লেখক: অথই নূরুল আমিন:
সেদিন ২০০৭ সনের ১১. ০২. তারিখে মিরপুরে ইউনূস সেন্টারে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠানিত হয়। ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে বতর্মান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। “নাগরিক শক্তি ” নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন মর্মে। জনমত জরিপ করতে একটি খোলা চিঠি লিখেন।
১২. ২. ২০০৭ ঐ খোলা চিঠি দেশের প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিক প্রকাশিত হয় একযোগে। মতামত জরিপ চিঠি ছিল। তাই আমি ও মতামত দিয়েছিলাম। সেদিন আমার এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন ড. মোহাম্মদ ইউনূসের রাজনৈতিক দল নাগরিক শক্তির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
সেদিনের সেই চিঠিতে আমি কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছিলাম। যার প্রতি উত্তর সেদিন ইউনূস সেন্টারের বুদ্ধিজীবীরা আর দিতেই পারেননি। কথা থাকে যে, ১১.২. ২০০৭ সাংবাদিক সম্মেলনে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ড. ইউনূস সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলেন।
: বাংলাদেশে বেশকিছু রাজনৈতিক দল থাকতে আপনি কেন নতুন করে আরেকটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন?
এরকম প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস সেদিন বলেছিলেন। বতর্মানে দেশে যেসকল রাজনীতি দল আছে। তাদের মধ্যে প্রায় সবাই দুর্নীতি নিয়েই বেশি ব্যস্ত। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সবাই দুর্নীতির সাথে সরাসরি জড়িত। তাই দুর্নীতি মুক্ত একটি রাজনৈতিক নতুন দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে, হ্যা। যদি সবার সম্মতি পাওয়া যায়। তবেই দল গঠন করব আমি।
এরকম ভাষণ শুনে সেদিন সবচাইতে বেশি রাগ করেছিল আওয়ামী লীগ। আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ এমনকি স্বয়ং শেখ হাসিনা ড. ইউনূসের চৌদ্দ গুষ্ঠি ধোয়ে দিয়েছিলেন। এদিকে সদ্য ক্ষমতা হারানো বিএনপি তেমন একটা বাড়াবাড়ি করতে পারেনি। তারপরও দুচার কথা বলেছিল কিছু নেতায়। অন্য দিকে জাতীয় পার্টি ও কিন্তু কিছু বলেছিল প্রতিবাদের বাসায়।
এদিকে আওয়ামী লীগ ২০০৮ এ ক্ষমতায় এসে ইউনূসের প্রতি সেই চোর বলার ক্ষোভে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে যত নাটক করেছে। দেশের মানুষ দেখেছেন। এবং কয়েক ডজন মামলা আওয়ামী লীগের আমলে হয়েছে ড. ইউনূস সাহেবের নামে। এটার একমাত্র কারণ কিন্তু সেই চোর বলার অপরাধে। অথচ আওয়ামী লীগের সকল মন্ত্রী এমপি কিছু পাহাড় সমান অর্থ চুরি করেছে ঠিকই।
এখানে কথা থাকে যে, বিএনপি যেহেতু ক্ষমতায় আসতেই পারেনি। তাই ইউনূস সাহেবের সেই চোর বলা কথাটি বিএনপি আর গায়ে মাখেনি। তাই বিএনপির সাথে একটা সময় ইউনূস সাহেবের ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।
প্রিয় পাঠক, ড. ইউনূস কিন্তু “নাগরিক শক্তি ” নামে রাজনৈতিক দল গঠন করতে চেয়েছিলেন ২০০৭ এ।
সেই সতেরো বছর পর। মানিক মিয়া এভিনিউতে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে যে রাজনৈতিক দলের সূচনা হয়েছে। যে দলের নেতৃত্ব দেবে। জুলাই বিব্লব আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। সেই দলের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক ড. মোহাম্মদ ইউনূস। যা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তাই শিরোনাম দিলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টি বনাম ড. মোহাম্মদ ইউনূসের স্বপ্ন পূরণ কত দূরে? কারণ হলো ড. ইউনূসের নাগরিক শক্তি নামে যে দল গঠনের স্বপ্ন ছিল, তাই আজকে পূরণ হতে চলছে।
অথই নূরুল আমিন,
কবি কলামিস্ট ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী।