কলমেঃ জাসমিনা খাতুন
===============
এই যে মাটি, এই যে নদী, এই যে গাছ—
তারা কি কথা বলে?
না, তারা শুধু স্থির থাকে,
নীরবতার মন্দিরে আর্তনাদে গুমরে মরে,
ধৈর্যের শেকলে বাঁধা থাকে শতাব্দীর দীর্ঘশ্বাস।
গাছের শাখায় বাতাস বয়,
তবু কোনো অভিশাপ নয়,
পৃথিবীর বুকে ঝড়ে ঝরে পড়ে ফুল,
তবু কোনো অভিযোগ নয়।
মাটির গভীরে শিকড় ধরে থাকে আষ্টেপিষ্টে আঁকড়ে,
তবু কখনো মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নয়।
তবে কেন আমি হলাম না
একখণ্ড নির্বাক মাটি,
যে শুধু বৃষ্টি সয়ে নেয় নিস্পৃহতার গভীর অভিব্যক্তিতে?
কেনই বা হলাম না একা দাঁড়িয়ে থাকা নাম না জানা কোন গাছ,
যার শরীরে পাখির ছায়া পড়ে,
কিন্তু সে কারও স্পর্শে কাঁপে না?
আমি তো কল -কল কল্লোলিন কোলাহলের নদীতে ভাসি,শহরের অনন্ত ব্যস্ততায় প্রতিটি রাস্তা হয়ে উঠি।
একটি গল্পের কফিন,
যেখানে শব্দ গুমরে মরে,
স্মৃতিরা ধুলোর নিচে চাপা পড়ে থাকে।
আমি সেখানে,
আকাশচুম্বী জানালায় মুখ রাখা স্বপ্নগুলো
দিন শেষে আলো-অন্ধকারের সন্ধিক্ষণে
রুপোলি পর্দায় আঁখি হয়ে দেখি—
নিজেই নিজের ছায়া হয়ে যায়।
বুক ফাটানো যন্ত্রণাগুলো ছড়িয়ে দিই
কবিতার আকাশে,
বাতাসের শিরায়,
জোছনার স্তব্ধ মেঘে,
সমুদ্রের নোনাজলে,
যেন এই আর্তনাদ নিঃসঙ্গ না থাকে,
ব্যস্ত শহরের নীরবতায়
কেউ একজন কোন একদিন তা শোনে।
তবু, কোনো-কোনো দিন ইচ্ছে করে—
আমি যদি হতাম নিস্তব্ধ বৃক্ষ,
অনাঘ্রাত মাটি,
পথহীন নদী—
যে শুধু বয়ে চলে,
শব্দহীন, অথচ চিরকাল সব অনুভূতি দিয়ে বোঝে।