আশিকুর রহমান :-
আওয়ামী লীগ ও হাসিনা সরকারের আমলে গত কয়েক বছরে যুবলীগ নেতা থেকে শতকোটি টাকার মালিক বনে যান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা হারিজুল ওরফে খুদটাই। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় শ্রমিক হিসেবে দিন মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতেন তিনি। অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য কখনো কখনো আবার ইট ভাটায় কাজ করতেন। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় বদলে যায় ভাগ্যের চাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের খৈইসার পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হারিজুল (৩৫) ওরফে খুূদটাই। কিশোর বয়স থেকেই দূর্ধর্ষ হওয়ায় মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সে সুবাদে অল্পসময়ে বিবিসি নামে ইট ভাটা সহ একাধিক ব্যবসার মালিক হোন তিনি। রয়েছে রাজধানী ঢাকা সহ নারায়ণগঞ্জে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। চড়েন দামী গাড়িতে। অস্ত্র, বিস্ফোরক, চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টা, মাদক, দখল ও স্থানীয় বিএনপির অফিসে অগ্নিসংযোগসহ রূপগঞ্জ ও কালীগঞ্জ থানায় রয়েছে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা। আর এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি বর্তমানে রয়েছেন আত্মগোপনে। আর এসবের মদদদাতা হচ্ছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর ওরফে জাহাঙ্গীর মাস্টার। তার আশীর্বাদে পিছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি তাকে। গড়ে তুলেন নিজস্ব সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। এই বাহিনী দিয়ে এলাকায় মাটির ব্যবসা, ভূমিদস্যু, জোরপূর্বক কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা, শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ভলগেট হতে চাঁদাবাজি, জমি দখল করা ছিলো নিয়মিত তার কাজ।সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হাসিনা সরকারের আমলে দলের ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের আশীর্বাদ পুষ্ট ও বিশ্বস্ত হাতিয়ার হওয়ার সুবাদে হারিজুল অল্পসময়ে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নে অনৈতিক ভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে গড়ে তুলেন সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। নাম কুড়িয়েছেন হারিজুল বাহিনী। আর এ বাহিনীর মাধ্যমে এলাকা দখলে নিয়ে মাদক ব্যবসা সহ কায়েম করেন ত্রাশের রামরাজত্ব। জমি দখল, চাঁদাবাজী, মাদক ব্যবসা, অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটি বিক্রি ও নদী থেকে বালু ভরাটের নামে অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এ যুবলীগ নেতা। বিভিন্ন থানায় রয়েছে তার নামে একাধিক অভিযোগ এবং মামলা।
এলাকাবাসী জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাস্টারের ক্যাডার ও যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। এ পরিচয়ে এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন হারিজুল। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে আমরা এলাকায় ঠিকমত চলাফেরাও করতে পারি না। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই সংঘবদ্ধ হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে হামলা চালাতো। আমরা গ্রামবাসী তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেয়া হোক। ভুক্তভোগী একব্যক্তি প্রতিনিধিকে বলেন, আমার বাড়ির জায়গার বালু ভরাটের কথা বলে হারিজুল টাকা নিয়ে সে টাকা আত্মসাৎ করেছে। টাকা চাইলে হুমকি দেয়। পরে উপায় না পেয়ে জায়গাটি আমি অন্য লোক দিয়ে মাটি ভরাট করতে গেলেও সেখানে হারিজুল তার বাহিনী বাধা দেয় এবং চাঁদা দাবী করে। এক পর্যায় এ নিয়ে কথা কাটি হলে আমাদের পরিবারের উপর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, মাদক বিক্রির মাধ্যমে অল্পসময়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যান হারিজুল। তার এই অবৈধ অর্থ দিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন। একে একে প্রতিষ্ঠা করেন ইট ভাটা সহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার বিরুদ্ধে রয়েছে রূপগঞ্জ ও কালিগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা। এসব মামলাগুলো হয়েছে গত হাসিনা সরকারের আমলে। আর এসব মামলা মাথায় নিয়েই তিনি বিগত আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেড়িয়েছেন। এত অপকর্মের হোতা হয়ে তিনি বর্তমান প্রশাসনের নাকের ডগায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।