কলমে: সেক রজব আলি
জীবনের সোনালী প্রভাত থেকে দ্বিপ্রহরের প্রখরতা পেরিয়ে অপরাহ্নের বকেদের অলস পাখায় নীড়ে ফেরার উদাস দৃশ্যের পর সন্ধ্যার ঘন্টা আরতি শুনে কাঁঠালী চাপার গন্ধ ছড়ানো বিনিদ্র রাতের গভীরতা কাটিয়ে নিশিভর তোমাকে খুঁজে চলেছি ‘তৃপ্তি ‘।
তবু তোমার দেখা নাই।
বড় অশান্ত লাগে এ জীবন!
শান্তির স্বাদ আহরণে তোমাকে অহরহ খুঁজে চলেছি আজও।
তোমাকে খুঁজেছি আমি মন্দিরের গর্ব গৃহে,
মসজিদের মিনার জুড়ে।
খুঁজেছি গির্জার ঘন্টায়, গুরুদুয়ারের লঙ্গরখানার আনাচে-কানাচে।
অশান্তির অবসাদ সেখানেও যেন থেকে গেল।
তোমাকে পেতে কত গ্রন্থ ছুঁয়েছি, কোরআন পুরান বাইবেল সবই জেনেছি,
তবু অশান্তির যন্ত্রণা আজও সমানে।
এখানেও তোমার দেখা নাই।
জানো তৃপ্তি, তোমাকে খুঁজেছি আমি বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে কক্ষে, মহাবিদ্যালয়ের মোটা ভলিয়ামের বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়।
আমি খুঁজেছি তোমাকে গ্রন্থাগারে সাজানো শত শত নাটক উপন্যাস কবিতা গল্পের সারিবদ্ধ কিতাবে।
আমি খুঁজেছি তোমাকে তানসেনের সুরে ,
ওমর খৈয়ামের “রুবাইয়াতে”।
খুঁজেছি আমি তোমাকে আমির খসরুর “খেয়াল”- এ।
আমি খুঁজেছি তোমাকে লালনের বাউল গানের তালে তালে,
কবি জসীমউদ্দীনের পল্লীগীতির
মরমী ছন্দে ছন্দে।
কিন্তু সেখানেও অতৃপ্তির অনুরণ থেকেই গেল।
সেখানেও তোমার দেখা নাই।
তৃপ্তি তোমাকে খুঁজতে কত দেশ কত বিদেশ কত নগর কত শহর কত ইমারত কত স্মৃতি সৌধ কত স্থাপত্য ঘুরেছি।
এইতো সেদিন প্রেমের তীর্থভূমি আমি তাজমহল ঘুরেছি।
বিশ্বাস কর সেখানেও তুমি নেই।
কারণ সে তো সমাধি।
বিরহের ব্যাধাতুর আর্তি।
আমি ব্যথিত হৃদয় নিয়ে ‘তাজে’র দেয়াল ছুঁয়ে ফিরে এলাম।
আমি সুন্দরী কাশ্মীর ঘুরেছি।
সে তো এক জান্নাত।
তার ঝিলাম নদী পেরিয়ে সিন্ধু নদের ধার ঘেঁষে অতিপ্রাকৃতিক অপূর্ব সৌন্দর্যে মোড়া সোমমার্গ ঘুরেছি, পেহেল গাও ঘুরেছি, গুলমার্গ দেখেছি।
সেই জান্নাতেও তৃপ্তির সাধ ঘুচলো না।
সেই জন্নতেও তৃপ্তি, তোমার দেখা নাই।
এবার বলো না তৃপ্তি, তোমাকে না পাওয়ার তীব্র এ জীবন যন্ত্রণা মেটাতে তবে যাই কোথায়?
মনে হয় চলি একবার সাকি তোমার ম্যায়খানায় (সূরার দোকান)।
সেখানেই আমার ‘তৃপ্তি’ -র আছে মুক্ত দুনিয়া তোমার খোলা পেয়ালায় উপচেপড়া সুরার চুমুকে।
সেখানে মরা গাঙেও জোয়ার আসে।
বার্ধক্যে নুয়ে পড়া শরীরেও যৌবনের উচ্ছ্বাস জাগে।