কলমেঃ ফজলে এলাহী
শীতের রাত ঠান্ডায় যবুথবু। গ্রামের বাড়ি সবই মাটির, কয়েকটি ছাড়া। আমাদেরও দুটি মাটির ও একটি পাকা বাড়ি রয়েছে। বিদ্যুতের আলো এখনও গ্রামের অনেক বাড়িতে পৌঁছায়নি। সন্ধ্যা হলেই রাস্তায় নেমে আসে অন্ধকার। হারিকেন, লম্ফু কিংবা টর্চ নিয়ে চলাফেরা করে গ্রামের লোকজন। যদিও আমাদের গ্রামে বাজারের মতো কয়েকটা দোকান ও কিছুটা পাকা রাস্তা রয়েছে, কয়েকটি বাসও চলাচল করে কুশমোড় থেকে রামপুরহাট পর্যন্ত।
পড়ালেখা করতে কি আর কারও মন চায়! তবুও নিয়ম করেই পড়তে হয়। বিদ্যালয়ে যাওয়া, প্রাইভেট পড়া—সবই। পড়ালেখা, ঘুমানো আমরা পাকা বাড়িতেই করি। কিন্তু দিনের বেশি সময় মাটির বাড়িতেই কাটে সবার—রান্না করা, খাওয়া ইত্যাদি।
কনকনে পৌষ মাসের শীতের রাত। মা ও চাচি দুজনে মাটির চুলোতে ধুকি তুলতে ব্যস্ত। রাতের পড়া শেষ করে মাটির বাড়িতে চলে আসি। অমনি সময় ওসরা থেকেই সামনে নিচের দিকে মুখ বাড়িয়ে যেমন ধুকি তোলা দেখতে যাই, অমনি আমার ডান দিকে এক পলক খামারের দিকে হঠাৎ তাকাতেই দেখি, চাঁদের আলোতে বছর সত্তরের এক শ্যামবর্ণ বুড়ি পুরোনো সাদা কাপড় পরে গোয়ালের গলির কাছে ঘোরাফেরা করছে। আমি দেখা মাত্রই চেঁচিয়ে বলি, “মা! দেখেন ভূত! ভূত!” অমনি মা ছুটে এসে খামারের দিকে দ্যাখেন। কই ভূত? ভূত নাই। মা দেখতে পেলেন না। তার আগেই অদৃশ্য হয়ে গেল।