কলমেঃ বি. পি. শাকিলা জান্নাত
====================
প্রভাত শেষে মধাহ্নে পড়িল
সূর্যের উত্তাপ যেন আরো বাড়িল
শুরু হলো কাঠফাটা রোদ।
এই রোদে পুকুরের ধারে এক বৃদ্ধা
আসিতেছে নড়বড়ে।
বৃদ্ধারে দেখিয়া আম গাছে ঢিল ছুড়া
ছোকরার দল আসিল তেড়ে।
বৃদ্ধা লাঠি হাতে নড়বড়িয়ে চলে,
তাহার পিছু পিছু ছোকরা দলে দলে।
কেউ মারে ঢিল, কেউ বৃদ্ধার কাপড় টানে
কেউ বলিল পাগলি এসেছে
চল তার পানে।
বৃদ্ধা হকচকিয়ে চলিল,
চলিতে চলিতে হোচট খেয়ে পড়িল।
কেহ ধরিল না তারে,বরং করিল
তাহা দেখিয়া অট্টহাসি।
বৃদ্ধা গ্রামের এপার হয়ে ওপার চলে
চলিতে চলিতে বলে,
আমার জালাল ফিরে আসবে কবে?
জানিস কি তোরা কেউ তবে!
জালাল গিয়েছে ভিনদেশ...
ভিনদেশে গিয়ে জালাল
হয়েছে নিরুদ্দেশ।
জালাল তো গিয়াছে প্রবাস,
না ফিরিয়া মা কে করেছে নিরাশ।
হয়ে গেছে পাচ বছর খানেক,
ফেরেনি জালাল, কেউ তারে আনেক।
বছর যত বাড়িতেছে,বৃদ্ধার আশা
তত জাগিতেছে।
কতখান থেকে কত লোক আসে
আসে না কেন আমার জালাল?
কত রাত কত দিন খায়নি তো,
ভেবে রেখেছিল এক সাথে করিব আহার
কত আবেগ,কতই না ভালবাসা,
জালালের তরে...
কত বছর দেখে নায়
আপন চক্ষুর তলে।
কতখান থেকে কত কাগজ কুড়িয়ে
বেধেছে আচল তরে
সুযোগ পেলেই পড়েছে,
জালালের চিঠি ভেবে।
কত ছোকরা হাতে ধরিয়ে দিয়েছে,
আধ ছেরা কাগজ
কাগজ দেখিয়ে ঘুরিরা গিয়াছে
জালালের মায়ের মগজ।
কত কাগজ হাতে নিয়ে,
হাজারো লোকের কাছে গিয়ে ,
বাচ্চাদের মতো বায়না ধরে,
পড়ে দাও দেখি এ যে মোর জালালের চিঠি।
জালালের খোঁজে, বৃদ্ধা কত মাইল
হাটি চলে
কখনো সে থামেনি হতাশার তলে।
কাউকে সে চিনে না,হারিয়ে ফেলেছে
জ্ঞান বুদ্ধি,
তাহার হৃদয়ে শুধু ভাসে জালালের
মুখখানি।
কোথায় জালাল, কোথায় জালাল?
সারাদিন এ কথা হাকিয়ে,
চেয়ে থাকে আধছেঁড়া কাগজে তাকিয়ে
কতদিন যে করেনি নাওয়া-খাওয়া..
এখন তো ছেড়েই দিয়েছে,
একবাড়ে তন্ডুল খাওয়া।
কে জানে! অন্ন ছাড়িয়া শুরু করল
কেন টেরাকোটা খাওয়া?
গৃহ তাহার করিয়াছে ত্যাগ বহুদিন আগেই,
এখন সে হয়েছে সন্ন্যাসীর ন্যায়
ঘুড়ে বেড়ায় পথের ভাগেই।
বৃদ্ধার বুকের ভেতর জালালের ব্যাথা,
জালাল জালাল করিতে করিতে
গিয়েছে তাহার মাথা।
কত কষ্ট, কত যন্ত্রণা, কত আত্মচিৎকার,
কেউ বুঝেনি তো, দিয়েছে ধিক্কার।
কত ছোকরা দিয়েছে গলাধাক্কা,
দিয়াছে শোলার বারি।
নিয়েছে হাটার লাঠি কেড়ে
বলিয়াছে পাগল তারি।
জালালের তরে কত কাটিয়েছে নির্ঘুম
কত ঝড়েছে নিশ্চুপ চোখের পানি,
কতই না আর্তনাদ, জালাল কে ফিরে
পাওয়ার আশা
তবুও সব ব্যর্থ হলো,
ফিরলো না বৃদ্ধার আশা।
মাস পেরিয়ে আরো গেল এক বছর,
ফিরলো না কভু জালাল,
আচমকা এক অপরাহ্নের পর,
আসমান থেকে ডাক পড়িল বৃদ্ধার। মহাপ্রয়াণের কোলে বৃদ্ধার
প্রাণ যেন ঝুলে
তবুও শেষ বারের মত,
মনে করিল জালালেরে....
কত আশায় না ছিল,
দেখে যাব তোর মুখটারে
ক্ষণচারীনির সব আশা মিথ্যে করে
উড়াল দিতে হলো দূর দেশে।
তাহাকে যারা চিনিল,বলিল তারা
মরেনি সে, সে যেন মুক্তি পেয়েছে।
তবু হায় আফসোস থেকেই গেল,,,
আজও জালাল ফিরে এলো না।