রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

বাজিতপুর উপজেলার বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারা বেগমের মানবেতর জীবনযাপন

Coder Boss
  • Update Time : বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
  • ৩০ Time View

মোঃ বায়েজিদ বোস্তামী,
বিশেষ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ:

কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার নান্দিনা আলিয়াবাদে অবস্থিত সাড়ে সাত ফিট বাই আঠারো ফিট জং ধরা ভাঙ্গা টিনের একচালা একটি খুপরি ঘরে বসবাস ছিল ১৯৭১সালের নির্যাতিত বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারা বেগম নামক এক হতভাগিনীর। নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে পাকিস্তানি বাহিনীর কবল থেকে মুক্তি দিতে গিয়ে নিজেকে জ্বলতে হয়েছে বহু পরিস্থিতির সাথে এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিতে গিয়ে সর্বদা নিজের গলায় একটি গামছা ঝুলিয়ে রাখতো। সেই গামছা ঝুলিয়ে রাখার অভ্যাস টা যে এখনো ভুলেনি এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা অব্যাহত রাখতে নিদ্রাহীন কত রাত কেটেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এই মহীয়সী নারীর করুণ কাহিনী জানার মতো শোনার মতো কোনো লোক নেই। লোক নেই ৯৮ বছর বয়সী এই বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারা বেগমের খোঁজ খবর নেওয়ার মতো। তাঁর নিদারুণ নিষ্ঠুর জীবনের অতীত শুনে ও বর্তমান সময়ে নিত্যদিনের জীবন সংগ্রামের পথচলার দৃশ্য দেখলে ও দিনাতিপাতের খবর শুনলে যেকোনো পাষাণ হৃদয় কেঁদে উঠবে।

চৈত্রের তীব্র রোদ ও সামান্য বৃষ্টির হলেই চাল দিয়ে তাঁর ঘরে রোদের আলো ও পানি গড়িয়ে পড়া যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বার্ধক্যজনিত কারণে একা চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া ও টয়লেটে যেতেও বেশ অসুবিধা পোহাতে হয়। গভীর রাতে ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে শিয়াল কামড়ে দিয়ে চলে যায় তার এই নির্মম কষ্ট বর্ণনা করার ভাষা নেই। কে শুনবে তাঁর মনের আত্ম চিৎকার। অসুস্থতার যন্ত্রণা ও শারীরিক দূর্বলতা যেন এখন নিত্য সঙ্গী। ভালো-মন্দ খাওয়ার সামর্থ্য না থাকায় ও নিজে রান্না করে খাওয়ার মতো শারিরীক সক্ষমতা না থাকায় অন্যের দিকে সর্বদা চেয়ে থাকতে হয়। প্রতিবেশী কেউ কেউ মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে যায়।

বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারা বেগম ২০০৯ইং থেকে ২০১৪ইং পর্যন্ত প্রতিমাসে নিয়মিত সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতেন কিন্তু কেন জানি হঠাৎ এই মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। অসহায় বয়োবৃদ্ধ এই বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা মানসিক ভাবে আরো ভেঙে পড়েন। মেইন রোড থেকে মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে যেতে মাঝখানে রয়েছে খাল যা যাতায়াতে বড় বাঁধা।

জীবন সংগ্রামী মনোয়ারা বেগমের মানবেতর জীবনযাপন অনেকের হৃদয়ে বিঁধে যাওয়ায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এর মধ্যে বাজিতপুর নিবাসী লুৎফল গণি চঞ্চল নামে ঢাকার বিশিষ্ট পাদুকা ব্যবসায়ী মেইন রোড থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারা বেগমের বাড়ি পর্যন্ত সহজেই খাল পারাপাড় হতে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দেন। ভাঙা খুপরি ঘরের অসুবিধা থেকে মুক্তি দিতে ৯৬ হাজার টাকা ব্যয় করে একটি নতুন ঘর নির্মাণ করে দেন লুৎফল গণি চঞ্চল নামে এই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। শুধু তাই নয় চিকিৎসা সেবা বাবদ প্রতিমাসে ২৫০০ টাকা দিয়ে আসছেন। মানবতার আরেক দৃষ্টান্ত দেখান বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু শ্যামল রায়। বাজিতপুর সরারচরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্যামল রায় প্রতিমাসের বাজার খরচ চালিয়ে আসছেন। এক মুসলিম বোনের পাশে হিন্দু ভাইয়ের সহযোগিতা মনে করিয়ে দেয় সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। পাশাপাশি সরারচরের আত্ন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জনাব কাওছার আহাম্মেদ, সরকারি চাকুরীজীবি জনাব শফিকুল ইসলাম কাজল সহ স্থানীয় অনেক প্রবাসী মাঝে মাঝে সহযোগিতা করেন।

মানবতার আরেক ফেরিওয়ালা যিনি আর্থিক, অ-আর্থিক ভাবে সর্বদা সহযোগিতা নিজে করছেন এবং অন্যদের সহযোগিতা করতে বিভিন্ন দাতাদের নিকট যোগাযোগ, মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমন্বয় করে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন তিনি হচ্ছেন বাজিতপুর উপজেলার বসন্তপুর নিবাসী কালের কন্ঠ স্বনামধন্য পত্রিকার সাংবাদিক জনাব নাসরুল আনোয়ার। তারই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক নাসরুল আনোয়ার ও শ্যামল রায়ের সহযোগিতায় রোজ বুধবার ২৬ মার্চ -২৫ইং মহান স্বাধীনতা দিবসে দুপুর বেলা বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব ফারাশিদ বিন এনাম মহোদয়ের মাধ্যমে বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারা বেগমের বাড়ি পরিদর্শন করান। যার ফলস্বরূপ বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব ফারাশিদ বিন এনাম নগদ ৫ হাজার টাকা ও কিছু নিত্য খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেন। মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন বাজিতপুর উপজেলার উপজেলার নির্বাহী অফিসার। অন্যদের উৎসাহিত করবেন আর্ত মানবতার সেবায় এই সহযোগিতামূলক কার্যক্রম স্থানীয় জনগণ মনে করেন।
সর্বশেষ বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারা বেগমের চাওয়া মৃত্যুর আগে দেশের জন্য নিজের স্বাদ-আহ্লাদ বিলিয়ে দিয়ে জীবন বাজি রেখে দেশ ও দশের জন্য করে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধার সরকারি ভাবে স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সুবিধা ভোগী হওয়া। এতেই মনে হয় আত্মার শান্তি মিলবে অসহায় বীর নারী মুক্তিযোদ্ধার।
বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারা বেগমের পাশে কোনো হৃদয়বান মানবিক আর্থিক সহযোগিতা করতে চাইলে ০১৯১২-৩৭৬০৪০ বিকাশ নম্বরে যোগাযোগ করে বিকাশ করতে পারবেন। দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুক সুস্থ থাকুক পরকালে মানবতার ফেরিওয়ালা সকলেই মহান রবের নিকট থেকে উত্তম প্রদান করুক এই দোয়া করেন অসহায় ৯৮ বছর বয়সী বয়োবৃদ্ধ বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারা বেগম।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102