জান্নাতুল ফেরদৌস:
বছরঘুরে দুনিয়ার বুকে রহমত,বরকত,মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে নাজাতের বার্তা নিয়ে এলো মাহে রমাদান।ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমাদান হলো অন্যতম একটি স্তম্ভ।
সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এক মাস সব ধরনের পানাহার,যৌনকর্ম ও সকল অশ্লীলতা থেকে বিরত থেকে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ তায়ালার ফরয বিধান সিয়াম পালনের মাধ্যমে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে থাকে।সিয়াম বা রোযা মহান আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে তার প্রতিদান দেয়ার ওয়াদা করেছেন।যে কারনে প্রতিটি মুসলমানের জীবনে রমজান মাসের রোযা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
মহান আল্লাহ বলেন,”হে মুমিনগণ!তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে,যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।”(সুরা বাকারা,আয়াত:১৮৩)
রোযার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো,মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি,তাকওয়া অর্জন ও নিজেকে গুনাহমুক্ত করা।
তাই রমজানের রোযা যেন সহীহভাবে মহান রবের দরবারে কবুল হয় ,সেজন্য রোযার কিছু হক রয়েছে ।যে হক সম্পর্কে জানা এবং সে মোতাবেক রোযা পালন করা প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য ।
আসুন ,রোযার হকসমূহ জেনে নেই।
রাসূল সা.বলেছেন,”তোমাদের কেউ যখন রোজা অবস্থায় থাকে তখন যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল না করে। আর কেউ যদি তার সঙ্গে ঝগড়া করে, গালি দেয়, তা হলে সে যেন শুধু বলে দেয়, আমি তো রোজাদার’(বুখারী)
কোন কোন বর্ণনাতে আছে যে, ‘‘রোযা রেখে তুমি কাউকে গালাগালি করো না। কিন্তু যদি তোমাকে কেউ গালাগালি করে, তাহলে তুমি তাকে বল, ‘আমি রোযা রেখেছি। আর সে সময় যদি তুমি দাঁড়িয়ে থাক, তাহলে বসে যাও।’’(বুখারী)
রোযার অন্যতম ওয়াজিব হল,জিহ্বার রোজা।যাতে তার দ্বারা কেউ কষ্ট না পায়, অর্থাৎ, তাতে যেন সে (গীবত ও চুগলখোরী করে) লোকেদের মাংস না খায়, তাদের ইজ্জত বিক্ষত না করে,বিবাদ না ঘটায়।সব রকম অস্লীলতা পরিহার করে।কাউকে ছোট করে কথা না বলে।
মহান আল্লাহ বলেন,” ‘মুমিনগণ কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। কোনো নারী অপর নারীকে যেন উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এরূপ কাজ হতে তওবা না করে তারাই জালেম। ’ (সুরা হুজরাত-১১)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও এহেতেসাবের (আত্ম পর্যালোচনা) সঙ্গে রোজা রাখবে তার অতীতের গুনাহ-অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ’(সহীহ বুখারী)
কাজেই এই মহান মাস পেয়ে যদি আমরা নিজেকে সংশোধন করতে না পারি তাহলে আমাদের মত দুর্ভাগা আর কে?
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “অপদস্থ হোক সে ব্যাক্তি, যার জন্য রমযান মাস এলো এবং তার জন্য মাগফিরাতের ফয়সালা না হতেই তা চলেও গেলো।”(তিরমিযী)
অনেকেই স্বভাবসুলভ সারাদিনের রোযার পর ইফতারি করেই সিগারেট , জর্দা-তামাকযুক্ত পান,সুদসহ সকল হারাম ও গুনাহের কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে।তারা ভাবে ,রোযা রেখে তো গুনাহের কাজে লিপ্ত হইনি।তাই রোযা নষ্ট হবে না।যা সম্পূর্ণ ভূল ধারণা।
এতে রোযা ভাংগে না ঠিক।কিন্তু রোযার অন্যতম হক গুনাহমুক্ত থাকা এবং রোযার মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হবে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাহার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নাই’ (বুখারি)
রোযা ঢালস্বরূপ।যা পাপাচার থেকে মানুষকে দূরে রাখে।কাজেই রোযা রেখে যদি পাপাচার থেকে বিরত হয়ে নিজকে পরিবর্তনই করা না গেলো ,এই রোযা কেবল উপবাসই হবে,আল্লাহ তায়ালার দরবার পর্যন্ত পৌছাবে না।
প্রচলিত আরও একটি ভূল ধারণা হলো,রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা খাবারের কোনো হিসাব নিবেন না।
অথচ মহান আল্লাহ বলেন,”নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই”(সুরা বনী ইসরাঈল,আয়াত:২৭)
তাই আসুন,রোযার হক সম্পর্কে সচেতন হই।নিজেদের ভূলের জন্য মহান রবের কাছে ক্ষমা চাই।সহীহভাবে রোযা পালনের চেষ্টা করে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ি এবং মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হই।
জান্নাতুল ফেরদৌস,
শিক্ষার্থী- ইসলামিক স্টাডিজ,বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।