এইচ এম জহিরুল ইসলাম
=================
যুব সমাজ, একটি জাতির প্রাণশক্তি, একটি জাতির স্বপ্ন, একটি জাতির উন্নতির চালিকা শক্তি। পৃথিবী জুড়ে যে কোনো জাতি তার উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যুব সমাজের উপর নির্ভরশীল। যুবকরা যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তাদের হাত ধরেই কোনো জাতি তার উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু যদি যুব সমাজের দায়িত্ববোধ ক্ষুণ্ণ হয়, তবে জাতি এক ভয়াবহ পতনের দিকে চলে যায়। তাই যুব সমাজের দায়িত্ব শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত, যুব সমাজের একটি অন্যতম দায়িত্ব হলো জাতির মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি রক্ষা করা। আমাদের ঐতিহ্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ, ভাষা, আচার-আচরণ—এসবই আমাদের জাতির পরিচয়। যুব সমাজ যদি এসবের গুরুত্ব না বুঝে, তারা যদি পাশ্চাত্য সংস্কৃতি এবং নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে আকৃষ্ট হয়, তাহলে আমাদের ইতিহাস, ভাষা, ধর্ম, এবং জাতিগত ঐক্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। একমাত্র যুবকরা এই সংস্কৃতিকে ধারণ করে ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম।
দ্বিতীয়ত, যুব সমাজের জন্য দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি, কৃষি, শিল্প—প্রতিটি ক্ষেত্রে যুবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একটি উন্নত জাতির জন্য শুধু সরকার বা কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাজ নয়, যুবকদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। যুব সমাজ যদি ভালোভাবে শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ হয়ে ওঠে, তারা শুধু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে না, বরং সমাজে নৈতিকতা এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তৃতীয়ত, যুব সমাজের একটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো দেশের পরবর্তী নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। যারা আজকে যুবক, তারা আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করবে। তাদের মধ্যে যদি সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলী এবং মূল্যবোধ সৃষ্টি করা না হয়, তবে আগামী দিনে দেশে নেতৃত্বের অভাব দেখা দেবে, যা জাতির জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। তাই, প্রতিটি যুবককে নেতা হতে শিখতে হবে—যেখানে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সাহস, মেধা এবং দক্ষতা থাকতে হবে।
চতুর্থত, যুব সমাজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ। শরীর সুস্থ না হলে কোনো কাজে মনোনিবেশ করা সম্ভব নয়। একদিকে, শারীরিক প্রশিক্ষণ, খেলা, এবং শারীরিক কসরত যুব সমাজকে সুস্থ ও সক্ষম করে তোলে, অন্যদিকে মানসিক প্রশান্তি ও নৈতিক শক্তি তাদের জীবনের পথ নির্ধারণ করে দেয়। একটি সুস্থ ও শক্তিশালী যুব সমাজ জাতির অগ্রগতির জন্য অতি জরুরি।
পঞ্চমত, যুবকদের সামাজিক দায়িত্বও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্য পৌঁছানো, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো, পরিবেশ রক্ষা করা—এগুলো সমাজে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। যুবকরা যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন করে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, তবে জাতির ভবিষ্যত নিশ্চিতভাবেই সুন্দর হবে।
শেষে, যুব সমাজের দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি যে, একটি জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করে তার যুবকদের উপর। তাই তাদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে, তাদের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, শিক্ষা, এবং নেতৃত্বের গুণাবলী প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একজন যুবক, যখন তার দায়িত্ব অনুভব করে, তখন সে শুধু নিজের জন্য নয়, পুরো জাতির জন্য কাজ করতে সক্ষম হয়। এজন্য যুব সমাজের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা অনেক, এবং তাদের সঠিক পথনির্দেশনা দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।