নারীর জীবন
নারীর জীবন বড় বিচিত্র বিস্ময় প্রতি বাঁকে,
নদীর মতো সে সদা বয়ে যায় রহস্য ঘিরে থাকে।
বাবার কাছে সে অতি আদরের নয়নের মণি তাঁর –
যখনি যা চায় তাই দিয়ে দেন নেই হিসাবের ভার।
মা তাকে শেখান পড়াশোনা আর সমাজের যত রীতি,
মাতা জীবনের সেরা শিক্ষক শেখান ন্যায় ও নীতি।
পাত্রের হাতে তাকে তুলে দিতে পিতার কাঁপে যে বুক-
আপন কলিজা যেন ছিঁড়ে দেন মন জুড়ে তাঁর দুখ।
ঘাত প্রতিঘাতে শুরু হলো তার সংসার পথে চলা,
পাহাড়ী ঝর্ণা তখন শান্ত মেপে তার কথা বলা।
দুটি মন যদি একপথে চলে সংসার হয় সোজা –
মতবিরোধের কাঁটার আঘাতে জীবনে বাড়ে যে বোঝা।
ক্রমে সংসারে সন্তান আসে আনন্দে ভরে বুক,
মাতা তৎপর শিশুর লালনে হারিয়ে আপন সুখ।
কৃতি সন্তান মায়ের গর্ব কষ্ট সফল তাঁর –
সন্তান সুখে গর্বিতা মাতা ভোলেন মনের ভার।
ব্যস্ততা এসে কেড়ে নিয়ে যায় প্রিয় সন্তানটিকে,
কর্মজীবনে প্রবল পিষ্ঠ মা’র স্মৃতি আজ ফিকে।
বহু সন্তান দূর দেশে থাকে ফোন দিতে ভুলে যায়-
সংবাদ তরে মাতা যে ব্যাকুল প্রতীক্ষা করে ঠায়।
জীবনের শেষে সঙ্গী তখন শুধু বুড়ো আর বুড়ি,
জীবন গড়তে জানে না কখন সময় গিয়েছে চুরি।
দুজনেই আজ পরম একলা সঙ্গী শুধু দুজন-
নারীর জীবনে হঠাৎ কখন আসে বিদায়ের ক্ষণ।
কেউ বলে নাকো নারীদের গুণ তারা শুধু করে যায়,
কথার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত তবু গন্ধ বিলায়।
তাঁর কৃতিত্বে মহীরুহ হয় ক্ষুদ্র মানব চারা,
সংসার তরে জীবন বিলিয়ে পৃথিবী ছাড়েন তাঁরা।
সাহিত্যের সুবাস
ধর্ম আজকে পুরোই ব্যর্থ করতে মানব লালন,
ধার্মিক বোঝে ধর্ম মানে শুধুই নিয়ম পালন।
ভিন্নধর্মী হয় কি কভু ভালোবাসার ধন?
আচরণ তার ভিন্ন ভিন্ন মনে করায় মন।
ধর্মের কাঁটা চিরদিন ই সুপ্ত হয়ে রয়,
বিধর্মী সে, কোনদিন ই আমার স্বজন নয়।
শেষ বয়সে ধার্মিক হতে তাদের পায়ে দলি-
ধর্মাচরণ করতে গিয়ে নীতিবোধকে ছলি।
হিন্দু মন্দির ভাঙলে সদা হিন্দু পায় যে ব্যথা,
মসজিদ ভাঙ্গা তাদের কাছে গৌরবের ই কথা।
মুসলিম ঘরে লাগলে আগুন মনেতে পায় সুখ-
শতাব্দী কাল ধরে চলা গভীর এক অসুখ।
একই ভাবে মুসলিম লোকে হিন্দু নিধন করে,
দেবীমূর্তি ভেঙ্গে দিয়ে গৌরবে যায় ঘরে।
হিন্দু নারী ধর্ষণ করে মনে খুশির যোশ-
গরীব হিন্দু ভিক্ষা চাইলে ফিতরা দিতে রোষ।
মিলন সাধন করতে চাইলে মন্দ বলে লোকে,
ধর্ম সাধক নাস্তিক বলে দেখে ঘৃণার চোখে।
দ্বিপদী এক জন্তু সেজে ঘুরে চলছি ভবে-
ধর্ম মোহের মুখোশ খুলে মানুষ হবো কবে!
সাহিত্য ই করতে পারে এ অসাধ্য রচন,
পাশে বসে ভিন্নধর্মী কবি করেন বচন।
ভিন্নধর্মী কবির গৃহে কবি করেন বাস-
কাঁটার মাঝে বয়ে চলুক সাহিত্যের সুবাস।
মুখোশ
নানান রকম মুখোশের সমাবেশ হৃদ-অলিন্দের কার্নিশে,
বড়ো পরিপাটি সুশোভন মার্জিত মুখোশের মেলা-
মুখোশ পড়ে অভিনয় করতে করতে মুখোশ ই কখন মুখ হয়ে গেল!
দামী পোশাকে নষ্ট শরীর ঢেকে মুখে দাতার মুখোশ এঁটে ক্যামেরা সহ চলছে দানের নামে চলছে আত্মপ্রচার এর প্রতিযোগিতা,
রাজনৈতিক জমায়েতের প্রতিশ্রুতি তো সভাস্থলেই পড়ে রয়-
কাছের মানুষ সেজে সকল তথ্য জেনে পরম বন্ধুই ক্ষতিসাধনে মেতে ওঠে,আর এর নাম ই আধুনিকতা।
মুখোশের আড়ালে থেকে হ্যাকার মানুষের কষ্টার্জিত টাকা নিয়ে পগারপার -এই ডিজিটাল উন্নয়ন!
ক্রন্দন করে টাকা ধার নেওয়ার পর কে দাতা ও কে গ্রহীতা বোঝা দায়!
চারিদিকে শুধুই মুখোশের রমরমা-
মুখোশেরা শুষে নিলো সভ্যতার অন্তিম নির্যাস-
তাই আজ মুখকে ও বিশ্বাস করতে ভয় হয়।
তবু জয় হয় মানবিক মুখেরই,
শেষ হাসি হাসবে তারাই-
মুখোশধারী কি কভু তাদের হারিয়ে
বিজয়ী হতে পেরেছে?