মোহাম্মদ মোহছেন মোবারক।
২১ জানুয়ারি ১৯৮০, বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্রসেনার ইতিহাসে একটি সোনালী অক্ষরে চিহ্নিত দিন। এই দিনটি ছিল বাংলাদেশের সুন্নি মতাদর্শের ছাত্র সমাজের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা, এই সংগঠন সুন্নি আকিদা এবং নবীপ্রেমের সঠিক অনুসরণের মাধ্যমে ইসলামী সমাজের সুন্নি মতাদর্শের নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠন করার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৮০ সালের এই দিনে, সুন্নি জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে মোট এগারোজন সদস্য নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজের পশ্চিমে দেবপাহাড়ে আহলা দরবার শরিফের খানকায় এই সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান।
১১জন পীর-মাশায়েখ এবং আলেমদের সম্মিলিত উদ্যোগে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে, যার মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামী শিক্ষা এবং সুন্নি মতাদর্শের সঠিক প্রচার এবং সুন্নাতের আদর্শে তরুণ সমাজকে পরিচালিত করা।সুন্নি সমাজ তখন নানা ধরনের বিভ্রান্তি, মতবাদের পটভূমিতে স্থিতি লাভ করছিল। সুন্নি আকিদা থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে ছিল নিরলস। এমন একটি সময়ে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের যুবসমাজের মধ্যে সুন্নি আকিদার শুদ্ধ চর্চা এবং নবীজির (দ.) আদর্শের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা সৃষ্টি করার প্রত্যয়ে কাজ শুরু করে।
সুন্নি জামাতের ঐতিহ্য এবং আকিদার পক্ষে প্রতিদিনের সংগ্রাম ছিল এই সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য। তারা জানতেন, যদি তরুণ সমাজকে ইসলামী মূল্যবোধ ও সুন্নি মতাদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তোলা না যায়, তবে সুন্নিজামাতের বিপথগামীতা ঠেকানো সম্ভব হবে না। তাদের বিশাল প্রত্যাশা ছিল, তরুণরা নবীপ্রেমের আলোকে তাদের জীবন পরিচালনা করবে এবং সুন্নি মুসলিমদের ঐক্য ও শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
তাদের আন্দোলন ছিল শুধু ধর্মীয় চেতনার বিস্তার নয়, বরং মুসলিম সমাজের নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করারও প্রচেষ্টা। তারা বুঝতে পেরেছিলেন, সুন্নি আকিদার সঠিক অনুসরণ এবং নবীজির (দ.) সুন্নাতের প্রতি আনুগত্যই কেবল তাদের সমাজকে ইসলামী আদর্শে শুদ্ধ করবে এবং জীবনকে শান্তিপূর্ণ করবে। নবীপ্রেমের এই জাগরণ ছিল এক ধরনের আধ্যাত্মিক শক্তি, যা সুন্নি মুসলিম যুবকদের মধ্যে এক নতুন জীবনদৃষ্টি এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছিল।
এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা কেবলমাত্র এক রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ছিল না, বরং এটি ছিল এক সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলন, যা তরুণদের মধ্যে ইসলামী শিক্ষা সুন্নি মতাদর্শ, ঐতিহ্য এবং নৈতিকতা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করেছিল। যখন অন্য গোষ্ঠীগুলি ইসলামী সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছিল, তখন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা তার কাজের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ, ঐক্যবদ্ধ এবং নৈতিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল এই পথে এখনো অব্যাহত। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত কলঙ্ক মুক্ত একটি সংগঠন । এগারো জন থেকে শুরু করে আজ কোটি মানুষের হৃদয়ে যার বসবাস।
২১ জানুয়ারি ১৯৮০-এ যে জাগরণের সূচনা হয়েছিল, তা আজও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার আদর্শ ও কর্মধারায় প্রবহমান। সুন্নি আকিদার প্রচার এবং নবীপ্রেমের আলোতে জীবন গড়ার যে মহান লক্ষ্য নিয়ে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা যুগে যুগে আরও প্রসারিত ও দৃঢ় হয়েছে।
আজকের তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি। সুন্নি ইসলামের শুদ্ধতা এবং নবীজির (দ.) আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে তারা যেন একটি নৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেকে নিবেদন করে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা শুধু একটি সংগঠন নয়; এটি একটি আন্দোলন, যা নবীপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সুন্নি ইসলামের পতাকা উঁচু রাখার অঙ্গীকারে আবদ্ধ।
আমরা বিশ্বাস করি, এই চেতনা ও ঐতিহ্য আগামী দিনগুলোতে সুন্নি সমাজকে আরও সমৃদ্ধ, ঐক্যবদ্ধ এবং সঠিক পথে পরিচালিত করবে। নবীজির (দ.) আদর্শের পথে অবিচল থেকে আমাদের সংগ্রাম ও সাধনা চলমান থাকবে, ইনশাআল্লাহ।