বসন্তের মিঠেকড়া বিকেলের রোদ,ঝলমল করছে বৃক্ষের কচি সবুজ পাতায়।পাতাগুলো এখনো পূর্ণতা পায়নি। রঙগুলো দারুণ সুশোভিত। আম্র মুকুলের ছোট ছোট আমের গুটি চেয়ে আছে গোধূলির আলোয়। দেখতে দেখতেই সেগুলো বড় হয়ে যাবে।। ইশারা ঘুরে ঘুরে প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করে। কবে যে এগুলো লবণ মরিচ দিয়ে মেখে খেতে পারবে সেটাই মনেমনে ভাবে।
আম্রতলায় বাঁধানো বেদীতে বসে কতো যে ভাবনা তার অন্তর ছুঁয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। তার ভাবনার ছেদ পড়লো সামনে রাস্তার মোড়ে কিছু লোকের হৈচৈ শব্দে। এখানে বসেই বুঝতে চেষ্টা করলো ঘটনার বিষয়টা।কিছুই বোঝা গেলোনা। হঠাৎ একটি লোক ওখান থেকে এদিকে আসছে। যাক ভালোই হয়েছে,তার কাছ থেকে জানা যাবে। লোকটিকে ডাকলো ইশারা।----
এই শুনুন, ওখানে কী হয়েছে? চোর ধরা পড়েছে।গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে। শুনে আঁতকে উঠলো ইশারা! বলেন কী? কে? আমি চিনিনা বললো লোকটা। ঠিক আছে যান বলে ইশারা চলে গেলো ঘটনা স্থলে। ইশারা অবাক! এ দেখছি সাদিয়ার মা! সে তো খুবই ভালো মানুষ! একে বেঁধে রেখেছে কে? পঞ্চাশোর্ধ এক লোক এসে বললো আমি। ইশারা বললো কেনো? তার কী অপরাধ? লোকটা বললো, সে চুরি করেছে। ইশারা বললো, বলেন কী? আপনার মাথা ঠিক আছে? আমি একে চিনি, এ কখনো চুরি করতে পারে না! একে ছেড়ে দিন।
লোকটি বিরক্তি নিয়ে বললো, আপনি বললে তো আর হবেনা।সে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। একহাত বাঁধা আরেক হাতে কাপড় দিয়ে
বার বার মুখ ঢাকছে।তার ছোট্ট মেয়েটা পাশে বসে কাঁদছে।
ইশারার খুব খারাপ লাগছে এই মহিলা ও তার বাচ্চাটির জন্য। কী দোষ এই বাচ্চাটির? তার বাবা তাদের ফেলে রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আদর ভালোবাসা দূরে থাক, খাওয়া পড়ার কোনো খোঁজ খবরই নেয় না।দরিদ্র বাবার মেয়ে। তবুও সাধ্যমতো মেয়েকে সাজিয়ে দিয়েছিলো শ্বশুর বাড়িতে। তবুও স্বামীর মন ভরাতে পারেনি দরিদ্র পিতা।পরপারে চলে গেলেন।ভাইয়ের বোঝা হয়ে এখন শুধু গঞ্জনার শিকার হচ্ছে। অগত্যা সে অন্যের বাড়ি কাজ করে পেটের ভাত যোগার করে।বাড়িতে বিধবা মা। ভাই ভাবীর গঞ্জনাও সইতে হয় তাকে।অতিরিক্ত গরমে ফ্যানটা ছাড়লেও বিদ্যুৎ বিলের খোটা পর্যন্ত সইতে হয় তাকে। তাই বলে সে চুরি করেছে এটা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য নয়।সে কোনো একটা উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পেরে মেয়েটিকে ফাঁসাতে চাইছে। সেটা বুঝতে দেরি হলোনা ইশারার।
মেয়েটির কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো, আসলে কী ঘটেছে? তার চোখে মুখে কান্নার দাগ। কাছে যেতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, আফা,আমি কেমনে কমু সত্য কথা! আপনের কী বিশ্বাস অয় আমি চুরি করছি? আমি চুরি করবের পারি?
তাহলে কী ঘটেছিলো বুঝতে দেরি হলোনা ইশারার। সমাজের মানুষের কাছে কোনো মূল্য নেই সাদিয়ার মার মতো মানুষের কথার। যারা মূল্য দেয় তারাও মুখ খুলতে সাহস পায়না। ওই সমস্ত মুখোশধারী লোকের সামনে, যারা অত্যাচারী, জুলুম করে বেড়াচ্ছে পয়সার দাপটে।আই এ্যাম এ জাহেলিয়ার মতো জোড় যার মুল্লুক তার এদের কাছে।এরা যে কোনো নারীর প্রতি জবরদস্তি খাটাতে পারে।বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দিতে পারে।একজন ভালো মানুষকে চোরও বানাতে পারে!!