লেখক: ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করেছেন একটা রহস্য আবৃত ফাঁকির জালে বন্দী করে! সেই মহাপরাক্রমশালীর এক ফাঁকি আমরা না বুঝে সব আমার আমার করে ঝগড়াঝাটি থেকে যুদ্ধ বিগ্রহ করে যাচ্ছি! তিনি দু’টো মহা ফাঁকি দিয়ে রেখেছেন যার একটা মায়া! মায়া আবার সমান ভাবে দেন নাই, কোন মা মৃত্যু শয্যায় তার সেই বিছানায় বসে কোন সন্তান দুনিয়াদারির ব্যবসায়িক আলোচনা করছে অন্য সন্তান সংবাদ পেয়ে দু’শ মাইল দূর থেকে যেয়ে তাকে তুলে এনে রাজধানীর বড় হাসপাতালে ভর্তি করে দিন ২৫ রেখে, দিন-রাত পরিশ্রম করে সুস্থ করে তুলছেন! এমন ঘটনায় ও মায়ের মমতা, অবহেলা করা সন্তানের প্রতি কমে নাই!
সৃষ্টি কর্তা অন্য যে রহস্য মায়াজাল দুনিয়ায় দিয়েছেন সেটা হচ্ছে “ধর্ম”! ধর্মের আদেশ নিষেধ অনুশাসন দেয়াল কর্তব্য কেউ করছেন এমনটা জোর দিয়ে বলা যাবে না, এটা মোটামুটি ব্যবসার হাতিয়ার হয়ে দাড়িয়েছে! লেবাস আর-ও ক্ষতি করেছে! যে সব করতে পয়সা লাগে না তা লোক দেখাতে করছে কিন্তু তার যে আনুগত্য হিসাবে মারাত্মক করনীয় বিষয় আছে সে সব কেউ করছে না! ধরুন মুসলমানের “নামাজ”, ছুটছে মসজিদে কিন্তু নামাজ কবুল হতে যে মোমিন মুসলমান হওয়া প্রয়োজন তা কারো খেয়াল নাই! যেমন:
১. হারাম খাদ্য বস্ত্র পানীয় গ্রহন কারীর এবাদত কবুল হবে না! হিংসা-বিদ্বেষ সুদ ঘুষ অবৈধ দখল অবৈধ আয় মিথ্যা বলা ওজনে কম দেয়া দেনা শোধ না করা এমন অনেক লোকের এবাদত জলে যাচ্ছে!
জান্নাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ ব্যক্তিগন:
১. হারাম খাদ্য ভক্ষণ কারী
২. প্রতিবেশি কে কষ্ট দানকারী
৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
৪. উপকারীর উপকার অস্বীকার কারী
৫. মাতাপিতা অবাধ্য সন্তান তথা তাদের উপর দায়িত্ব পালন না করা ব্যক্তিবর্গ
৬. চোগলখোর
৭. অহংকারী মিথ্যাবাদী ওয়ারিশ বঞ্চিত কারী
৮. লোক দেখানো ধর্মপালন কারী
৯. নাফরমান
১০. দেনা পরিশোধ বা মাফ না নিয়ে মৃত্যু ব্যক্তি! নবী করীম সঃ দেনা পরিশোধ না করা মৃত্যু লাশ জানাজায় শরীক থাকতেন না!
প্রিয় পাঠক, আমরা কারো জমি মিথ্যায় ভোগদখল, দেনা শোধ, মিথ্যা বলা, অকৃতজ্ঞতা, বছর পার হলে উপকারীর উপকার অস্বীকার করি ৯৯% মানুষ, আবার আমরা ৯৯% মানুষ মসজিদ মন্দির গির্জায় দৌড়াই লোক দেখাতে! আমার এবাদত হচ্ছে না, আমার দুর্গন্ধময় মুখোশ আবৃত শরীরের কোন এবাদত সৃষ্টি কর্তার দরবারে গ্রহন হচ্ছে না, আমার জন্য বেহেশতে (Paradise) হারাম হয়ে বসে আছে তা গায়ই মাখি না! আমার গর্ব আমি নামাজ পড়ছি, রোজা রাখছি হজ্ব করছি আবার নবীর সুন্নত নামে লম্বা একটা জামা টুপি পরিধান করছি যা সৌদি জাতীয় পোশাক, আমার থেকে ধার্মিক কে?
প্রিয় পাঠক, আমার মা মাত্র কয়দিন আগে ইন্তেকাল করেছেন! দীর্ঘ ৯৫ বছর জীবিত অবস্থায় আমাদের জন্য তিল তিল করে তার প্রতিটি রক্তবিন্দু উৎসর্গ করেছেন আমাদের সুখের জন্য! যতদিন ভাইবোন পিতৃহীন সংসারে একত্রে বসবাস করেছি ততদিন মায়ের গায়ে কোন বাতাসের আচঁড় লাগে নাই। মহা বিপদে আপদে মামলা মোকদ্দমা অভাব অনাটন কিছু তাকে ছুঁতে পারে নাই। সূদুর ঢাকা থেকে সাংসদ (M P) ছুটে গেছেন পুলিশ ঠেকাতে —
তখন আমি ক্ষুদ্র ব্যক্তি হিসাবে একক ছায়ায় চিন্তা করতে হয় নাই বিপদ-আপদ মামলামোকদ্দমা কারো লেখাপড়া মেয়ের বিয়ে ঘর বড় ছোট বা নতুন করা ।
প্রকৃতির নিয়মে ভাইবোন বড় হলে বিয়ে থা করলে ভিন্ন হতে হয়! মার স্হাবর অস্হাবর (ক্যাশ) যারা নিয়েছিলো তারা প্রতিশ্রুতি বদ্ধ ছিলো মা’কে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ভরনপোষণ রোগশোক দেখার! কথা রাখে নাই, শেষ বয়সটা মাকে বোনের বাড়ীতে রেখে পালন করতে হয়েছে যেহেতু তিনি শহরে বসবাস একদম পছন্দ করতেন না! মায়ায় যাদের কাছে ছুটে আসতেন তারা তার ২০ টাকা দিয়ে প্রেসার মেপে দেখে নাই, সেই ঢাকার সন্তানদের ২০০ টাকা দিয়ে বাড়ীতে ডাক্তার পাঠায়ে প্রেসার নলেজে রাখতে হয়েছে স্ট্রোক ঝুকি ঠেকাতে! মায়ের কোন সন্তান কে যদি ঢাকা বসে প্রশ্ন করেছি, “মার ব্লাড প্রেশার কত”, উত্তর এসেছে, ” আমি কি ডাক্তার নাকি”? আমরা ডাক্তার থেকে আগেই জেনে নোট করেছি তার প্রেসার, —- এমনি ভাবে ৯৫ বছর বেঁচে ছিলেন অত্যাধিক কেয়ারে এবং তার সততার আত্মবিশ্বাসে! যিনি ঢাকায় গেলে ঢাকার দুই ভাইকে শালিসি করতে হতো তিনি বাড়ীতে গ্রামে চলে যেতে চান বলে, এবার শুধু বলেছেন, “আমি আর গ্রামে যেতে চাই না “! কিন্তু তার কফিন নিয়ে ফিরতে হলো শুক্রবার রাতে তার সেই বীতশ্রদ্ধ গ্রামে! সেই মায়ের লাশ সামনে রেখে শুধু লোক দেখানোর জন্য যখন তার কোন সন্তান মিথ্যা বলে, ” আমি ই মাকে দেখভাল করেছি” প্রতিশ্রুতি বদ্ধ লোকটা তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য মায়ের লাশের উপর লুটোপুটি করে মাফ না চেয়ে —- এমন মিথ্যাচার! মৃত্যু ভয় মানুষের কই?
মায়া একতরফা দিয়ে আল্লাহ যে রহস্য করেছেন তেমনি ধর্ম নামক অদৃশ্য বিষয় দিয়ে কিছু মানুষ কে অহেতুক ব্যবসা বানিজ্য সমাজের ধার্মিক মুখোশ পরার সুযোগ করে দিয়েছেন!
আমার মা অনেক সুখী একজন মানুষ ছিলেন কিন্তু অনেক দূঃখ নিয়ে গেছেন মনে যা আমাকে তার কষ্ট গুলো বলে গেলেন মৃত্যুর আগের ঢাকা ভিজিটে! ওছিয়তনামা করে গেছিলেন তার কবর কোথায় হবে। পাঁচ বছর আগে একই অছিয়ত ছিলো, রক্ষা করতে পারি নাই! বাবার মৃত্যুর পর যাকে স্রোতে একচুল নড়েতে পারে নাই, তখন একটা ছেলে আয় করে কেবল। যখন সবাই আয় করে, সারা উপজেলায় আর্থিক সামাজিক রাজনৈতিক সবল একটা পরিবার তখন তিনি বড় অসহায়। মেয়ের কাছে বেঁচে থাকতে হয়েছেে, মেয়ের বাড়ী তার আপন বাড়ী ভাবতে হয়েছে! অথচ মেয়ের থেকে-ও কোন কোন সন্তানের জন্য তার বুক বেশী পোড়াতো! তার সম্পদ লোভ মেয়ের না থাকলে-ও ছেলেদের কারো কারো প্রচুর ছিলো! আমি আজ ভাবছি ৯৫ বছর বয়সে কি নিয়ে গেলেন আমার মা, আমরা তার গর্ভ জাত সন্তানেরা কি দিলাম তাকে! এমনি ট্রিপল জিরো সবার জীবন অথচ অনেকে সন্তানের ছবি দিয়ে ফেজবুকে লেখেন,”
“আমার দুনিয়া”! কতোবড় আহম্মক এই মানুষ নামের জীব! সন্তান কারো দুনিয়া না এটাও আল্লাহর দেয়া আর একটা গোলকধাঁধা যা আমার “মা” বুঝে গেলেন! মানুষ এমন সময় বোঝে যখন কিছু করার থাকে না, অসহায় ফ্যালফ্যাল করে তাকায় থাকা ছাড়া! মা বাবা বড় ভাইদের ভালোবাসা অবদানের দলিল থাকে না তাই ৫০ বছর পরে অকৃতজ্ঞ সন্তান যখন বলে ” আমি চোখে দেখি না আমার জন্য কি করেছো”, তেমন সন্তান যার দশ বছর জেলে থাকার কথা ছিলো! কেন জেলে থাকতে হলো না তা আজ বড় মূলহীন বিষয়, বাবা-মার কাজ মায়া-মমতা প্রচেষ্টা বড়ই থ্যাংকসলেস জব! না দেয়া যায় হিসাব না জানে সন্তানদের সংসারে যারা আসে বউ বাচ্চারা!
ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন নিজ মা’কে খেয়াল রাখেন! খবর রাখেন আপনার স্ত্রী সন্তান কেমন ব্যবহার করছে আপনার অনুপস্থিতি তে আপনার আশাতিপর মায়ের সাথে!