কলমেঃ বিধান চন্দ্র দেবনাথ
তিন বছরের মেয়ে রাজশ্রী। মা, বাবা, জেঠা, জেঠি, পিসি, ঠাম্মী বাড়ির সকলের প্রিয় রাজশ্রী দেবনাথ ত্রয়ী। খুব দূরন্ত, দুষ্টু ও মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে সে। আদর করে বাড়ির বিভিন্নজন তাকে বিভিন্ন নামে ডাকে। তার ঠাম্মী তাকে ডাকে লক্ষ্মী, তার মা তাকে ডাকে ময়না মতি, কেউ কেউ আদর করে ডাকে বুড়ি আর তার বাবা তাকে ডাকে সোনা মা। তার নামের কোনো শেষ নাই। সেও তার বড় বোনদেরকে বিভিন্ন নামে ডাকে। একজনকে দিদিয়া, একজনকে দিদিভাই, একজনকে ছোড়দি, একজনকে মিষ্টিদি আর একজনকে বোন বলে ডাকে। সারাক্ষন হাসি-খুশি আর দুষ্টুমিতে তার দিন কাটে। শুধু খাওয়া আর ঘুমের সময় সে পাজি মেয়ে। একবার খাওয়াতে বসলেই দুই ঘন্টা চলে যায়। মুখে খাবার নিয়ে না চিবিয়ে বসে থাকে। নানা রকম খেলা করে তাকে খাওয়াতে হয়। একবার তাকে নিয়ে খাওয়াতে বসলে আপনি এক ঘুম দিয়ে উঠতে পারবেন। তার খাওয়া শেষ হবে না। এই গেল তার খাওয়ার বিবরন। আসি তার ঘুমের কথায়। ঘুমানোর কথা বললেই সে বলবে বাবু একটু খেলে আসি? আরো নানা রকম ফাঁকিবাজি। কোলে নিয়ে ছড়া বলে বলে হাটতে হবে। ঘন্টা খানেক ছড়া আর কবিতা বলে ঘুম পারানোর পরে যখন বিছানায় রাখতে যাবে তখন সে কথা বলে উঠবে। এই হল তার ঘুমের বিবরন। খাওয়া আর ঘুমানোর হিসেব ছাড়া বাদ বাকী সব কাজে সে লক্ষ্মী মেয়ে। তার বাবু অফিস থেকে আসার পর বিকেলে বায়না ধরবে বাড়ির সামনে একটা ছাঁদ আছে। সেখানে ঘুরতে যেতে। সেই ছাঁদ-ই তার জন্য পার্ক। সেখানে গিয়ে খোলা ছাঁদে তার বাবুর হাত ধরে হাটবে আর নানা রকম প্রশ্নবানে জর্জরিত করবে। পাখি দেখলে সে মহা খুশি। একদিন ছাঁদে বসে বসে বাপ-মেয়ে পাখি দেখছে আর গল্প করছে। গল্প করা শেষে তার বাবু তাকে জিজ্ঞেস করল বলতো রাজশ্রী সোনা মা, বড় হয়ে তুমি কী হবে? ডাক্তার নাকি ইঞ্জিনিয়ার? সে ভেবেচিন্তে বলল, আমি তোমার মা হবো। তার বাবু তার উত্তর শোনে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল- হ্যাঁ মা। তুমি তো আমার মা-ই। আমার দুইটা মা।আমার মা মানে তোমার ঠাম্মী আর আমার রাজশ্রী সোনা মা। সে তখন বলল, আচ্ছা।