্মিলিত সরকার গঠন করি, আসুন আমরা সবাই মিলে, গড়ি এক নতুন বাংলাদেশ।
অথই নূরুল আমিন,
কবি, কলামিস্ট ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী।