শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:০২ অপরাহ্ন

কবিতাঃ সোনালি স্বপ্ন = কলমেঃ আজিজুল হাকিম

Coder Boss
  • Update Time : শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৯ Time View

বাইকটি রাস্তা ধরে যেতে যেতে একটি বারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। লালন বাইক থেকে নামল। তারপর চাবি তুলে আঙ্গুলে নাচাতে নাচাতে কিছুটা হেলতে দুলতে ও বারের ভেতর ঢুকে পড়ল।

বারের ভেতরে সারিসারি টেবিল সাজানো। প্রায় সব টেবিলেই চারজন করে বসে গল্প করছে আর বোতল থেকে বিভিন্ন রঙের মদ গ্লাসে ঢেলে ঢেলে খাচ্ছে। ওকে দেখে একটা টেবিল থেকে কয়েকটা ছোকরা প্রায় নেচে উঠল আর নাচের ভঙ্গিতেই বলল, “এই লালন! এদিকে এদিকে আয়।”

ওই টেবিলে অবশ্য তিনজন বসেছিল। ও হাসতে হাসতে গিয়ে একটি টেবিলের সামনের চেয়ারটিকে একটু পিছনে টেনে ওই টেবিলের সামনে বসল।

ও বসে বসেই রবিকে বলল, “বল, কেমন আছিস?”

ও বলল, “বন্ধু, এতক্ষন অত ভাল ছিলাম না; তবে তোকে পেয়ে আজ দারুন আনন্দ হচ্ছে। মাঝে মাঝে তুই কোথায় যে হারিয়ে যাস তার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না।”

লালন বলল, “আর পাবি কি করে বল, বাবা তো মাঝে মাঝে সন্ধ্যা হলেই আমাকে বাড়ির বাইরে যেতে দেয় না। আজ বাবা বাড়িতে ছিল না – মাকে বলে এলাম, ‘একটু মাঠের দিকে যাচ্ছি।’ এই বলে সোজা দিলাম এখানে ছুট।”

তারপর বলল, “মনে হয়, তোরা সব পেগ মেরে দিয়েছিস?”

শুক্লা ঢুলুঢলু চোখে বলল, “আগে যদি জানতাম তুই আসবি, তাহলে কি আগে গিলতাম? কখনোই না। কিন্তু যাই বল না কেন, শালা তোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোনদিন জিততে পারেনি।”

লালন ফুরফুরে মেজাজে বলল, “আরে বেশি করে খেতে গেলে বুকের পাটা লাগে; বুঝলি? তেমন বুকের পাটা তো তোর নেই যে যত খুশি গিলবি।”

শুক্লা বলল, “তা তুই ঠিকই বলেছিস। এই দেখ না, হাফ বোতল পেটে গেল কিনা মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। মাইরি বলছি।”

কথাবার্তার মাঝেই বয় এসে ওই টেবিলে একটি হুইস্কির বোতল রাখল।

লালন সেটি খুলেই গ্লাস ভর্তি করে হুসকি ঢালল। কোন জলের প্রয়োজন মনে করল না। তারপর গ্লাসটি ধরে ঢকঢক করে এক নিঃশ্বাসে সাবাড় করে দিল। তারপর চোখমুখকে কেমন একটু বিকৃতি করে গ্লাসটাকে টেবিলের উপরে রাখল।

“শালা কয়েকদিন মালা না পেয়ে বুকের ভেতরটা কেমন ছিলবিল ছিলবিল করছিল। শালা মাল ছাড়া কি বাঁচা যায়?” কথাটা ছুড়েই ও নিমাইয়ের দিকে তাকাল।

নিমাই বলল, “আরে জল নিলি না? এমনি খেয়ে নিলি, শালা। তোর পেটটাই পচে যাবে, বুঝলি।”

লালন বলল, “আরে দুদিনের তো দুনিয়া। এত ভেবে লাভ আছে? যে দুদিন আছি একদম নিখাদ আনন্দ করে যাই। এই ভেজাল মাল খেতে একদমই আমার মন বসে না।”

নিমাই বলল, “ভেজাল কিসের? জল ছাড়া একদম খাবি না। লিভার থাকবে? লিভার গলে পচে যাবে। তখন বাঁচার জন্য চিৎকার করবি। বাড়িতে কাউকে ঘুমাতে দিবি না। আর বেচারা বাবা মা কেঁদে কেঁদে মরবে। এদিকে তাদের টাকা পয়সা নষ্ট করছিস আবার ওদিকে তাদেরকে পথে বাসনোর প্ল্যান করছিস। খবরদার, আর খাবি না।”

কিন্তু কে শোনে কার কথা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও হুইস্কির বোতলটা সাবাড় করে দিল। তারপর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বয়কে বলল, “একটা বিয়ারের বোতল দিয়ে যাও।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই বয় বিয়ারের বোতল দিয়ে গেল।

নিমাই বলল, “শালা, তোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন চিন্তা নেই, তাই না?”

লালনের চোখটা ততক্ষণে ঘোর হয়ে এসছে। চোখ দুটো কেমন রক্তিম হয়ে উঠছে। বলল, “আরে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা থাকবে না কেন? তোদেরকে তো কতবার বলেছি, আমার একটি সুন্দর ঘর থাকবে। আর সেই ঘরের চারিদিকে আলমারি বোঝাই হুইস্কি, ভদকা, রাম আরো কত সাদা, লাল, সোনালী রংয়ের মাল থাকবে আর থাকবে একটা নায়িকার মতো ফুটফুটে টিন-এজড গার্ল। ও আমাকে মদ ঢেলে দেবে। আর আমি ঢকঢক করে গিলব। তারপর ওকে দারুন করে আদর করব।”

রবি অনেকটা তোৎলামির স্বরে বলল, “এই স্বপ্ন সফল করার জন্য তুই কতদূর এগোচ্ছিস?”

লালন বলল, “মন তো অনেক কিছুই চায়; কিন্তু হচ্ছে কোথায়? বাবা কাজের জন্য বারবার বলছে। কিন্তু কাজ করতে একদম মন চায় না। জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ তো শেষ করে দিলাম; বাকি দু ভাগ – ঠিক চলে যাবে। ভাগ্যে থাকলে অবশ্যই তেমন সুন্দর একখানা সোনালী ঘর হবেই।”

শুক্লা বলল, “ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে যা, তাহলেই একদিন তোর স্বপ্ন পূরণ হবে। অনেক পাগল দেখেছি; কিন্তু তোর মতো পাগল দেখিনি। পৃথিবীতে এমন কোন প্রাণী আছে, যে পরিশ্রম না করে সারা জীবন চালিয়ে যায়?”

লালন আর এক গ্লাস শেষ করে বলল, “যদি থাকে নসিবে আপনি আপনি আসিবে।”

কথাটা শুনে সকলে, হো হো করে হেসে উঠল। তারপর ও রবিকে বলল, “শালা পকেটে আর টাকা নাই রে। যদি টাকা থাকতো তাহলে আর একটা রাম মারা যেত।”

রবি বলল, “ঠিক আছে, আজ আমি তোর রামের দামটা দিচ্ছি। কিন্তু বাড়ি ফিরতে পারবি তো?”

ও বলল, “কেন, আমি কি বাড়ি ফিরতে পারি না? তোদের পায়ে হাঁটি, না তোদের গাড়িতে ফিরে যাই?”

“তা যাস না; তবু ভয় হয়।”

“খাওয়ালে খাওয়াবি, না খাওয়ালে না খাওয়াবি — একদিন আমার সোনালী ঘরে তোদের সবাইকে নিমন্ত্রণ করব।”

কিছুটা সময় পার হয়ে গেল। তারপর রামের একটি বোতল এল।

লালন রবিকে কিছুটা খেতে বলল। কিন্তু রবি বলল, “না। বেশি খেলে আর নিজেকে সামলাতে পারব না; তখন কোন নর্দমায় গিয়ে পড়ব তার ঠিক নেই।”

লালন বলল, “শালা, মাল খাওয়া অবস্থায় নেশার ঘোরে আনন্দের ফুরফুরে হাওয়ায় যদি কোথাও হারিয়ে যাই তাতে দোষ কোথায়? সেই হারিয়ে যাওয়ায় যে কি সুখ; কেবল মাত্র যারা হারিয়েছে তারাই যানে।”

মানিক বলল, “লালন, তুই যাই বলনা কেন, ভাই আর পেটে ঢুকছে না।”

লালন বলল, “তোরা সব কাপুরুষ। আমি একাই শেষ করছি, দেখ।”

এই বলে গ্লাসে রাম না ঢেলে সে বোতলটার মুখে মুখ দিয়ে টানতে লাগল। সকলেই ওর মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল। সব শেষ।

তারপর ওরা আরও কিছুক্ষণ গল্প করল।

অবশেষে বারের সমস্ত টাকা মিটিয়ে সকলেই বার থেকে বেরিয়ে গেল। বার থেকে বেরিয়েই লালনের চোখ পড়ল একটি বয়স্ক লোক রাস্তার ধারে বসে বসে ঠকঠক করে কাঁপছে। রাত্রি ঠাণ্ডা হলেও মদের উষ্ণতা তখন লালনকে পেয়ে বসেছে। কেবল একটি গেঞ্জি গায়ে রেখে জ্যাকেট আর জামাটা খুলে ওকে দিয়ে দিল।

রবি বলল, “এ কি করছিস লালন! কাল কি পরবি ভেবেছিস?”

লালন বলল, “কালকের কথা কাল ভাবব। এখন তো এই লোকটাকে বাঁচাতে হবে।” আর কেউ কোন কথা বাড়াল না।

“ঠিক আছে, ভাই ভাল থাকিস” — এই কথা বলে সব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102