শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন

ভালবাসার মাঝে অপূর্ণতার গল্প

Coder Boss
  • Update Time : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ২৫ Time View

কলমে: রোজিনা খাতুন

প্রাথমিক পার হয়ে বছর দুয়েক হলো মাধ্যমিকে পড়ি।
কামিজের উপর ওড়নাটা ঠিক করে পরতে হয় এটা না বুঝা আমি,ওড়না দিয়ে কোমরে গিট্রু বেঁধেই দৌড়াদৌড়ি করি সারা পাড়া।

গাছের মগডালে পাখির বাসা খুঁজে বাচ্চা ধরা,নৌকায় চড়ে শাপলা তুলে মালা গাঁথা।কি সাদামাটা জীবন ছিলো আমার।কতটা অবুঝ ছিলাম আমি। সেই বোকা মেয়েটার মনেই ভালবাসার বীজ বুনেছিলে তুমি নামের মানুষটি।

ভালবাসা কি ঠিক সেটা একদমই বুঝতাম না।তোমার রঙ বেরঙের চিঠি গুলো নাড়াচাড়া করে রেখে দিতাম,ভালো করে পড়তামও না।শুধু ভাবতাম কি এতো সব লিখে রাখছে পাতা ভরে।একটা একটা করে চিঠি জমাতে জমাতে জ্যামিতি বক্স আর পেন্সিল বক্স ভরে গেলো।

শেষের মাত্র একটা চিঠি আমি ভয়ে আর কৌতূহল হয়ে পড়েছিলাম,চিঠিতে রক্ত দেখে আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।নিজের আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে আমাকে তুমি প্রেম নিবেদন করেছিলে।

তোমার আঙুলের ব্যান্ডেজ আমি নিজের চোখে দেখেছি।আমাকে ঘিরে তোমার মনে কত আবেগ কত অনুভূতি কত প্রেম কত টান কতটা মায়া। অসহায়ের মতো প্রতিটা কথা চিঠির মাঝে তুলে ধরেছো।চিঠির কথা গুলো পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে এলো।কেনো চোখে পানি আসলো বুঝতে পারলাম না।

আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।আমি ঠিক বুঝতে পারি না তোমাকে ভালবাসি কি না।হ্যা আর না এর মধ্যে আটকে যায় আমি।তুমি বার বার আমাকে দেখতে চোখের সামনে আসো এটা খানিকটা বিরক্তিকর হলেও চোখের আড়ালে গেলে শূন্যতায় ভুগি খারাপ লাগে মনের মধ্যে একটা বিনি সুতোর টান অনুভব করি এটা ঠিক বুঝি।

তুমি আমাকে দিনভর নজরবন্দি করে রাখো, আমার গতিবিধি নোটিশ করো আমাকে আগলে রাখো এর সব অর্থ আমি বুঝি।শুধু বুঝতে পারি না আমি তোমাকে প্রকৃত ভালবাসি নাকি এটা আমার মোহ।

এভাবে কেটে যায় তিনবছর।দোটানায় জীবন। তখনও তোমাকে সরাসরি বলিনি ভালবাসি।আবার এটাও বলিনি ভালবাসি না।শুধু বলেছিলাম তোমাকে ভালবাসি কি না আজও সঠিক ভাবে বুঝিনি।

তুমি কিন্তু বার বার বলতে আমাকে তুমি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসো,সেটা তুমি বুঝতে পারো না,আমি বুঝি।

বিশ্বাস করো তোমাকে আমি ভালবাসি এটা বুঝেছি জীবনের বহু বছর পরে। যখন তুমি নামে মানুষটি আমার অতীত।
যে মানুষটাকে ঘিরে সারাক্ষণ মনের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করে,নিশ্বাস নিতে গেলে গলার নিচে আটকে আসে,বুকে ব্যথা করে দম বন্ধ হয়ে আসে।

আজ জীবনের এতোটা বছর পরে যখন তোমাকে নিয়ে লিখতে বসলাম,তখন তুমি আমার প্রাক্তন।

তুমি দুইবার আমার জীবনে ফিরে এসেছিলে
প্রথম ৮বছর পরে ফিরে আমাকে বলেছিলে
আমার ভালোর জন্যই ছেড়ে গেছো
যদি কখনও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারো তবেই ফিরে আসবে,আমাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে।

আমি তোমার পায়ে পড়ে পাগলের মতো কেঁদেছিলাম,
আমি তোমাকে নিয়ে রাস্তায় গাছ তলায় থাকবো
তোমাকে পেলে সুখী হবো।
তুমি আমাকে অন্য কারো কাছে সুখি হতে বলে গেলে
তুমি আমার সুখ চাইলে কিন্তু আমাকেই চাইলে না।

কি অদ্ভুত তুমি,আমি না ঠিক বুঝতে পারি না তোমাকে।
শেষ একটা কথা বলেছিলে,নিজের পায়ে দাঁড়াতে যতদিন সময় লাগবে এর মধ্যে দুইটা সন্তানের মা হলেও তুমি আমাকে মেনে নেবে।

কথা গুলো কত সহজেই বলে গেলে কিন্তু বুঝলেনা জীবন ছেলে খেলা না।
চাইলেই সব সময় সব সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।

১৬বছর পর হঠাৎ করেই দ্বিতীয় বার যখন ফিরে এলে তখন আমার অপূর্ণতার সংসার,
আর তোমার সংসার কানায় কানায় পূর্ণ সুখের জোয়ারে।

নতুন করে আবার আশা দিলে একছাদের নিচে থাকবো দুজন, নিশ্চিন্তে কাটাবো বাকি জীবন।
কি জীবন আমার।
তোমার প্রতি সব অভিযোগ এক নিমিষেই ভুলে গেলাম।

কিন্তু বিশ্বাস করো যাকে নিয়ে ঘর বেঁধেছি, একছাদের নিচে পাশাপাশি বালিশে দিনের শেষে যার সাথে রাত কাটাতে হয়, যার জন্য রান্না করতে হয়, যার জন্য নিজেকে বউ হিসেবে সমাজে পরিচয় দিতে হয় তার জন্য কি একটুও মায়া নেই।তা কিন্তু না।এতো বছরে তার প্রতিও কিন্ত মায়া জমে গেছে।

আর ভুলে গেলে চলবে না তুমিও কিন্তু সন্তানের বাবা।সন্তানরা বড় হয়ে বাবাকে কেমন চোখে দেখবে একবার ভেবেছো?না হয় ভালো প্রেমিক হতে পারো নি কিন্তু একজন ভালো বাবা আর ভালো স্বামী হয়ে থেকো।

এখানেই আমাদের ভালবাসা বন্দি হয়ে থাকুক।আমরা শুধু অন্যের খুশি হয়ে বেঁচে থাকি।বেঁচে থাকুক ভালবাসা বেঁচে থাকুক প্রার্থনায়।

জানতো জীবনে বয়সের সাথে সাথে মানুষের কত পরিবর্তন এটাকে ঠিক ছলনা বলা যায় না, যায় না বলা ঠকানো।দায়িত্ব বোধের জায়গা থেকে অনেক সময় ফিরে আসতে হয় আবেগকে বিসর্জন দিয়ে।অন্যের সুখের জন্য নিজের সুখ বলিদান করতে হয়।কারো অভিশাপ অভিযোগ নিয়ে সুখি হওয়া যায় না।

একটা কথা কিন্তু সত্যি সুখের মুহূর্তে তোমাকে ভীষণ মনে পড়ে, মনে হয় তুমি থাকলে কত ভালো হতো দুজনে খুশিটুকু ভাগ করে নিতাম।
আর যখন কষ্টে থাকি তখন দিশেহারা হয়ে পড়ি আর ভাবি তুমি পাশে নেই ভালোই হয়েছে আমার চোখের পানি সহ্য করতে পারতে না।

আমাকে সুখি করতে জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য কত কিছু করলে।আজ ভালো চাকরি,নিজের নাম যশ সব পেয়েছো শুধু আমাকেই পেলে না তবুও বলবো ভালো থেকো প্রিয়তম,সুখে থেকো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102