জহিরুল ইসলাম ইসহাকী
ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বাঙালির হৃদয়ে এক গভীর অনুভূতি জাগ্রত হয়। কারণ এই মাস শুধু ক্যালেন্ডারের একটি সময় নয়, এটি আমাদের ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মত্যাগের স্মারক, জাতীয় চেতনার উৎস এবং বাঙালির গৌরবের প্রতীক।
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষের উপর সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত দমননীতি চাপিয়ে দিতে থাকে। তারা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র করে, যদিও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ৫৬% মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলত।
ভাষা আন্দোলনের সূচনা
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি: পাকিস্তানের গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” এই ঘোষণার প্রতিবাদে ঢাকার রাজপথে ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি: পাকিস্তানি শাসকেরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি না দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর গুলি চালায়। এতে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন।
২১ ফেব্রুয়ারি: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে। এটি বাঙালির জন্য এক বিশাল অর্জন, যা আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করেছে।
ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও শিক্ষা
১. নিজস্ব ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা: ভাষা আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে, নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির মর্যাদা রক্ষা করা জাতির কর্তব্য।
2. স্বাধীনতা সংগ্রামের পথপ্রদর্শক: ভাষা আন্দোলনই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করেছিল।
3. বিশ্বের ভাষা সংরক্ষণ উদ্যোগ: ভাষা আন্দোলনের কারণে এখন বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসের বিশেষ আয়োজন
প্রতিবছর বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন
একুশের বইমেলা
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান
উপসংহার
ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য গর্বের মাস, আত্মত্যাগের মাস। ভাষা আন্দোলনের এই চেতনা আমাদের জাতীয় পরিচয়কে সমুন্নত রেখেছে। আমাদের উচিত এই চেতনাকে ধারণ করে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসার ঘটানো এবং ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট থাকা।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি?”