বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

স্মৃতিময় ভারত ভ্রমণ

Coder Boss
  • Update Time : বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৭ Time View

মোহাম্মদ শামীম মিয়া
=============

গত সাত ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে মৈত্রী ট্রেনে করে সকাল সোয়া আটটার সময় কোলকাতার উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করি। জীবনে এই প্রথম ভারত ভ্রমণ, মৈত্রী ট্রেনটি গাজীপুর পার হয়ে টাংগাইল দিয়ে ক্রমশ এগিয়ে চলতে লাগলো। আশেপাশে সবুজ বন,গাছপালা, খোলা মাঠ দেখে মন ভরে গেলো। এই প্রথম পাবনার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্র চোখে দেখে আসলাম। ট্রেনটির বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা বর্ডার অতিক্রম করার আগে শেষ স্টপেজ ছিলো। ওখান থেকে যখন ট্রেনটি ভারতীয় সীমানায় প্রবেশ করলো তখন দেখি সবকিছুর পরিবর্তন! ভয় কাজ করছিলো,
মনে হলো ফিরে আসি। বাংলাদেশের শুধু যাত্রী সাধারণ ছাড়া কেউ নেই। সবকিছুই ভারতীয় নিয়ন্ত্রণে চলে গেলো, বর্ডারে আবারও নতুন করে চেক করা হলো সবাইকে,তারপর কোলকাতার উদ্দেশ্য ছুটে চললো। যেতে যেতে ঠিক সন্ধ্যা গড়িয়ে সাতটা বেজে গেলো। ট্রেনটি কোলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে থামলো,সবার
সাথে আমিও নেমে পড়লাম। আবারও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত চেকের পর গেইট দিয়ে বের হয়ে প্রথম ভারতের কোলকাতায় পা রাখলাম। ওখানে অসংখ্য টেক্সি ড্রাইভার যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলো, টেক্সি ড্রাইভারের মধ্যে ভালো যেমন আছে তেমনি মন্দ বা দালাল লোকও আছে। আমি পরিবার সহ মিষ্টি কথায় এক দালালের খপ্পরে পড়ি। সে ৫০০ রুপির বিনিময়ে রাজি হয়, আমাদের হাওড়া রেলস্টেশনে না নিয়ে কোলকাতার নিউমার্কেটে নিয়ে যায়। ওখানে এক দামী হোটেলে নিয়ে যায়। ইমতিয়াজ আহমেদ নামে টেক্সি ড্রাইভারটি সে খুবই চতুর লোক, আমাদের নতুন ও প্রথম পেয়ে সোজা ওখানকার দামী হোটেলের মালিক হাজী সাহেবর কাছে নিয়ে গেলো, ভেবেছিলাম হাজী সাহেব হয়তো ভালো মানুষ পরে দেখি কসাই একটা! আমাদের ডলারের দাম অনেক কম দিলেন, চার হাজার রুপির এক সিট দিলেন এবং কোলকাতা থেকে বেঙ্গালুর বিমান টিকেট দিলেন প্রতিটি বিমান টিকেটে তিন হাজার রুপি বেশি করে রাখলেন। আমার কোন কথায় তিনি কোন রকম ছাড় দিলেন না। তাই কোলকাতা যারা নতুন আসবেন সাবধানে পা ফেলবেন একটু অসাবধান হলেই দালাল সহ আরও অনেক বিপদে পড়বেন। এখানে এসে সত্যিকারের অভিজ্ঞতা হলো। রাত একটায় তৈরি হয়ে গেলাম, ছয়শত রুপি
দিয়ে দেড় ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম দমদম বা নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোসে বিমানবন্দরে। তখনও দু’ঘন্টা বাকি বিমান ছাড়ার, রাত চারটা দশে এয়ার ইন্ডিগো করে বেঙ্গালুরের উদ্দেশ্য যাত্রা, এই প্রথম বিমানে যাত্রা, ভয় লাগছিলো। রাতের আঁধারে আকাশ পথে উড়ে চললো বিমান,সকাল সাড়ে ছয়টায় বেঙ্গালুর বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলাম।বেঙ্গালুর গিয়েও বিপদে পড়তে হতো
ভাগ্য ভালো আগে থেকেই চন্দন দাদা নামে একজনের সাথে পরিচয় হয়েছিল, ওনিই ওখানকার সবকিছু বলে দিলেন কিভাবে যেতে হবে। বাসে করে পৌঁছে গেলাম সিল্কপোর্ট, ওখান থেকে ভমেসুন্দর পৌঁছে গেলাম সকাল এগারোটার মধ্যে, যা বেঙ্গালুর থেকে প্রায় আশি কিলোমিটার দূরে। বাস থেকে নেমে ওভার ব্রিজ পার
হয়ে ভারতের বিখ্যাত ডাক্তার দেবী শেঠির নারায়ণা হাসপাতালে পৌঁছে গেলাম। হাসপাতালের পাশেই পরিবার নিয়ে থাকার জন্য একটা মেস বুকিং করে কাগজ সহ হাসপাতালে গেলাম। আপনারা অনেকেই জানেন আমার ছেলে রাহাত জন্ম থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত, সে ঠোঁটকাটা ও তালুকাটা এবং হার্টে প্রায় পাঁচটি বড় বড় ছিদ্র, রক্তনালি উলটপালট সহ আরও ছোট ছোট অসংখ্য ছিদ্র আছে। আট ফেব্রুয়ারী হাসপাতালে সব কাগজপত্র তৈরি হয়, এর তিনদিন পর বিখ্যাত ডাক্তার দেবী শেঠির সাক্ষাৎ মেলে। তবে কপাল মন্দ ওখান থেকে চিকিৎসার জন্য যে প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে তা আমার সাধ্যের অনেক বাহিরে, ভারতীয় রুপি পাঁচ লাখ পঞ্চাশ হাজার রুপি, এবং আরও অনেক খরচ সহ প্রায় দশ লাখ টাকার মতো লাগবে। আমার কাছে আসার ভাড়া ও কোনমতে কয়েকদিন খাবারের জন্য টাকা ছিলো। এত অল্প টাকায় চিকিৎসা সম্ভব নয় দেখে নিরুপায় হয়ে ফিরে আসতে হলো।ওখানকার ভাষা, শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ভিন্ন ভিন্ন, বুঝতে অনেক অনেক কষ্ট হচ্ছিল। তারপরও কিছুটা ইংরেজি জানি বলে কোনমতে চালিয়ে যেতে পেরেছি। বেঙ্গালুর সকালে আযান শুনা খুবই দুষ্কর, মসজিদ নেই বললেই চলে, শুধু গত শুক্রবার নারায়ণা হাসপাতালের সামনে এক মসজিদে জুম্মা নামাজ আদায় করেছি। গত সোমবার রাত দশটা চল্লিশে বেঙ্গালুর থেকে এয়ার এশিয়া করে,আড়াইটার দিকে নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোস
বিমানবন্দরে এসে পৌঁছি, ওখানকার বিমানবন্দরের যাত্রীদের জন্য বসার চেয়ারে সময় পার করে সকালে টেক্সী করে কোলকাতার উদ্দেশ্য ছুটে চলি।কোলকাতা
এসে নিউমার্কেটের নবাবী হোটেলে সকালের নাস্তা করি,কোলকাতার খাবার বাংলাদেশের মতোই। কোলকাতা এসে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পার্ক ও মিউজিয়াম,হাওড়া ব্রিজ,গঙ্গা নদী,ইডেন গার্ডেন ক্রিকেট মাঠ,কোলকাতা প্রেসক্লাব সহ আরও অনেক সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় স্থান দেখে মুগ্ধ হই।নিউ মার্কেট মার্কুইজ থেকে সবশেষে সেন্টমার্টিন বাসে করে
বেনাপোল বর্ডার পার হয়ে চলে আসি প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে। পথে আসতে আসতে ভারত ভ্রমণের ভালো মন্দ স্মৃতিগুলো বারবার মনে পড়ছিলো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102