খুলনা প্রতিনিধি:
খুলনা আর্ট একাডেমি ৩৬, আয়েশা কটেজ ইকবাল নগর স্কুলের পূর্ব পাশে অবস্থিত। চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করে শিল্প চর্চা পরিচালনা করেন ।এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশ বিদেশের সুনাম অর্জন করেছেন। জাতীয় পর্যায়ে ও তাদের অবদান রয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে।
চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের জন্মস্থান বরিশাল ঝালকাঠি খাজুরা গ্রামে। তার বাল্যবন্ধু রিপন একজন স্কুল শিক্ষক। রিপনের মেঝ ভাইকে নিয়ে খুলনায় ডাক্তার দেখাতে আসেন তখন আর্ট একাডেমি পরিদর্শন করেন সমাজসেবক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাবু নিপেন বেপারী, ভাতিজা সৈকত বেপারী তিনজনে পরিদর্শন করে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। এ যেন একটি জাদুঘরে আসলাম আজ এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না মিলনের সংরক্ষণে এত সুন্দর কিছু সংরক্ষিত আছে। বন্ধু রিপন বলে ১৯৯৯ সালে মিলন যখন খুলনার উদ্দেশ্যে চলে আসে তখন খুব খারাপ লেগেছিল। মোটেও ভালো সময় যাচ্ছিল না কারণ প্রতিটা মুহূর্ত একসঙ্গে কাটানো হতো তখন মোবাইল ছিল না। মানুষের মধ্যে ভালোবাসার ঘাটতি ছিল না কোন। গল্পে আর আনন্দে কেটে যেত সারাটা দিন সেই বন্ধন ছিন্ন করে খুলনায় এসেছিলো।আজ এখানে এসে যা দেখতে পেলাম এখন বলব মিলন এসে ভালোই করেছে। মিলনের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের জেলা পর্যায়ের একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক হতে পেরেছেন। এতে মনে করি তার শিল্প সাধনায় সফল হয়েছে এবং তার ঐতিহ্য সংরক্ষণ আজ নবীন প্রজন্মরা দেখে তারা অনেক কিছু শিখতে পারবে জানতে পারবে। অতীতে মানুষরা কি ধরনের বিষয় দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন। আমার প্রিয় বন্ধু হিসেবে আমি তাকে অভিনন্দন জানাই এবং আমি গর্বিত তার শিল্প সাধনা দেখে। মিলন ১৯৯৯ সালে শিল্পী হওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন।পালিয়ে আসার কারণটা তার পরিচিতজন খুলনায় ছিল না তাই পরিবার থেকে সম্মতি না পাওয়ার জন্য আর্ট কলেজে পড়ার উদ্দেশ্যে শিল্পী হওয়ার জন্য পালিয়ে আসেন। তার চিন্তাভাবনা অন্যদের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। তারি ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষরা ছুটে আসেন তার আঙিনায়। বরিশালে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখতাম আজ স্বচক্ষে দেখে খুবই অভিভূত হয়েছি আমি এবং আমার দাদা ও ভাতিজা। সবাই ঐতিহ্য দেখে আনন্দ উপভোগ করেছি। আমার বিশ্বাস যদি সরকার কর্তৃক কোন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তবে মিলনের এই কর্মকান্ড আরো সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারবে।সে ছোট থেকেই ব্যতিক্রম ভাবে বেড়ে উঠছে এবং বাঙালিদের দৈনন্দিন জীবন জীবিকা নির্বাহ করার জন্য যেসব বিষয়গুলি প্রয়োজন হতো বর্তমানে তার ডিজিটাল এর স্পর্শে লোকসংস্কৃতি ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে অনাদরে। তিনি বলেন মানুষের জীবন সার্থক হবে তখনই যখন মানুষ ইতিহাসকে লালন করে হৃদয়ে ধারণ করবে ।তবে মানব জীবন সার্থক হবে। তাই তিনি ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছেন সবাইকে। তার কাছে সংরক্ষিত কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো ঢেঁকি, হারিকেন, হ্যাজাক, লাইট ,ল্যাম্প বা কুপি, নারিকেলের হুক্কা ,পিতলের হুক্কা, বেতের শের বা পাতী,পিতলের জগ, ঘটি,গ্লাস, বৈঠা, বাবুই পাখির বাসা, ঘটি , বিভিন্ন সময়ের একতারা, রেডিও, ক্যাসেট ,ক্যাসেটের ফিতা, ভিসিআর এর ফিতা,এনালগ ক্যামেরা,
এন্টিনা যুক্ত মোবাইল, বাংলা লায়নের মডেম, গ্রামীণ মডেম, ডিভিডি প্লেয়ার,ওয়াকম্যান রেডিও, ল্যান্ড ফোন, ব্যান্ড বাশি, টর্চ লাইট, মডেম, বাংলাদেশের বিভিন্ন মুদ্রা, মোগল আমলের মুদ্রার (ডেমো) কৃষকের মাথাল, সরকালী , দোতারা, লাউয়ের খোল, মাছ রাখার খাড়া, মাছ ধরা পোলো, কাঠের দেউকুলা, অসংখ্য মাটির দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়, শামুক ঝিনুক, প্রবল পাথর, ইত্যাদি খুলনা আর্ট একাডেমি একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান তা প্রমাণ পায় এখানে ঢোকা মাত্রই। চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস বলে আমার কাছে যারা শিক্ষা গ্রহণ করে তারাই শুধু আসে না এখানে খুলনার বাইরে থেকে অনেক মানুষ প্রতিনিয়ত আসে শুধুমাত্র এখানে সংরক্ষণ দেখার উদ্দেশ্যে। এটাই আমার শিল্প সাধনার শান্তি।আমি আনন্দিত হই যখন কোন নতুন অতিথি আসে এবং আমাকে নিয়ে তারা কথা বলে প্রশংসা করে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠরা ।আমি কৃতজ্ঞতা জানাই যারা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য সংরক্ষণ আমার সংরক্ষণশালায় উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন আমার হাতে তাদের সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা চির অম্লান হয়ে থাকবে। আরো বলেন আজ আমার বাবার ব্যবহৃত বিষয়গুলিও এখানে নিয়ে এসেছি আজ বাবা থাকলে আরো খুশি হতেন। তাই তার শিল্প গুরুদের ও পিতাকে স্মরণ করে এই শিল্প সাধনা করেন। এবং তিনি সকলের কাছে আশীর্বাদ প্রত্যাশা করেন তিনি যেন ক্ষণস্থায়ী জীবনে দীর্ঘস্থায়ী সময়ে বেঁচে থাকার জন্য এই শিল্প সাধনার মাধ্যমে বেঁচে থাকতে পারেন এমন অভিমত ব্যক্ত করেন অতিথিদের সম্মুখে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস।
সৌহার্দ্য বিশ্বাস
প্রচার সম্পাদক
খুলনা আর্ট একাডেমি
তারিখঃ১২-০২-২০২৫