বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন

স্বৈরাচারের পতন ও জনগণের জাগরণ

Coder Boss
  • Update Time : শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৪৬ Time View

জহিরুল ইসলাম ইসহাকী।

এই মাটি স্বৈরাচারের নয়, এই মাটি জনগণের!
এই স্লোগানে বাংলার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে। শহর থেকে গ্রাম, রাজপথ থেকে অলিগলি, সর্বত্রই ধ্বনিত হচ্ছে প্রতিবাদের বজ্রনিনাদ। একসময় যেই বাংলার আকাশে নেমে এসেছিল স্বৈরাচারের অন্ধকার, সেই বাংলার বুকে আজ সূর্যোদয়ের নতুন বার্তা। ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলন ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিচ্ছে জুলুমের চিহ্ন। বাংলার আকাশে আর অন্যায়ের কালো ছায়া থাকবে না, থাকবে না শোষণ, থাকবে না নিপীড়ন। থাকবে শুধু মুক্তির আলো, গণতন্ত্রের জয়গান, আর স্বাধীনতার পূর্ণতা।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা ইতিহাস

বাংলা কখনোই শৃঙ্খল মেনে নেয়নি। যুগে যুগে অত্যাচারীরা এসেছে, এসেছে শোষকের দল, কিন্তু এই মাটির বীর সন্তানরা কখনোই মাথা নত করেনি। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ—প্রতিটি সংগ্রামেই বাংলার ছাত্র-জনতা ছিল প্রথম সারিতে। আজও তার ব্যতিক্রম নয়।

এই স্বৈরাচারী শাসনের সূচনা হয়েছিল গণতন্ত্রের মুখোশ পরে, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তার মুখোশ খুলে গেছে। মানুষ দেখেছে কিভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, কিভাবে জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করা হয়েছে, কিভাবে সত্য বলা মানুষের মুখ বন্ধ করতে অপশক্তির হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, কোনো স্বৈরাচারই চিরস্থায়ী হয়নি, কোনো জুলুমের পাহাড়ই অটুট থাকেনি।

স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনতার অভ্যুত্থান

অবশেষে, বাংলার ছাত্র-জনতা রুখে দাঁড়িয়েছে। ইতিহাসের পাতায় আবারও লেখা হচ্ছে সংগ্রামের এক নতুন অধ্যায়। দীর্ঘদিনের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার ফুঁসে ওঠা ক্ষোভ দাবানলে পরিণত হয়েছে। আর সেই দাবানল গ্রাস করছে স্বৈরাচারের কুটির, তাদের দুঃশাসনের প্রতীকী প্রাসাদগুলো ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে জনতার আন্দোলনের আঘাতে।

রাজপথে গর্জে উঠেছে মানুষের কণ্ঠস্বর—

“এই মাটি স্বৈরাচারের নয়, এই মাটি জনগণের!”
“বাংলার আকাশে অন্যায়ের কালো ছায়া আর থাকবে না!”

শহরের দেয়ালে দেয়ালে উঠেছে প্রতিবাদের পোস্টার, ব্যানারে ব্যানারে জ্বলছে সংগ্রামের বার্তা। রাজপথ দখল নিয়েছে হাজারো ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, দিনমজুর—সকল শ্রেণির মানুষের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বাংলার প্রতিটি কোণায়।

ধ্বংসের শেষ অধ্যায়

যে দুঃশাসনের ভিত্তি মিথ্যা, প্রতারণা ও অত্যাচারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তা কখনো স্থায়ী হতে পারে না। আজ বাংলার মানুষ সেই সত্যকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করছে। শোষকের প্রাসাদে আগুন জ্বলছে, অত্যাচারের প্রতীকগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। একদা যে হাতগুলো দুর্নীতির শক্তিতে অট্টালিকা গড়েছিল, আজ সেই হাতগুলো জনতার লাঠি, মশাল আর কণ্ঠের সামনে ভীতসন্ত্রস্ত।

নতুন ভোরের প্রত্যাশা

প্রতিটি রাতের পরেই যেমন ভোর আসে, তেমনি প্রতিটি স্বৈরাচারের পতনের পরেই আসে নবজাগরণ। বাংলার ছাত্র-জনতা আজ সেই ভোরের অপেক্ষায় নয়, তারা নিজেরাই সে ভোর সৃষ্টি করছে। সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হতে চলেছে নতুন এক বাংলাদেশ। যেখানে গণতন্ত্র হবে স্বচ্ছ, যেখানে জনগণের অধিকার নিশ্চিত হবে, যেখানে রাষ্ট্র হবে জনতার প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকারী।

আজকের সংগ্রাম শুধু একটি শাসকের পতনের জন্য নয়, আজকের সংগ্রাম ইতিহাসের ধারাকে পাল্টে দেওয়ার জন্য। আজকের সংগ্রাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি শোষণমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য।

চূড়ান্ত বার্তা

এই আন্দোলন শুধু একক কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, এটি অন্যায়, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এক চিরন্তন লড়াই। এই লড়াইয়ে যারা সামিল হয়েছে, তারা ইতিহাসে চিরকাল বীরের মর্যাদা পাবে। যারা এখনো নিশ্চুপ, ইতিহাস তাদের কাপুরুষ বলেই চিহ্নিত করবে।

এবার বাংলার মানুষ বলে দিয়েছে—
“এই মাটি স্বৈরাচারের নয়, এই মাটি জনগণের!”
“বাংলার আকাশে অন্যায়ের কালো ছায়া আর থাকবে না!”

বাংলার মানুষ, বাংলার ছাত্র-জনতা তাদের মুক্তি অর্জন করবেই। কারণ ইতিহাস বলে, যে জাতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, সে জাতি কখনো পরাজিত হয় না!

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102