শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন

সৌন্দর্যময় একটি আদর্শ গ্রাম “হাসানপুর”

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৮ Time View

অন্য আর দশটি গ্রামের মত সবুজ শ্যামল ও আধুনিকতার সমন্বয়ে সৌন্দর্যময় একটি আদর্শ গ্রাম হাসানপুর, যা ফেনীর ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। ফেনী শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই গ্রামে থেকে শহরের বহু সুবিধা ভোগ করা যায়। এই গ্রামে প্রবেশ/বাহিরের যেমন অনেকগুলো পথ রয়েছে তেমনি এই গ্রামের সাথে আশেপাশের গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই গ্রামের গুরুত্ব অন্য আর দশটা গ্রাম থেকে একটু বেশী। তবে এই গ্রামের কিছু সতন্ত্র বৈশিষ্ট রয়েছে, এটি এমন একটি গ্রাম যেখানে হাট-বাজার থেকে শুরু করে কি নেই? সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমনঃ- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, বেসরকারি দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা, ইউনিয়ন কৃষি অফিস, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, একাধিক জুম্মা মসজিদ, গ্রামীণ ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক, এনজিও (আশা), পোষ্ট অফিস, পোষ্ট অফিস ই-সেন্টার, ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ই-সেন্টার এবং বয়ষ্ক শিক্ষা কেন্দ্র, নূরানী ও হাফেজী মাদ্রাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এছাড়াও ব্যাক্তিমালিকানায় গড়ে উঠেছে মাছের খামার, পোল্ট্রি খামার, গবাদিপশু খামার, টার্কি খামার, লেদার প্রোডাক্টস কারখানা, চাতাল কল ও চালগুড়োর কল উল্লেখযোগ্য। সরকারিভাবে জ্ঞানের খোরাক বৃদ্ধির জন্য আছে একটি পাঠাগার যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার অন্যতম মাধ্যম, যেখানে বিভিন্ন ধরনের বই, পত্রিকা ও ম্যাগাজিন সংগ্রহে ছিল ছোট-বড় সব পাঠকের জন্য, যদিও বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ না থাকায় তা বন্ধ রয়েছে। তবে পাঁচ শতাধিক বই ও ম্যাগাজিন সমৃদ্ধ একটি সামাজিক পাঠাগার বর্তমানে রয়েছে।

বিকেলবেলায় শিশুকিশোরদের খেলাধুলা করার জন্য কলেজ সংলগ্ন একটি মাঠ আছে যাতে ফুটবল/ ক্রিকেট খেলা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দল এসে এই গ্রামের ছোট বড় দলগুলোর সাথে খেলে থাকে এবং তা বিভিন্ন পর্যায়ের দর্শকরা উপভোগ করে। এই গ্রামের প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ীতেই দালানকোঠার ঘর রয়েছে, খুব কম সংখ্যক ঘর রয়েছে টিনের চালের। প্রায় প্রতিটি বাড়ীর আঙ্গিনায় ও বাসাবাড়ীর ছাদে শাক-সবজি চাষাবাদ করা হয়, যা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে পরিবারের বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি করেছে। ছোট্ট এই গ্রামে গড়ে উঠেছে ২টি ইটভাটা, যেখানে প্রায় শ’খানেক লোক কর্মে নিযুক্ত রয়েছে, কেউবা দৈনিক ভিত্তিতে কেউবা মাসিক আবার কেউ নির্দিষ্ট চুক্তি অনুযায়ী তাদের কাজ সমাধা করে থাকে। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ প্রবাসী, তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সফলতার সাথে কাজ করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষের মধ্যে আছে শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংকার, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, বিজিবি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বংশপরম্পরায় কৃষি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে গ্রামের অধিকাংশ পরিবার।

গ্রামের শিক্ষিত মহিলারাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই, তারা হাঁস-মুরগীর খামার, টেইলারিং থেকে শুরু করে বাজার-সদাই সব নিজেরাই করে থাকে এবং সংসারের সচ্ছলতা আনয়নে পুরুষের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। বর্তমান সময়ে কৃষি অফিস কর্তৃক কৃষির আধুনিকায়ন থেকে শুরু করে কৃষকদের দোরগোড়ায় প্রশিক্ষণ ও কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করার মাধ্যমে এই গ্রামে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কৃষি খামার। এইসব খামারের উৎপাদিত শাক-সবজি কৃষক নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভালো দামে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি করেছে।

পুরো হাসানপুর গ্রামের মধ্যে আছে ডিস ক্যাবল নের্টওয়ার্ক ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এ আছে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সিষ্টেম। শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য আছে গ্রামের একমাত্র কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার “আনন্দপুর ই-পোষ্ট সেন্টার”। এই প্রশিক্ষণ সেন্টার থেকে প্রতিনিয়ত বেকার যুবক-যুবতীরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং সাবলম্বি হচ্ছে। এখানে স্কুল-কলেজের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ এ আগত ব্যাক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ, শিক্ষার্থীদের ভর্তি, অনলাইন আবেদন, চাকুরি আবেদন খুব অল্প সময়ে সহজেই করে থাকে, যা একজন লোকের সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখছে । এই গ্রামে ক্ষুদে উদ্যোক্তার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে কম্পিউটার, ফটোকপি, রিচার্জ ও বিকাশ দোকান, যার মাধ্যমে এলাকার মানুষের চাহিদার পাশাপাশি আগত জনসাধারণের সেবা দিচ্ছে। শিক্ষার্থী ও সমাজের সবাই গ্রামে বসে অনলাইনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কাজ খুব সহজেই সমাধান করতে পারছে। গ্রামের প্রতিটি ঘরেই আছে বিদু্ৎ, এছাড়াও বাজারের প্রতিটি দোকানে এবং কিছু কিছু বাড়ীতে জেনারেটর সার্ভিস লাইন ও সোলার প্যানেল ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রামের অনেক বাড়ীতে আছে গ্যাস লাইন ব্যবস্থা, যা অনেকাংশেই গৃহিনীদের শ্রম, সময় ও পরিবারের অর্থ সাশ্রয় করছে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্মলিত ডেকোরেটর সার্ভিস, লাইট ও সাউন্ড সিস্টেম সুবিধাও রয়েছে। ছোট বড় অসংখ্য মুদি, মনিহারি, কসমেটিকস কাপড় ও জুতা দোকান রয়েছে। প্রতিনিয়ত বাজার সম্প্রসারণ ও ব্যবসার পরিধি বাড়ছে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের লোক সমাগমে ও ভর্তিকৃত বাহিরে শিক্ষার্থী বাড়ার কারনে।

গ্রামের মধ্যে নিরিবিলি পরিবেশে হাঁটার জন্য ফজর নামাজের পরের সময়টাই উপযুক্ত সময় এবং বিকাল বেলায় আড্ডা দেওয়ার জন্য বা বিনোদনের জন্য অনেকগুলো স্থান রয়েছে। যুবকেরা দল বেঁধে সারা গ্রামে ঘুরাঘুরি করে এবং মুরুব্বীরা তাদের নিত্যদিনের কাজ শেষ করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে আড্ডা বা গল্প করে সময় কাটায়। মায়েরা বিকাল বেলায় বাড়ীর উঠানে বসে সবাই মিলে গল্প করা ও টুকটাক রান্না কাজ গুছিয়ে নেওয়া বা হাতের কাজ করেই সময় পার করে। বিকেলে শিশুরা দল বেঁধে কানামাছি, দৌড়ানো বা বিভিন্নভাবে সমবয়সীদের আনন্দ উল্লাস করে। এই গ্রামের মানুষ অত্যন্ত সৌখিন জীবন-যাপন করে এবং সমাজের রীতিনীতি পালনেও সবাই সম্মিলিতভাবে যেকোন কাজে উৎসাহ প্রদান করে থাকে। তরুন-যুবকদের সমন্বয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠণ, যা স্বল্প পরিসরে বিদ্যমান রয়েছে।

লেখকঃ-
গাজী আরিফ মান্নান
শিক্ষক, ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102