লেখিকা: ফারজানা ফাউজিয়া মুগ্ধতা
অষ্টম শ্রেণিতে পড়া লিসা স্কুলে যেয়ে তার শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করার সময় শুনতে পেল, তার সহপাঠী প্রিয়াশা মোহনাকে বলছে,
” আরে লিসা তো একটা অটিস্টিক। দেখিস না, কেমন চুপচাপ থাকে। কারো সাথে তেমন কথাও বলে না। খালি সারাক্ষণ কী সব আঁকাআঁকি নিয়ে পড়ে থাকে।”
লিসা পিছনে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল। আর শুনতে পারলো না সে। তার দু-চোখ থেকে ঝর্ণার ন্যায় অবিরাম অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়তে লাগলো। দুই চোখ ভর্তি জল নিয়ে একটা ফাঁকা ব্রেঞ্চে গিয়ে বসলো লিসা। ক্লাস শুরু হতে এখনো দশ মিনিট বাকি আছে। গভীর ভাবনার সাগর ডুবে গেল সে। লিসার ভাবনা, “আমি তো জানি, আমি খুবই চুপচাপ থাকি, এই বৈশিষ্ট্যটাকে কী নিরবতাপ্রেমী বলা যায় না? বড় বড় চিত্রশিল্পীরাও মৌনতা অবলম্বন করেই আঁকতেন। তাঁরা গভীর মনোযোগ দিয়ে ছবি আঁকতেন। এজন্যই তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় কাল্পনিক দৃশ্যকে বাস্তব মনে হয়। তাঁদের পথ অনুসরণ করে হাঁটবো আমিও। তাহলে একদিন আমিও বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হবো।”
হঠাৎ একটা চিন্তা মাথায় আসে লিসার। সাথে সাথে দুচোখের পানি মুছে ফেলে লিসা। সে তো করে নি কোনো অন্যায়। তবে কারো জন্য সে কেন ফেলবে অশ্রু!
লিসার চিন্তা: “চুপচাপ বসে থেকে চিত্র অঙ্কন করা যদি অটিস্টিক হয়, তাহলে মানলাম আমি অটিস্টিক। তবে ওরা যে কথাগুলো একজন অটিস্টিককে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো, ওরা কী আদৌ সুস্থ?”
[বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমাদের আশেপাশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিছু শিশু আছে। আমরা জানি, তারা অন্যদের থেকে আলাদা। আমাদের আশেপাশেই মানসিকভাবে অসুস্থ অনেকেই আছে, যারা বিশেষ প্রতিভার অধিকারী। তারা জানেও না, তারা অন্যদের থেকে আলাদা। তারা স্বাভাবিক মানুষের মতো প্রায় সবকিছুই করে। একটু আলাদা জন্য মাইক নিয়ে গিয়ে কী তাদেরকে জানানো লাগবে? তাদেরকে তাদের মতোই থাকতে দিন। এই সুন্দর পৃথিবীতে তাদেরও অধিকার আছে, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার।]