পরিমল বিশ্বাস, বাঘারপাড়া (যশোর) সংবাদদাতাঃ
প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। ভোরের কুয়াশায় শিশির বিন্দু গ্রামীণ জনপদে জানান দিচ্ছে শীত আসছে। শীত আসার আগেই যশোরের বাঘারপাড়ায় শুরু হয়ে গেছে খেজুর গাছ কাটা। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে, তা থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু গুড়। যা শীতের অন্যতম অনুষঙ্গ পিঠা ও পায়েস তৈরির অপরিহার্য উপাদান। ইতোমধ্যেই খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাঘারপাড়ার গাছিরা।
শীতের আমেজ শুরু না হতেই খেজুর গাছ প্রস্তুতিতে গাছের শাখা-প্রশাখা ও আগাছা কেটে সাফ করে ও গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বাঘারপাড়ার গাছিরা। এরপর শুরু হবে গাছ থেকে রস সংগ্রহ, আর তা থেকে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরার খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে।
খেজুর গাছ থেকে যারা বিশেষভাবে রস সংগ্রহ করে তাদেরকে গাছি বলা হয়। শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছে। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে মোটা রশি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাছাছোলা করছেন। এতে বেশ ঝুঁকিও নিতে হয় তাদের।
মাঠের ক্ষেতের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছগুলো এ উপজেলায় অর্থনীতিতে আশীর্বাদ হয়ে আসে। শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে এ উপজেলার কয়েক শত কৃষক পরিবার। এ থেকে স্থানীয় কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হয়।
আফজাল হোসেন নামে একজন গাছি বলেন, আমাদের কাজ খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা গাছের অনেক ওপরে ওঠে ধারালো দা দিয়ে গাছ চাছি। খালি পায়ে গাছে উঠতে হয়, কখনো কখনো গাছে সাপও থাকে, তাই সতর্ক থাকতে হয় সবসময়। তবে শীত মৌসুমে রস সংগ্রহ করে আমরা বেশ ভালো আয় করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আমরা দিনরাত খেটে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। এই রস থেকে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। শীত আসার আগে গাছগুলো ভালো করে প্রস্তুত করতে হয়, যাতে রস বেশি পাওয়া যায়। কষ্ট বেশি কিন্তু যখন গুড় তৈরি হয়, তখন সেই কষ্টের ফলটা দেখতে ভালো লাগে।