লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
আপনি নিচের ছবিটা কি চিনেন ?
ইনি জমিদার নন্দন বনেদী ঠাকুর বংশের ছেলে “বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ” পাশে তার জীবনে বৃষ্টি স্নাত দূঃখ ছোট মেয়ে “মাধবী লতা” যাকে তিনি সবচেয়ে বেশী ভালো বাসতেন! এ দূঃখ তাকে সারাজীবন দূঃখ বৃষ্টি হয়ে সিক্ত রেখেছে! মা মরা মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েছিলেন বাল্যকালে! জামাই শরৎ ছিলো মাদকাসক্ত, একজন বেয়াদব! বিলেত পাঠিয়েছিলেন, চার বছর টাকা ধ্বংস করে ফেরত এসেছিলো বিনা সনদে! রোজ এসে টাকা চাইতো! শ্বশুর হিসাবে কোন সন্মান করতো না, মেয়েকে মেরে রক্তাক্ত করতো! তার শ্বশুর শাশুড়ি ছিলো কসাই চামার! শুধু যৌতুক চাইতো!
ছোট জামাই শরৎ যশোর থেকে প্রতি মাসে টাকা নিতে আসতো। টাকা না দিলে কবির লেখার টেবিলে দু’পা তুলে দিয়ে সিগারেট টানতো এবং কবির সামনে ধোঁয়া ছাড়তো! মেয়ে মাধবি লতা কে বলতো টাকা চাইতে, মাধবী রাজী না হলে নেমে আসতো অত্যাচার!
এর মধ্যে ই মাধবী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়! কবি তখন দারিদ্রতায় পতিত হয়ে জমিদারি বিক্রি করেছেন! শরতের বায়না তাকে গাড়ী কিনে দিতে হবে, রবীন্দ্রনাথ হাত তুলে ভগবান কে প্রার্থনায় বলেন, “হে ভগবান আমায় মুক্তি দাও, আমি পাপী, মেয়ের অমতে ওঁকে বিয়ে দিয়ে অপরাধ করেছি, ওকে তুলে নেও”, সত্যি ই মাধবী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে, তখন যক্ষ্মার কোন চিকিৎসা ছিলো না! রোজ নিজে গাড়ী করে মেয়েকে দেখতে যেতেন আর পুরা পরিবার তাকে অপমান করতো!
এমনি একদিন, গাড়ী ড্রাইভ করে মেয়ের বাড়ী অনতিদূরে পৌঁছে শুনতে পান ” বেলা” মারা গেছে, তিনি লাশ না দেখে গাড়ী উল্টো ঘুরিয়ে বাসায় ফেরত আসেন! তার দেনা পাওনা উপন্যাসের সাথে মিলে যায়!
তিনি লেখেন, “এই করেছো ভালো ——
প্রিয় পাঠক, জীবনে আমরা সামান্য দূঃখ পেয়ে ভেঙে পড়ি, আল্লাহ কে দায়ী করি, আল্লাহ মহান সব লোকের কথা শোনেন! বাবার মৃত্যু, মার মৃত্যু, স্ত্রীর মৃত্যু, ছেলের মৃত্যু, আদরের মেয়ের মৃত্যু, তারপর ও তিনি বিশ্ব কবি! তিনি সুরকার কবি আঁকিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় স্হান পাওয়া শিল্পী, নটরাজ, গায়ক, নাট্যকার এবং প্রেমিক। তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর বই পড়লে জানবেন কয়টা প্রেম! কখন সময় পেতেন, আপনি তো গরীব আত্মীয় কে ফোন করার সময় পান না বলে অজুহাত দেখান!
আমরা এমন একজন বিশ্ব বরণ্য ব্যক্তিকে অপমান করি শুধু ধর্ম পরিচয়ে!আল্লাহ তো ৪৩০০ ধর্মের কাউকে রেজেক বন্ধ করেন না! এত গুন মেধা আপনারা কয়জনে পেয়েছেন? গত ১০০ বছরে যত জন নোবেল বিজয়ী হয়েছেন তার মধ্যে ৪ জন মুসলমান বিশ্বে ২৩% মুসলমানের ভিতর, বিশ্বে ০.২% ইহুদি পেয়েছে ২০% নোবেল। অনুগ্রহ করে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি না করে শিক্ষা-দীক্ষায় জ্ঞানী হন, ধর্ম বোঝার জন্য এবং বিচারক হিসাবে সৃষ্টি কর্তার উপর ছেড়ে দেন!
রবীন্দ্রনাথ ধর্ম ভেদাভেদ মানতেন না। অমৃতসরে ডঃ মানিক বৃটিশ পুলিশ কতৃক গ্রেফতার হলে তিনি প্রতিবাদ করেন এবং ‘জানি ওয়ালা বাগ’ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি বৃটিশ কতৃক প্রদত্ত নাইট উপধি ও তার মাসিক বৃত্তি প্রত্যাখান করেন! তিনি সারেন্ডার্ড করেন তার সনদ! স্মর্তব্য, সে হত্যায় হিন্দু থেকে মুসলমান ছিলো বেশী!
কেন আইনস্টাইন এত বড় বিজ্ঞানী, কেন রবীন্দ্রনাথ এত বড় কবি, এসব সেই সৃষ্টি কর্তা জানেন! শুধু লেবাসধারী ধার্মিক হয়ে ভাগাভাগি করা বিরাট অজ্ঞতা বলে লেখক মনে করে! আপনি তো দুনিয়ায় এসে ‘আমি আমি আর আমি নিয়ে ব্যস্হ’ আর সুরমা লাগায়ে মসজিদে, তিলক কেটে মন্দিরে যাচ্ছেন, মানুষের জন্য কি করেছেন? সৃষ্টি কর্তা বলেছেন, তোমার জীবন গড়ো, আমি তুমি সে নিয়ে তাইতো সব নবী পয়গম্বর খলিফা মনীষী গৌতমবুদ্ধ সবাই তার সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে ধার্মিক হয়েছে, সে মতে আপনি কি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান নাকি ভন্ড?
যিনি দাড়িগোঁফ জীবনে কাঁটার সময় পান নাই আপনার জন্য স্টীম ইঞ্জিন, বিদ্যুৎ, উড়োজাহাজ, ইনসুলিন, ক্যানসার ক্যামো, জক্ষ্মার ঔষধ, পেনিসিলিন, সিফিলিস গনোরিয়ার ঔষধ, মহাকাশ যান, মাধ্যাকর্ষন — হাজার আবিষ্কার করে গেছেন আর আপনি উড়ে যেয়ে হজ্ব নামক ধর্ম করছেন, মসজিদে ঠান্ডা খাচ্ছেন, তার জন্য কখনও দোয়া করেন! হায়রে বেঈমান শোকর ভেজতে ও আল্লাহ বলেছেন, আপনার আয়ের ভিতর অন্যের রিজিক কুরআনে বলেছেন, আপনি শুধু হাম মুসলিম হায়, গান গাচ্ছেন, Does Allah enlisted you in Muslim List? নাকি মুসলমানের ঘরে জন্ম বলেই রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইন কে কাফের বলছেন? আর সম্পদ জমা করে ইসলামের তালিকার বাইরে গেছেন তা বোঝার বোধ জ্ঞান আই-কিউ ধর্মীয় নলেজ আপনার নাই!!
ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন নিজ দেশকে ভালোবাসেন।
মানুষ হোন আগে, পরে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টান হোন! ধর্ম মানুষের জন্য, পশুর জন্য নয়! সৃষ্টি কর্তা বড় বিচারক আপনি আমি নই! সরিষা পরিমাণ মনুষ্য পাপ আপনার নরক — আল কুরআন!