মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ
দিনটা ছিল শুক্রবার, সরকারি ছুটির দিন। এদিনে কোন ডাক্তার পাওয়া যাবে না। তবুও দেখতে গিয়েছিলাম মেডিকেলে। কোন ডাক্তারের দেখা পেলাম না। হতাশ হয়ে বাড়ির পথে ফিরছিলাম। পথে একজন ভদ্র লোকের সঙ্গে দেখা। লোকটি নিজ থেকে এসে আমার সঙ্গে কথা বললেন। তার সঙ্গে খুব ভালো মুহূর্ত কাটাচ্ছিলাম। অনেক আলাপ তার সঙ্গে হলো। হঠাৎ করেই বুকে ব্যথা শুরু হয়। আমি সেখানে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাই। লোকটি আমাকে চিকিৎসা করে ভালো করে তুললেন। তার সঙ্গে কথা বলে একটু বুঝতে পারিনি যে সে একজন ডাক্তার। সেও আমাকে বলেনি যে সে একজন বড়ো ডাক্তার। শহরে এসে ছিলাম ডাক্তার দেখাতে বেশ কিছুদিন যাবৎ বুকে ব্যথা করছে। বাড়ি ফেরার পথে যে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে তা ভাবতেও পারিনি। বেশ কিছুক্ষণ বেহুঁশ ছিলাম। ডাক্তার সাহেব আমার পাশে বসে ছিলেন। হুঁশ ফেরার পর তার দিকে অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। যাকে খুঁজতে শহরে এসে ছিলাম। সেই ডাক্তার আমার পাশে বসে ছিল। সে বলল, এখন কেমন লাগছে?
: এখন অনেক ভালো লাগছে। তাকে জিগ্যেস করলাম, আপনি কি মেডিকেলের ডাক্তার?
: হ্যাঁ! আমি মেডিকেলের ডাক্তার। আপনি বুঝি ডাক্তার দেখাতে মেডিকেলে এসেছিলেন?
: হ্যাঁ! অনেক দিন যাবৎ বুকে ব্যথা অনুভব করছিলাম। সে একটি কাগজ বের করে সেখানে অনেক গুলো ওষুধের নাম লিখে দিলো। বলল, এই ওষুধ গুলো সময় মতো খাবেন। সময় মতো না হলে সমস্যা হতে পারে। আবার এক সপ্তাহ পর আমার সাথে দেখা করবেন। এই বলে সে চলে যাচ্ছিল। ডাক্তার আপনার ফ্রি নিবে না।
: না, আমার ফ্রি লাগবে না। সবার কাছ থেকে ফ্রি নিনা। কিছু চিকিৎসা ভালোবাসার বিনিময়ে করি।
একটি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন। হঠাৎ মনে পড়ল, আমি তো ডাক্তারের নাম জানি না। এক সপ্তাহ পর কীভাবে তাকে দেখাব!? তাকে খুঁজে পাবোই বা কী করে? মেডিকেলে তো একজন দুইজন ডাক্তার না। দেখো তো কি মুশকিল? এক সপ্তাহ পর আবার মেডিকেল আসলাম সেই ডাক্তারকে দেখাতে। মেডিকেলে এসে তাকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেছি। খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ির পথে হাঁটছি। হঠাৎ পেছন থেকে অপরিচিত একজন লোক আমাকে ডাক দিল। আমি ঘুরে তাকালাম। সে হাঁপাতে হাঁপাতে আমার কাছে এসে বলল, আপনি হার্টের ডাক্তার দেখাতে এসেছেন না। আপনাকে ডাক্তার ডাকছেন। আমি অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কে?
: আমি ডাক্তারের সহকারী।
সে আমাকে ডাক্তারের রুমে নিয়ে গেল। ডাক্তার আমাকে দেখে মুচকি হেসে বললেন, বসেন। চলে যাচ্ছিলেন কেন?
: না, আপনাকে খুঁজে না পেয়ে চলে যাচ্ছি। সেদিন আপনার নাম না জানার কারণে। আজ পুরো মেডিকেল ঘুরেছি।
ডাক্তার বললেন, আমি আপনাকে জানালা দিয়ে দেখেছি। তারপর আমার সহকারীকে পাঠিয়েছি আপনাকে ডাকতে। তো এখন কী অবস্থা আপনার। শরীর সুস্থ আছে তো। আমাকে চেকআপ করে আবার নতুন কিছু ওষুধের নাম লিখে দিলেন। বললেন, ঠিক সময় মতো ওষুধ গুলো খাবেন। ইনশাআল্লাহ! আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। এবারও সে আমার কাছ থেকে কোন ফ্রি নিলেন না। তিনি বললেন, এমন কিছু ভালোবাসা আছে যার কোন বিনিময় হয় না। এমন যদি হতো আমাদের দেশের ডাক্তারের চিত্র। তাহলে কতই না ভালো হতো। মানুষ ডাক্তারকে বিশ্বাস করে সেই তাকে সুস্থ করে দিতে পারে। কিন্তু ডাক্তার করে কসাইয়ের কাজ। এটা তাদের কাছ থেকে কাম্য নয়।
মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ,
নবীণ আলেম ও লেখক
কাপ্তাই রাস্তার মাথা, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম বাংলাদেশ।