মোঃ রহমত আলী, খুলনা:
মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ব্যবহৃত বিষয় যখন অবহেলায় পরিনত হয় যেমন একটি প্রয়োজনীয় বিষয় একই ধরনের আপডেট রূপ নিয়ে ফিরে আসে তখন পূর্বের বিষয়টি মানুষের কাছে প্রয়োজনীয়তা কমে যায়। আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় মানুষের মাঝে থেকে। তখন আমরা তাকে বিষয়টিকে বিলুপ্ত বলে থাকি।
বর্তমানে যার সংস্পর্শ মানুষের মাঝে নেই এ ধরনের বিষয়কে আমরা ঐতিহ্য হিসাবে পরিচয় দেই নবীনদের মাঝে তুলে ধরি।
আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা সবসময় সমাজকে নিয়ে ভাবেন অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেয় না ।তাদের সারিতে বেশি লোক না পেলেও তারা থেমে থাকে না ।নিজের স্থান থেকে সমাজকে পরিবর্তন করার জন্য জীবন যুদ্ধ করে চলছেন। আমাদের খুলনাতে এমনি একজন মানুষ তিনি হলেন চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস। যিনি শিশুদের নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন যার নাম খুলনা আর্ট একাডেমি, ৩৬, আয়েশা কটেজ ইকবাল নগর স্কুলের পূর্ব পাশে অবস্থিত। চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করে শিল্প চর্চা পরিচালনা করেন ।
এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশ বিদেশে সুনাম অর্জন করেছেন। জাতীয় পর্যায়ে ও তাদের অবদান রয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে।
চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের জন্মস্থান বরিশাল ঝালকাঠি খাজুরা গ্রামে। তার বাল্যবন্ধু রিপন এর পিশাতো ভাই প্রিন্স মন্ডল একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান।তাই সেও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে।সে পাখি প্রেমী এবং ঐতিহ্য ধারণ করে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা তার কাছে সংরক্ষিত আছে। গত ২৮শে মার্চ শুক্রবার তার অফিস ছুটি থাকায় বাইক নিয়ে তার মামাতো ভাই মলিন বাবুকে নিয়ে সাদা রঙের একটি টিয়া পাখি কেনার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় । খুলনার কাছাকাছি স্থানে এসে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসকে ফোন দেয়। পরে খুলনায় এসে খুলনা আর্ট একাডেমির ঐতিহ্য পরিদর্শন করেন বাবু প্রিন্স মন্ডল পিডি বিএফ,মলিন বেপারী কেমিস ক্রপ কেয়ার লিমিটেড এবং এবং সঙ্গে আসে তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী মোহাম্মদ জাবিরুল ইসলাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খুলনা। মিলন বিশ্বাসের চিন্তাভাবনা অন্যদের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। তারি ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষরা ছুটে আসেন তার আঙিনায়। প্রিন্স মন্ডলের সঙ্গে কথা বলে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস জানতে পারললেন অতিথীরা বলেন বরিশালে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখতাম আজ স্বচক্ষে দাদার এই কর্মকাণ্ড দেখে খুবই অভিভূত হয়েছি ।
সবাই ঐতিহ্য দেখে আনন্দ উপভোগ করেছি। আমার বিশ্বাস যদি সরকার কর্তৃক কোন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তবে মিলন দাদার এর এই কর্মকান্ড আরো সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারবে।সে ছোট থেকেই ব্যতিক্রম ভাবে বেড়ে উঠছে এবং বাঙালিদের দৈনন্দিন জীবন জীবিকা নির্বাহ করার জন্য যেসব বিষয়গুলি প্রয়োজন হতো বর্তমানে তার ডিজিটাল এর স্পর্শে লোকসংস্কৃতি ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে অনাদরে। তিনি বলেন মানুষের জীবন সার্থক হবে তখনই যখন মানুষ ইতিহাসকে লালন করে হৃদয়ে ধারণ করবে ।তবে মানব জীবন সার্থক হবে। তাই তিনি ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছেন সবাইকে। শিল্পীর সংরক্ষণশালায় সংরক্ষিত কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো ঢেঁকি, হারিকেন, হ্যাজাক, লাইট ,ল্যাম্প বা কুপি, নারিকেলের হুক্কা ,পিতলের হুক্কা, বেতের শের বা পাতী,পিতলের জগ, ঘটি,গ্লাস, বৈঠা, বাবুই পাখির বাসা, ঘটি , বিভিন্ন সময়ের একতারা, রেডিও, ক্যাসেট ,ক্যাসেটের ফিতা, ভিসিআর এর ফিতা,এনালগ ক্যামেরা,এন্টিনা যুক্ত মোবাইল, বাংলা লায়নের মডেম, গ্রামীণ মডেম, ডিভিডি প্লেয়ার,ওয়াকম্যান রেডিও, ল্যান্ড ফোন, ব্যান্ড বাশি, টর্চ লাইট, মডেম, বাংলাদেশের বিভিন্ন মুদ্রা, মোগল আমলের মুদ্রার (ডেমো) কৃষকের মাথাল, সরকালী , দোতারা, লাউয়ের খোল, মাছ রাখার খাড়া, মাছ ধরা পোলো, কাঠের দেউকুলা, অসংখ্য মাটির দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়, শামুক ঝিনুক, প্রবল পাথর, ইত্যাদি খুলনা আর্ট একাডেমি একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান তা প্রমাণ পায় এখানে ঢোকা মাত্রই। চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস বলেন আমার কাছে যারা শিক্ষা গ্রহণ করে তারাই শুধু আসে না এখানে খুলনার বাইরে থেকে অনেক মানুষ প্রতিনিয়ত আসে শুধুমাত্র এখানে সংরক্ষণ দেখার উদ্দেশ্যে। এটাই আমার শিল্প সাধনার শান্তি।আমি আনন্দিত হই যখন কোন নতুন অতিথি আসে এবং আমাকে নিয়ে তারা কথা বলে প্রশংসা করে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠরা ।আমি কৃতজ্ঞতা জানাই যারা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য সংরক্ষণ আমার সংরক্ষণশালায় উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা চির অম্লান হয়ে থাকবে। আরো বলেন আজ আমার বাবার ব্যবহৃত বিষয়গুলিও এখানে নিয়ে এসেছি আজ বাবা থাকলে আরো খুশি হতেন। তাই তার শিল্প গুরুদের ও পিতাকে স্মরণ করে এই শিল্প সাধনা করেন। এবং তিনি সকলের কাছে আশীর্বাদ প্রত্যাশা করেন তিনি যেন ক্ষণস্থায়ী জীবনে দীর্ঘস্থায়ী সময়ে বেঁচে থাকার জন্য এই শিল্প সাধনার মাধ্যমে বেঁচে থাকতে পারেন এমন অভিমত ব্যক্ত করেন অতিথিদের সম্মুখে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস।