লেখক:- মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন পলাশ
==========================
উত্তর চট্টলার মহান দানবীর ফতেনগর নোয়াজিষপুর অদুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ফতেনগর নোয়াজিষপুর অদুদিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসা সহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রতিষ্ঠাতা, গহিরা অদুদিয়া সড়কের একক নির্মাতা মরহুম আব্দুল অদুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুর গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৯০৭ মতান্তরে ১৯০৮ সালে নোয়াজিষপুর গ্রামে ওয়ালী চৌধুরী বাড়ি প্রকাশ ওয়ালী বলি বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।তাঁহার পিতার নাম হাজী ছৈয়দ আহম্মদ চৌধুরী দাদার নাম আব্দুল কাদের চৌধুরী ,তাঁহার মায়ের নাম ছিল ওমদা খাতুন ।তিনি ফোরক চৌধুরীর বড় বোন ছিলেন।সময়ে ফোরক চৌধুরী একজন ধনাঢ্য ব্যাক্তি ছিলেন।তৎকালীন সময়ে আব্দুল অদুদ চৌধুরী তিনি রেংগুন চলে যান ,রেংগুনে তিনি ব্যবসা শুরু করে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেন। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি রেংগুন থেকে কোলকাতায় গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন, ১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর কোলকাতায় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়,যার ফলে তিনি সেখানে নিজেকে নিরাপদ না ভেবে তিনি জন্মস্থান চট্টগ্রামে ফিরে আসেন,চট্টগ্রাম এসে তিনি চাক্তাই এলাকায় ব্যাবসা শুরু করেন।ব্যবসায়ীক সফলতার কারণে তিনি প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক হন ।অদুদ চৌধুরী বিবাহ করেন ফোরক চৌধুরীর কন্যা আমানুল নুর চৌধুরীকে ,অদুদ চৌধুরী ব্যবসার পাশাপাশি প্রথমে মাদ্রাসা প্রতিষ্টায় মনোযোগী ছিলেন ।তিনি যেখানেই ব্যবসা করেছেন সেখানেই একটি করে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ।তৎকালীন সময়ে নোয়াজিষপুর এলাকায় প্রাইমারী স্কুলের সংখ্যা ছিল হাতেগুনা কয়েকটা, হাই স্কুল তো ছিলও না ।তাই নোয়াজিষপুরের জনসাধারণ এলাকায় শিক্ষার হার বাড়ানোর লক্ষ্যে নোয়াজিষপুর ইউনিয়নে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন ।সে লক্ষ্যে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আলাপ আলোচনা, জনসচেতনতা ও সভা সমাবেশ শুরু করেন। অতপর স্হানীয় কিছু শিক্ষানুরাগী ও স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একদিন মরহুম আব্দুল অদুদ চৌধুরীর স্মরণাপন্ন হয়ে এলাকায় একটি হাই স্কুল প্রতিষ্টার কথা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন।
সবার সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে জনাব চৌধুরী উপস্হিত সকলের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অদুদিয়া মাদ্রাসার (পুরাতন ভবনের) সামনা সামনি ফতেহ মোহাম্মদ সিকদার বাড়ি নিবাসী জনৈক ব্যক্তির ধানের জমিটা পছন্দ করেন। এই ধানের জমিতে প্রচুর ধান উৎপাদিত হতো ,এবং সেই জমির চাষাবাদের উপর উক্ত পরিবারের সংসার চলত। এতদ্বাসত্বেও সকলের অনুরোধে উক্ত পরিবারের সদস্যরা জমি বদল নতুবা জমি বিক্রি করার প্রস্তাবে রাজী হন। কিছুদিন পর জমির আনুষ্টিকতা শেষে এলাকার জনসাধারণ বিদ্যালয় প্রতিষ্টার প্রাথমিক কাজ হিসাবে মাটি ভড়াট শুরু করেন ।অত্র এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী জনাব শেখ মোহাম্মদ আব্দুস সবুর সাহেব বিদ্যালয় প্রতিষ্টার সরকারি অনুমোদনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এলাকার সকল শিক্ষানুরাগী ও সমাজ সেবকদের পরামর্শ ক্রমে জনাব শেখ মোহাম্মদ আব্দুস সবুর সাহেব কে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সেক্রেটারির দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় ।দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তিনি এলাকার কিছু মুরুব্বী ও যুব সমাজকে নিয়ে অতি উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে আশেপাশের বাড়িঘর ও পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে তিনি বাঁশ গাছ সহ প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র সংগ্রহ শুরু করে বাঁশের বেড়া, বাঁশের খুঁটি ও টিনের ছাউনি দিয়ে ১৯৬৫ সালে বিদ্যালয়টির গৃহ নির্মান কাজ সম্পন্ন করেন এবং বিদ্যালয়টির নামকরণ করেন ফতেনগর নোয়াজিষপুর অদুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।
বিদ্যালয় প্রতিষ্টার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করার পর চিকদাইর নিবাসী জনাব ডাঃ আব্দুল হক সাহেবকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন ।৬ষ্ট শ্রেণী থেকে ছাত্র/ছাত্রী ভর্তিকরণ ও পাঠদান শুরু করেন।পহেলা জানুয়ারী ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টি প্রথম স্বীকৃতি অর্জন করেন ।পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়টি একটি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান হিসাবে রুপদান করেন এবং বহুবার উপজেলার শ্রেষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্টান হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন। অত্র বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যায়ন শেষে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চাকুরী করার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হন।
নতুন প্রজন্মের মাঝে মরহুম আব্দুল অদুদ চৌধুরীর অবদানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মরহুমের মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপন করার জন্য দেশ ও প্রবাসে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।
জনাব চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্টান সমূহ হচ্ছে,
# ফতেনগর নোয়াজিষপুর অদুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
# ফতেনগর অদুদিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসা
#ফতেনগর অদুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
# হাটহাজারী অদুদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা
# চন্দ্রঘোনা অদুদিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসা
# কাপ্তাই ফোরকানিয়া মাদ্রাসা
# হাটহাজারী মেখল মসজিদ
# চাক্তাই ফোরকানিয়া মাদ্রাসা
এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, রাউজান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সহ অসংখ্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্টানে তিনি অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।
তখন যোগাযোগ ব্যবস্হা ভাল না থাকায় কোনো গাড়ি চলাচল করতনা,এলাকার লোকজন নৌকা যোগে অথবা পায়ে হেঁটে চলাচল করতেন। তখন তিনি নিজের অর্থায়নে জমিন কিনে জনসাধারণের যাতায়তের সুবিধার্থে গহিরা অদুদিয়া সড়ক নির্মাণ করেন। গহিরা হতে মোহাম্মদ তকিরহাট আজাদী বাজার, নানুপুর হয়ে হেঁয়াকো বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় যাতায়ত করা যায় এই সড়কের মাধ্যমে।
আমার জানামতে মরহুম আব্দুল অদুদ চৌধুরীর কোনো সন্তান ছিলেন না, তাঁহার দুই পালক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছেন,
তাঁরা হলেন হাবিবুল ইসলাম চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম চৌধুরী, তবে এলাকায় তাঁহারা মানিক ও বাদল নামে পরিচিত কন্যা বিবি নামে পরিচিত যার শ্বশুর বাড়ি হাটহাজারি।
আমি জানি মরহুম আব্দুল অদুদ চৌধুরীর অবদান অনস্বিকার্য ,তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্টানে আজ অগনিত শিক্ষার্থীরাই তাঁর সন্তান সমতুল্য ।তাই মরহুমের অবদানের স্মৃতি স্বরুপ প্রতি বছর ২৪ শে নভেম্বর তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি! যেহেতু আমিও তার প্রতিষ্ঠিত অদুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৯ ব্যাচের একজন ছাত্র , তাই এই মহান মনিষীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি প্রতি বছর এই দিনটিতে,
১৯৭১ সালের ২৪ শে নভেম্বর উত্তর চট্টলার এই মহান দানবীর মৃত্যু বরণ করেন ।তবে আব্দুল অদুদ চৌধুরী তাঁর জনহিতকর কাজের মাধ্যমে আমাদের সকলের হৃদয়ে স্হান করে নেন ,তাই নোয়াজিষপুর বাসী ওনার কাছে কৃতজ্ঞ ।তিনি বর্তমানে তাঁর নির্মিত গহিরা অদুদিয়া সড়কের পাশে মদুন চৌধুরী ঘাটায় তার রওজা শরীফে শায়িত আছেন। আল্লাহ ওনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক (আমিন)