লেখক: ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
বাঙালি 'হান চীনা' 'আরবজাতির' পরে তৃতীয় বৃহৎ জাতি অবশ্য দক্ষিন এশিয়ায় বৃহৎ জাতি! বাঙালি জাতির মধ্যে বেঈমান লোভী স্বার্থপর ও ধর্মের নামে অধার্মিক বেশী! অন্য জাতির থেকে বাঙালি একটা হতভাগা জাতি যারা শাসিত হয়েছে মামলুক সালতানাত, খলজি, তুঘলক, মুঘল, ইস্ট-ইন্ডিয়া ইংরেজ ও পাকিস্তানের পাঞ্জাবি দ্বারা! ইংরেজ শাসক ১৯৪৭ সালে অখন্ড ভারত ভেঙে যে সব কুকর্ম গুলো করে গেছেন তার মধ্যে কাশ্মীর পাঞ্জাব বাংলা কে দু’টুকরো করা অন্যতম! এছাড়া আসাম আরকান এদের ও একটা অনিশ্চিত অবস্হায় ফেলে গেছে। বাংলাদেশের আমাদের অংশ কে ১২০০ মাইল দূরত্বের পাঞ্জাবি পাঠান বেলুচদের লেজে বেঁধে দিয়ে আরো জটিলতায় ফেলে গেছে। যেহেতু ভিন্ন ভাষা ভিন্ন সংস্কৃতি এবং দূরত্ব, মাঝখানে বিশাল ভারত তাই একে অপরের সাথে আন্তরিকতা গড়ে উঠে নাই শুধু ধর্মের দোহাই বৈষম্য দূর করতে পারে নাই! শাসক পশ্চিম পাকিস্তানের হতে হবে এমন মানসিকতা বৈষম্য আর-ও প্রকট হয়ে উঠে! বাংলা ভাষাকে উর্দু ফরমেটে করার মত উদ্ভট চিন্তা চাকুরী বাকরি তে বিস্তার অসমতা একদিন বাঙালি সেরা সন্তানদের রুখে দাড়াতে হয়! শেরেবাংলা, ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা তর্কবাগীশ, মুজিব সহ একঝাঁক সৎ সাহসী বাংলাদেশ কে ভালোবাসা বাঙালি জোট গঠন করে প্রতিবাদ মুখর হয়! জেল-জরিমানা নির্যাতন নিপিড়ন হত্যার মধ্যে ১৯৫২ ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ তে মুজিবের ৬ দফা পেশ, ১৯৬৯ এ মুজিবের গণ-আন্দোলনের মুখে পশ্চিম পাকিস্তানে বসে ও সামরিক স্বৈরাচার ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানকে পদত্যাগ করতে হয়, আর এক জেনারেল ইয়াহিয়া কে ক্ষমতা দিয়ে সরে যান আইয়ুব খান!
১৯৭১ সালে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে যে দল সামনে এলো তাকে ক্ষমতা না দেয়া ছিলো চরম ভুল! ক্ষমতা দিলে হয়তো বছর ২/৩ এর ভিতর মুজিব জনগণের আস্হা হারাতেন এবং পাকিস্তান নামক দেশটা টিকে থাকতো। কিন্তু হলো না, পিছে মার্কিন, ইয়াহিয়া ভুট্টো ক্ষমতা না দিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের নামে গনহত্যা শুরু করলেন, মুজিব ৩২ নাম্বার ধানমন্ডির বাড়ীতে বসেই স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন এবং তার আগে পরিকল্পনা মত সবাইকে সরিয়ে দিলেন যুদ্ধ সংগঠন করতে। ৩০ লক্ষ বাঙালি শহীদ হলো এবং ৪ লাখ মা বোন ইজ্জত দিলো! বিনিময়ে এলো "বাংলাদেশ" নামক সোনার হরিণ ! ষড়যন্ত্র থেমে থাকলো না! আভ্যান্তরীন ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে দুর্ভিক্ষ হলো, ফিরে দাড়াতে দাড়াতে মুজিব মরলো পরিবার ২২ জন সহ ১৫ ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালে!
কিছু লোক খুশি হলো, কিছু দেশ আনন্দিত হলো কিন্তু বাংলাদেশ কোন উন্নতির পথে হাটলো না! সামরিক সরকার এলো দেশে পাকিস্তান স্টাইলে, তিনি হত্যা হলেন, দ্বিতীয় সামরিক জান্তা এলেন এবং সব শেষে ১৯৯০ সালে সিভিল শাসন শুরু হলো। সিভিলের ভিতর ও সামরিক ফ্লেভার! তবুও বৃহৎ দুটো দল পালাক্রমে ক্ষমতায় আসায় জনগন মোটামুটি ভালোই ছিলো! ভালোই চলতে ছিলো! কিন্তু একটা দল ক্ষমতায় গেলে তার ক্ষমতা ছাড়তে তাল-বাহানায় নিজেই ২০০৬ সালে মিলিটারি চিঠি দিয়ে ডেকে এনে ধ্বংস করলেন তত্বাবধায়ক নির্বাচন পদ্ধতি! পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা দলটা সেনা নিগ্রহের পয়েন্ট ধরে তত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করলেন!
প্রিয় পাঠক, আমার বিষয় "ইনডেমনিটি আইন" (বিচার রোধ) ! মুজিব সহ ২২ জন একই রাতে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহম্মেদ ইনডেমনিটি দিয়ে হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না ফরান জারি করলেন, মেজর জিয়ার পার্লামেন্টে সেটা পাশ পরে বৈধতা দিলেন! কোন গনতান্ত্রিক রাস্ট্রে কেউ হত্যা হলে তার বিচার চাওয়া যাবে না এমন আইন বিশ্বে কোথাও execute করা হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত বিরল!
পাঠক, অপরিনামদর্শী দুর্নীতি প্রশ্রয় দানকারী ঢিলেঢালা প্রশাসনিক মানসিকতার নির্বোধ শেখ হাসিনা দেশের মান কে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ছিলেন তা প্রতিবন্ধী তোফাজ্জল (বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লাসে হত্যা) ও অস্বীকার করতে পারবে না! তেমনি দেশের অনেক দুর্নীতি প্রশ্রয় স্বজনপ্রীতি বিগত সরকারের কেউ অস্বীকার করতে পারবে না! এসব তুলে ধরে সংগ্রাম প্রতিরোধ যে দলটার করার কথা ছিলো তার নাম বিএনপি কিন্তু তারা তা করতে বার-বার ব্যর্থ হয়েছে বরং জনগণের কাছে না যেয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র মুখী ছিলো তাদের গন্তব্য!
ছাত্ররা ২০১৮ সাল থেকে কোটা নিয়ে দাবী তুলে আসছে, অবশ্য ই ন্যায্য দাবী, উপজাতি, নারী, প্রতিবন্ধী, মুক্তি যোদ্ধা কোঠা সব মিলে ৫৭% চলে গেলে সাধারণ ছাত্র পায় মাত্র ৪৩%,
অপরিনামদর্শী সরকার এই বিষয় কর্ণপাত না করে ছাত্রদের বিরাগ ভাজন হন এবং তার সাথে আন্তর্জাতিক বা রাজনৈতিক ভীত গঠন সরকারের অনুমানের উর্ধে চলে যাওয়ায় ছাত্ররা মেঘ চাইতে বৃষ্টি পেয়ে যায়। সরকার কিছু হার্ড লাইন বেছে নিয়ে এবং জামাতের মত সুসংগঠিত দলকে অবজ্ঞা করায় পালাতে বাধ্য হয়!
৮ ই আগষ্ট নতুন সরকার গঠিত হওয়ায় আমরা আশাবাদী ছিলাম দেশের ব্যাপক উন্নয়নে হাত দেয়া, ভারত প্রীতি বন্ধ করা সন্মানের সাথে! গনতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, জনগনের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া, বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করা, সবার মনে এমন আনন্দ আসবে যেন আর নয় দলীয় সরকার!
ওমা, যিনি মিঃ আসিফ নজরুল ভাবাবেগে কেঁদে ফেলার মত, "জানি না কোন দিন দেশের খেতমত করার সুযোগ পাবো কিনা, যদি পেতাম সব ভাত আখের গুড় দিয়ে মেখে খেতাম ধরনের " তিনি সুযোগ পেলেন, ২৬ লাখ ভারতীয় চাকরি করা নাগরিক খুজলেন না, আয়না ঘর কোথায় দেখালেন না, জনগণের নিরাপত্তার কথা ভাবলেন না, ব্যাপক চাঁদাবাজি ঠেকালেন না, বিদ্যুৎ ঘাটতির যে কারন বললেন তা প্রাইমারির শিক্ষক ও বলবেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে এমন নির্লজ্জ অবৈজ্ঞানিক কথা তিনি বললেন! ছেড়ে দিলেন শীর্ষ সন্তাসীদের! আইন উপদেষ্টা তিনি আবার সেই অগণতান্ত্রিক আইন তৈরি করলেন "১৫ ই জুলাই থেকে ৮ ই আগষ্ট পর্যন্ত কোন হত্যার বিচার করা যাবে না"!
সুইডেন আসলাম কালাজাঙ্গীরদের মত জনদের জন্য বেগম খালেদা জিয়া R A B তৈরি করেছিলেন যতদুর মনে পড়ে। তাদের কিছুটা ফর্মালিটি করে আদালত মাধ্যমে ছেড়ে দিতেন! এদের নিয়ে দল করে ক্ষমতায় আসবেন এমন চিন্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মস্তিষ্কে আসা উচিত কি ? এরা বিএনপি দলে না থেকে আপনাদের দলে কেন যাবে? নির্বাচন দিয়ে দেখেন!
আপনি আইনের শিক্ষক, কেঁদে ফেলেছেন জনসেবা খায়েশে, আল্লাহ সে সুযোগ দিয়েছেন আপনি জানেন না, What is REVOLUTION, INDEPENDENCE, GENOCIDE, কত হত্যা হলে জেনোসাইড হয়, কোন উদ্দেশ্যে হত্যা হলে জেনোসাইড হয়, কাদের হত্যা কোন উদ্দেশ্য হলে জেনোসাইড হয়? মিঃ মিলার এসে বসে আছেন ৫ ই আগষ্ট কে Genocide বানাতে! তাকে গাজায় লেবানন যেতে বলেন না কেন?
১৫ ই জুলাই থেকে ৫ ই আগষ্ট হত্যা কত (ছাত্র পুলিশ জনগন তার মধ্যে ৭.৬২ বুলেটে কত)?
কোথা থেকে এলো এই বুলেট, সাখাওত সাহেব কে বদলি করে কি এটা ধামাচাপা পড়বে?
ইনডেমনিটি দিয়ে কি কোন অন্যায়ের বিচার বন্ধ হয়েছে? আজ হোক কাল হোক ইনডেমনিটি থাকবে না! মেজর জিয়াকে হত্যার পর কি বিএনপি মুছে গেছে, গোলাম আযম সাহেব মরার পর কি জামাতে ইসলাম মুছে গেছে, আওয়ামী কি মুজিব হত্যার পর মুছে গেছে? ইরানের রেজা শাহ পাহলভী ৪০ হাজার হত্যা করে আমেরিকা পালিয়ে যেয়ে আবার ফিরে এসে একবছর দেশের শাসনে ছিলেন (সম্ভবত সময়টা এমন)! আপনার মত আসিফ নজরুল থাকতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ আবার চালু কি ইজ্জতে হাফসুল নয়! চিকেন নেক, সেভেন সিস্টার্স অস্হির হওয়ার হুমকি, ইনডেমনিটি কি গনতন্ত্রের হাফসুল নয়! অনেকে অপরিচিত কিন্তু আপনি তো আমাদের প্রিয় একজন ছিলেন! ভালো ভালো কথা বলতেন ভালো লিখতেন, মেয়েরা পটে যেতো আমারও পটে ছিলাম কিন্তু কি দেখালেন? কারো পরে অভিযোগ নাই কিন্তু আপনার উপর আছে, পিনাক ভট্টাচার্যের বক্তব্য দেখবেন!
"রাজাকে রাজনীতি জানতে হয় " মোহনলাল বলেছিলেন নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে! ৭০% লোক বলছেন, "আগে ভালোছিলাম"!
ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন নিজ দেশকে ভালোবাসেন।