মোঃ আসাদুজ্জামান
---------------------
গণমাধ্যমের বদৌলতে শুনছি এবং দেখছি ছাত্রদের "জনশক্তি"নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হচ্ছে।প্রথমেই তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
এখন প্রশ্ন হলো ছাত্র বলতে কি বুঝায় ?
খুব সহজ উত্তর যাদের পড়াশুনা বা পরীক্ষা বা রেজাল্ট এখনো শেষ হয় নি।
এমনকি পড়াশুনা শেষ চাকুরি বা কাজের জন্য অপেক্ষমান তারা কিন্তু প্রকৃত অর্থে ছাত্র না।
তাহলে ধরে নেয়া যায় ছাত্র বাদে কাজের জন্য বা চাকুরির জন্য অপেক্ষমান অছাত্রগণ দ্বারা নতুন দল গঠিত হতে যাচ্ছে। আর যদি ছাত্ররা পড়াশুনার মাঝপথে রাজনৈতিক দল গঠনে সম্পৃক্ত হয় তাহলে তাদের ছাত্র বলা কি সমীচীন হবে ?
আমার ধারনা তাদের নেতা/কর্মী বলাই সঠিক।
আমরা যদি পিছনে ফিরে তাকাই পঁঞ্চাশের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত দেখা যায় বিশেষ ইস্যু নিয়ে ছাত্ররা মিছিল মিটিং করেছে,,আন্দোলন করেছে,গুলি খেয়েছে কিন্তু সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করে নি।বরং রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন বা শাখা সংগঠন হিসেবে পরিচিতি ছিল।
২৪ এর গণঅভ্যুত্থান নি:সন্দেহে পূর্বের গুলোর তুলনায় বহুলাংশে ব্যাতিক্রম।এই গণঅভ্যুত্থানে স্কুল কলেজের কচি অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরাও অংশগ্রহণ করেছিল। শেষ পর্যায়ে আগষ্টের ১-৫ তারিখে সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমেছিল।ঢাকার হেন রাস্তা নেই যেখানে মানুষের ঢল ছিল না।অভূতপূর্ব আন্দোলন !
আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় ছোট হলেও গুলি করতে দেখেছি,থরে থরে লাশ দেখেছি ,ব্যায়নট চার্জে মানুষ হত্যা দেখেছি রক্তঝড়া লাশ রাস্তায় যেতে দেখেছি।ঘর বাড়িতে আগুন লাগাতে দেখেছি। বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র নিভৃত পল্লীতে আশ্রয় নিতে দেখেছি। তবে ওরা ছিল পাকিস্তানি মিলিটারি বা রাজাকার আলবদর আল-শামস ইত্যাদি।
কিন্তু পার্থক্য হলো এবার আমরা সবাই এক জাতিসত্তা একভাষা হওয়া সত্বেও গুলি খেয়েছে ব্রাসফায়ার হয়েছে শতশত মানুষ মারা গেছে শুধুমাত্র একজনের মসনদ ও ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্যে। আহ্ কি বিকৃত বিভৎস অভিলাষ !
হ্যাঁ ,গণতন্ত্রে সকলের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। ছাত্ররা ইচ্ছে করলে দল গঠন করতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো দলগঠন,পরিচালনা,কর্মসূচি পালন,অফিস ভাড়া,আনুষাঙ্গিক খরচ ইত্যাদি কিভাবে সংঘটিত হবে তা জনগণকে তো খোলাসা করে বলতে হবে।কারণ সবাই জানে ছাত্রদের তো তেমন কোন আয় নেই।
আবার মানুষ এটাও ভাবে তাহলে তারা কি কিংস পার্টি ?
ওদিকে ড. ইউনুস সাহেব তো বলেছেন তিনি কোনো পার্টি গঠন করবেন না বা তাঁর কোনো রাজনৈতিক ইচ্ছা অভিলাষ নেই।
নিঃসন্দেহে আন্দোলনরত ছাত্রদের উদ্দেশ্য মহৎ।তারা বৈষম্যহীন সমাজ চায়,সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার চায়।গণহত্যার বিচার চায়।নিহতদের পরিবারের পূনর্বাসন এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যাবস্থা চায়।
এসব যথাযথ হচ্ছে না বলেই বিকল্প চিন্তা আসছে।শুধু তাই নয় তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কি ? এটা তাদের সামনে অনেক বড় প্রশ্ন ?
প্রতিনিয়ত তাদের মনে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তারা ভাবছে ড. ইউনুস সাহেব তো উড়াল দেবেন ,,উপদেষ্ঠারাও পুরাতন বা নতুন যায়গায় ফিরে যাবেন। কিন্তু তাঁদের কি হবে ? এই প্রশ্নটির সহিত জীবন-মৃত্যুর ঠিকানা জড়িত।
আমরা মনেকরি ড. ইউনুস সাহেবের ছাত্রদেরকে এভাবে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া সঠিক হবে না।তাদের উপদেষ্টা বানানোও অনেকে সমীচীন মনে করেনি।বরং সহকারী বানানো যেতো।তাছাড়া মধ্যবয়সী অধিক কর্মক্ষম, দক্ষ ও উপযুক্ত লোকের তো দেশে অভাব ছিল না উপদেষ্টা বানানোর।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ,দ্রব্যমূল্য,আহতদর সুচিকিৎসা ,গণহত্যাকারী,ব্যাংক লুটেরা ও অর্থ পাচারকারীদের বিচার না করা পর্যন্ত কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না।বিডিআর বিদ্রোহের বিচার একটা বার্নিং ইস্যু। এর সাথে তৎকালীন সরকার প্রধান,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,বিজিবি,পুলিশ,রেব,আর্মি ,গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ ও ,'র' জড়িত বলে কথিত আছে। এই ঘটনার তদন্ত বিচার এই সরকার না করতে পারলে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সরকার করতে পারবে বলে জনগণ আস্থাবান নয়।আর রাজনৈতিক সরকারের বিচার হবে একপেশে মানুষের অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে।
যারা গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে রাতদিন মাঠঘাট প্রকম্পিত করছেন তাদেরকে এদেশের জনগণ ভালো করে চিনেন। ক্ষমতায় তাঁরাও ছিলেন। দেশবাসীকে কি উপহার দিয়েছিলেন জনগণ তা জানে।
গণতন্ত্রে অবশ্যই ফিরতে হবে।তার আগে বিচার আচারগুলো এগিয়ে একটা পর্যায় পর্যন্ত অবশ্যই নিতে হবে।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও জেনা. ওয়াকার সাহেবের নিকট জনগণের প্রত্যাশা আপনারা হুমকি-ধুমকি চোখরাঙানী এসব দূরে ঠেলে দিয়ে সাধারণ জনগণের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিন। আপনাদের কোনো ভয় নেই।দুজনে একত্রে কাজ করুন।মানুষ আপনাদের পাশে আছে।
ইনশাআল্লাহ কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবেই।
লেখকঃ মোঃ আসাদুজ্জামান
সাবেক কর কমিশনার ও
আহবায়ক-কাঙ্খিত বাংলাদেশ।