জাসমিনা খাতুন
রামপুরহাট ,বীরভূম ,ভারত
আজ যেন আমার হৃদয় পূর্ণিমার চাঁদে স্নান করছে। আমি ধন্য, কারণ আমার শিকড়ে আজ পৌঁছে গেছে সন্তানসম আমার লেখা বই গুলো। আমার নানা, শহীদ মাস্টার, একসময় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন, পাশাপাশি ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। তিনি শুধু শিক্ষক বা ডাক্তার নন, আমাদের পরিবারের প্রেরণার বাতিঘর।
ছোটবেলার স্মৃতিতে নানা যেন এক অনুপ্রেরণার প্রতিমা। ভোরবেলা হাঁটতে যাওয়া, ফিরে এসে আল্লাহর আরাধনা করা, আর সারাক্ষণ বাড়িতে বিভিন্ন ধর্মাবলী লোকে ভরা—এসব যেন এক চিরকালীন চিত্র। তার নিষ্ঠা, তার নিয়ম, তার ধৈর্য আমাদের জীবনের মূল শিক্ষা।
আজ নানা তার জীবনের শেষ অধ্যায়ে। চোখে ঝাপসা দেখেন, কিন্তু তার পড়ার নেশা থামেনি। আতস কাঁচের সাহায্যে প্রতিদিন ধর্মগ্রন্থ পড়া, গজল গাওয়া, আরাধনা করা—এগুলো যেন তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার এই অধ্যবসায়, তার জীবনদৃষ্টি আমাকে ভাবায়।
আমি তাকে ভালোবাসি সেই গভীরতায়, যেখানে ভাষার সীমা শেষ হয়। তার হাত ধরে বড় হওয়া, তার মুখের গল্প শোনা, তার স্নেহের ছায়ায় বেড়ে ওঠা—এসব আমাদের সমস্ত ভাই বোনের কাছে অমূল্য। আজ তার পড়ার সময় আতস কাঁচ এনে দিল আমার ছোট মাসির ছেলে, আমার ভাই ‘ইসান’। আর আতস কাঁচের সাহায্যে খুব নিখুঁত করে বইগুলো পড়ছে এই এক অপরূপ দৃশ্য অমৃতযোগ।এই দৃশ্য দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। চুরি করে ছবি তুললাম। আমার ছোট ভাইকে “মেহেদী হাসান”বললাম, “ভাই, এই ছবিটা তুলে দে তো।” ভাই বলল, “দাদু বকবে।” আমি বললাম, “চুরি করে তোল।”এই প্রথম চুরি জীবনে, চুরি করে এই ছবিটা তুললাম। এ যেন আমার কাছে এক অমৃত স্পর্শ।
আমার নানার এই শেষ বেলার জীবনের ছন্দ আমাকে ও আমাদের ভাই বোন সকলকে শিখিয়েছে, জীবন আসলে এক আরাধনা। ভালোবাসা, অধ্যবসায়, আর জীবনদর্শন দিয়ে তিনি আমাদের শিকড় শক্ত করেছেন। তার এই ছন্দময় জীবন আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত পূর্ণতা দিয়ে বাঁচা যায়।
আজ আমি ধন্য। আমার নানা, আমার শিকড়, আমার ভালোবাসার মূর্তি হৃদয়ে আছে এবং থাকবে ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করে। দাদুভাই আমাকে ক্ষমা কর চুরি করে তোমার ছবি তুলেছি।
আমরা আমার নানাকে দাদু বলে ডাকি। আমার দাদু ভাই ৯০ বছর পার করে গেছেন আল্লাহর রহমতে,আল্লাহর কাছে দোয়া ও রহমত চাই আমার দাদুভাই সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকুক অনন্তকাল।