খুলনার প্রাণ কেন্দ্রে ইকবালনগর স্কুল এর পূর্ব পাশে ৩৬,আয়েশা কটেজ এর নিচতলায় অবস্থিত খুলনা আর্ট একাডেমি। এটি একটি শিল্প-সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। শিল্প সাংস্কৃতিক চিন্তা ভাবনা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সব দিনের জন্য ভিন্ন আঙ্গিকে পরিচালনা করেন।একাডেমির কার্যক্রম ছবি আঁকা, আবৃত্তি, সংগীত ও হাতের লেখা,তারই সঙ্গে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস তার নিজ প্রচেষ্টায় বাঙালিদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় যে সকল ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তর পথে এমন বিষয় সংরক্ষণ করেন। খুলনা আর্ট একাডেমিতে নবীন প্রজন্ম দেখে খুবই আনন্দিত হয় তাই চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের আগ্রহ বেড়ে যায়। এখন গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হলে ওই এলাকার হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণ করার চেষ্টা করে, ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। শিশুশিল্পীদের পরীক্ষা শেষ তাই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মিলন বিশ্বাস পরিবারকে নিয়ে মাগুরার জেলার নাকল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে যান । বিবাহিত জীবনের ১৮ বছর অতিক্রম হয়েছে ।গ্রামের পূর্বে সাংস্কৃতিক চর্চার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ধারণ করার চেষ্টা নিয়ে খুঁজতে থাকেন গুরুজনদের কাছে। হঠাৎ করে মনে হল হ্যাজাক লাইট সংরক্ষণ নেই খুলনা আর্ট একাডেমিতে। এমন আলোচনা করেন বড় ছোট শালাবাবুদের নিয়ে সন্ধ্যায় চায়ের আড্ডায়।তখন হিমাংশু কাকা ও আকাশ শালাবাবু তারা বলছেন আপনার কাকা শ্বশুরের হ্যাজাক লাইট আছে শিল্পীও নির্লজ্জের মতো তাৎক্ষণিক ফোন দিয়ে শ্বশুরের কাছে চাইলেন। শ্বশুর উত্তর দিলেন কি করবে তুমি শিল্পী উত্তর দিলেন খুলনা আর্ট একাডেমির সংরক্ষণে রাখবো যদিও সব কথা শুনে শশুর বলেন ঠিক আছে।তিনি তার পিতার স্মৃতি হিসেবে যত্ন করে রেখে দিয়েছেন কিন্তু জামাই চাওয়াতে না বলতে পারলেন না ।এটি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের ধারণা কারণ লাইটটি তুলে দেওয়ার সময় তার মনের অবস্থা ভালো ছিল না। চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস লাইটটি তুলে নেওয়ার সময় কাকা শশুরকে প্রশ্ন করেন এই লাইটটির বয়স কত হতে পারে। যখন জামাইর হাতে তুলে দেয় তখন মিলন বিশ্বাস প্রশ্ন করে কাকা এই লাইটটিকে আপনার সংরক্ষণ করা ছিল তখন তিনি বলেন আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি এটা বাবার আমল থেকে। সঠিক করে তিনি বলতে পারেনি তার বাবার আমলের না দাদার আমল। তবে ধারণা দিয়েছেন ১০০ বছরের। আমার কাকা শ্বশুর বাবু দীনবন্ধু রায় তার পিতা স্বর্গীয় শ্রী মহাদেব রায়, তাকেও তিনি দেখেননি কিন্তু তার স্মৃতি হাতে নিয়ে তাকে স্মরণ করে তার সন্তানকে প্রণাম জানায়, এবং আশীর্বাদ চায় তিনি যেন ভালো কিছু করতে পারেন। বাবু দীনবন্ধু শিল্পীর শ্বশুরের বয়স ৬০ বছর এর বেশি। আমাদের দাদা শশুর আমার বাবার আমলের এই লাইট ।জানিনা এটি বাবার না ঠাকুরদার কিনা। তখন চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস বললেন আমি এই লাইট সম্পর্কে অবশ্যই লিখে রাখবো স্মৃতিস্বরূপ যাতে আমাদের নতুন প্রজন্মরা এ সম্পর্কে কিছু জানতে পারে এমন কথা প্রকাশ করেন শিল্পী ।কাকা শ্বশুর অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ কারণ পৃথিবীতে সবাই বাবা মাকে লালন করে তার রেখে যাওয়া বিষয়গুলি যত্ন করে রাখে সেই বাবার স্মৃতিটুকু সংরক্ষণ করে সম্মানের সাথে বজায় রেখেছেন। হয়তো এই হ্যাজাক লাইট টি বাড়িতে রেখে দিলে বছরে একজন দেখত না ।কিন্তু সংরক্ষণশীলায় প্রতিনিয়তই অসংখ্য মানুষ দেখবেন এবং তার বাবার এবং তার জন্য শুভ কামনা করবেন। চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস তার পরিচিতজনদের সার্বিক সহযোগিতা আশীর্বাদ চাচ্ছেন তিনি যেন শিশুদের মাঝে ভালো কিছু তুলে ধরতে পারেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে আধুনিকতার স্পর্শ নিতে গিয়ে বাঙালিদের অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি হারিয়ে গেছে।এই লাইটটি গুগলের সন্ধান অনুযায়ী জার্মানের ম্যাক্স গ্রেটেজ ১৯১০ সালে পেট্রোম্যাক্স ল্যাম্প বা হ্যাজাক বাতি আবিষ্কার করেন।চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস ২০০৩ সাল থেকে খুলনা আর্ট একাডেমি পরিচালনা করে আসছেন। শিল্পী যেখানে যায় লোকসংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য বিষয় বলি সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন।একথায় চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস বলেন আমার কাছে অনেক কিছুই আছে।এই উপহার আমার জীবনের চলমান আমাদের প্রতিষ্ঠানে এরকম অসংখ্য লোকও সাংস্কৃতিক বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং শিল্পী দীনবন্ধু বাবুকে খুলনা আর্ট একাডেমির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানায় এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আমি যেন ধারণ করে রাখতে পারি। আরো বলেন ধনীর ধন পিপড়ায় খায় মানুষেরা পায় না একটা সময় আমিও হারিয়ে যাব সেদিন এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা স্মৃতিস্বরূপ খুলনা আর্ট একাডেমির সংরক্ষণশলায় আমাকে মনে রাখবেন যদি মানুষে হাতে পড়ে এর দ্বায়িত্ব। আমি এই ধরনের বিষয় সংরক্ষণ করি তাই কিছু লোক আমাকে নিয়ে মন্তব্য করে হাস্যকর ভাবে বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করে তাতে আমার কিছুই যায় আসে না । আমি নিজস্ব ধারাবাহিকতায় শিল্প সাধনায় সবসময় নিজেকে পরিচালনা করি।আমি জানি বেঁচে থাকতে কবিশিল্পীরা উপযুক্ত সম্মান পায় না তাই আমিও কখনো প্রত্যাশা করি না। মৃত্যুর পরেও আমার সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক এমন প্রত্যাশাও করিনা। তবে এই লেখাটি লিখে রেখেছি যাতে আমার অবর্তমানে যেন এই
ঐতিহ্য দেওয়ার কৃতজ্ঞতা ভুলে না যায়। আমার নিজের স্থান থেকে যতটুকু সম্ভব শিল্প সাধনা করার চেষ্টা করি নবীন প্রজন্মকে বুঝাবার চেষ্টা করি। আগেকার মানুষরা কতটা সুন্দর ভাবে নিঃস্বার্থভাবে জীবন যাপন করেছেন। যদি খুলনা আর্ট একাডেমির কোন সুধীজন তার সংরক্ষিত ঐতিহ্য তুলে দিতে চান অবশ্যই আমাদের জানাবেন এবং খুলনা আর্ট একাডেমির সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার সুযোগ করে দিবেন এমন প্রত্যাশা করেন খুলনা আর্ট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস।
তারিখঃ২৯-১২-২০২৪