স্টাফ রিপোর্টার:
ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতার পরে গঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন কমিশনে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রস্তাবিত তালিকায়, গণ হত্যার আসামি সাবেক ছাত্রলীগের নেত্রী ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নিড়বাচমের কুশীলব
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলীর নসম দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন এর ছাত্র জনতা সহ অনেকেই।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের পর বিপ্লবী সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগ করে আবারও আলোচনায় এসেছেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী। ২ জন বিতর্কিত উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ার কুশীলবরাও এতে কলকাঠি নাড়ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পলাতক সরকারের প্রভুদেশের গোয়েন্দা সংস্থা বড় বিনিয়োগ সম্পন্ন করেছে বলে শুনা যাচ্ছে।
জেসমিন টুলি ইতিমধ্যে কিছুটা সফলহয়েছেন সংস্কার কমিশনের সদস্য হয়ে। সে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের নানা মহলে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হলের সাবেক এই ছাত্রলীগ নেত্রী। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন ছাড়াও রাজনৈতিক অঙ্গনে এক আলোচিত নাম জেসমিন টুলী। একসময় রোকেয়া হলের তুখোড় ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে মাঠে সক্রিয় ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদের নিরপেক্ষ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন উপসচিব জেসমিন টুলীর বিরুদ্ধে।
ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, বগুড়ার হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, মেজর মান্নানসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ভৌতিক ভোটার তালিকা এবং ভোটকেন্দ্রের নথি তিনি গায়েব করে দেন বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ বিএনপির। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশে সেগুলো জেসমিন টুলীর অফিস রুমের বারান্দার ড্রয়ার থেকে উদ্ধার করা হয়। এমনকি এহসানুল হক মিলনের ক্লাসমেট বলে বিভিন্ন সময় পরিচয় দেওয়া এই জেসমিন টুলীই মিলনের আমেরিকার নাগরিকত্ব পরিত্যাগ পত্রের ফাইলটি গায়েব করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৫ সালে বিএনপির সময়ে নিয়োগকৃত ৮৫ জন উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বিএনপি কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এর পেছনে পরোক্ষভাবে কাজ করেন ইসির তৎকালীন এই কর্মকর্তা। ২০০৮ সালে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পরাজয়ের জন্য জেসমিন টুলীর প্ররোচনায় তাদের নির্বাচনী এলাকাগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ পুনর্বিন্যাসকে দায়ী করা হয়।
২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশগ্রহণ না করে, সেজন্য নির্বাচনী শিডিউল পেছানোর সুযোগ থাকার পরও তা না করে একতরফা নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় পার্টি প্রত্যাহারপত্র জমা দিলেও নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে রিটার্নিং অফিসারদের তা গ্রহণ না করতে এই জেসমিন টুলী নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বড় কৃতিত্ব দেওয়া হয় এই কর্মকর্তাকে। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সিনিয়রকে পাশ কাটিয়ে তার পদোন্নতি দেওয়ার ব্যবস্থা করে। চাকরিজীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেসমিন টুলী আওয়ামী লীগকে সহযোগিতার মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা এক মামলায় ৫৩ জন সাবেক সচিবকে আসামি করা হয়েছে। সেই মালার অন্যতম আসামী জেসমিন টুলি। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সাবেক ওই সচিবেরা ‘ভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট’। জেসমিন টুলি সহ
সাবেক ওই সচিবদের ‘ফ্যাসিবাদের সহযোগী, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা’ হিসেবে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৯ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলাটি করেছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা মোহাম্মদ জামান হোসেন খান। এখন তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। তাঁর করা মামলায় মোট ১৯৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। সুত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো।
ইসির একাধিক সূত্র জানায়, অবসর গ্রহণের পর জেসমিন টুলি নতুনভাবে খোলস পাল্টে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সক্রিয় রয়েছেন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনে সম্পৃক্ত হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি। এ চেষ্টা সফল হলে তা সরকার ও ছাত্র-জনতার বিপ্লবের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা।
বৈষম্য বিরোধী চেতনার কবর রচনা করতে তৎপরতা রুখতে হলে জেগে থাকতে হবে তা না হলে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের মতো ঢুকে গেলে মিছিল ও প্রতিবাদ করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।