কামরুল হাসান জুয়েল
নরসিংদী সদর উপজেলা প্রতিনিধি:
অগ্রহায়ণের শুরুতেই কৃষকের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব!
নরসিংদী : মাঠের পাকা ধানের সোঁদা গন্ধে এখন আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে কৃষকের মনে। ভোরের কুয়াশা মাখা রোদের পরশ পেতেই হিমেল হাওয়ায় দোল খেয়ে উঠছে স্বর্ণালি ধানের শীষ।
ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো যেন মিতালি করেছে সোনাঝরা ধানের সঙ্গে। সূর্যের আলো তার গায়ে পড়তেই মুক্তো দানার মতো দ্যুতি ছড়াচ্ছে মাঠজুড়ে।
এমন আবহেই দুয়ারে হাজির হয়েছে অগ্রহায়ণ।
আর ঋতুরানী হেমন্ত মানেই বাংলার প্রকৃতিতে নবান্ন উৎসবের সময়।
‘অগ্র’ ও ‘হায়ণ’ এ দুই অংশের অর্থ হচ্ছে ‘ধান’ ও ‘কাটার মওসুম’ বা ‘বছর’। মুঘল সম্রাট জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সেই থেকে এ মাসজুড়েই উৎসবমুখর থাকে কৃষকের মাঠ ও বাড়ির উঠোন। ধান কেটে গোলায় ভরতে ব্যস্ত থাকেন কৃষাণ-কৃষাণী। নতুন ধানের পিঠা-পুলি আর পায়েস রান্না নিয়ে ঘরে ঘরে শুরু হয় আবহমান বাংলার নবান্ন উৎসব।
অগ্রহায়ণের শুরুতেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে- নরসিংদীতে। প্রথম দিন থেকেই একযোগে শুরু হয়েছে এ অঞ্চলের ধান কাটার উৎসব। হিম শীতল আবহাওয়ায় কোনো না কোনো মাঠে বর্ণিল আয়োজনে চলছে ধান কাটার মহোৎসব। ব্যতিক্রম হয়নি
নরসিংদী সদর উপজেলা আমদিয়া ইউনিয়ন, পাচদোনা ইউনিয়ন, শিলমান্দি ইউনিয়ন, মেহেরপাড়া ইউনিয়ন, নুরালাপুর ইউনিয়ন ও ডাঙ্গা ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন উপজেলায়ও। অগ্রহায়ণের প্রথম দিন থেকে একযোগে ধান কাটা শুরু হয়েছে।
নরসিংদী সদর উপজেলার প্রত্যন্ত ভূইয়ম গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবারের মত এবারো সেখানে ধান কাটা উপলক্ষে বর্ণিল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এলাকার স্বনামধন্য কৃষি উদ্যোক্তা কামরুল হাসান জুয়েল আয়োজন করেছিলেন আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের।
এই গ্রামের কৃষকরা তাদের নিজ সংস্কৃতিতে নেচে-গেয়ে ধান কাটা মৌসুমের সূচনা করেন। পুরুষদের ধান কাটার প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
ভূইয়মের মাঠে মাথায় মাথোইল ও হাতে কাচি নিয়ে ধান কাটতে নেমে পড়েন। ধান কাটার পর শুরু হয় মাড়াই। এ সময় এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাঠ ভরা ফসল দেখে কৃষকের চোখে-মুখে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল। সোনালি ফসল গোলায় তুলতে কারোরই যেন ফুরসত নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শেষ পর্যন্ত ফলন ভালোই হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।