কলমেঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
আমি বীরাঙ্গনা নই ধর্ষিতা
আমার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা!
আমি গর্বিত শহীদের ভার্যা বলে
পাক সেনারা সেদিন নেয়নি কাউকে বলে কয়ে!
আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে নিলো তুলে
আমি ধরা দিলাম, তা নয়, কোন ভুলে!
মেয়ের সামনে মা, মায়ের সামনে মেয়ে
ধর্ষণ করলো ধর্মধ্বজীরা নেচে-গেয়ে!
সাঁতরাত পরে ছেড়ে দিলো আমায়
মেয়েটাকে ছাড়লো না, অনেক করলাম অনুনয়-বিনয়!
মার সামনে মেয়েকে উলঙ্গ নিয়ে গেলো বাংকারে
বুক ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো মেয়ের চীৎকার ঝংকারে!
চীৎকার দিয়ে মেয়ে কয়, বাঁচাও মা --
আর তো জীবনে সয় না!
তিনদিন পর খালের পাড়ে পেলাম লাশ
সর্বাঙ্গে দাঁতের ক্ষত কামড়িয়ে করেছে সর্বনাশ!
নিজের কাপড় অর্ধেক দাতে কেটে ছিড়ে
কবর দিলাম কোনমতে পেচিয়ে কাদা মাটি খুঁড়ে!
স্বামী সন্তান, আমি হলাম স্বাধীতার বলি
বীরাঙ্গনা খেতাব পেয়ে বুকে ক্ষত নিয়ে চলি!
আমি শহীদ জননী, শহীদ পত্নী, বউ
বুকের ক্ষত এ প্রজন্ম জানে নাতো কেউ,
স্বাধীনতা কতমূল্যে হয়ে ছিলো কেনা
জানি না, আবার কেউ মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা হওয়ার অপরাধে বিচার করবে কিনা?
সেদিন ছিলো উত্তাল জন ঢেউয়ের মার্চ
বিশতম বিবাহবার্ষিকী, হাতে মেহেদী লাল শাড়ী মেয়ে দিলো পরি,
আহ্লাদে আটখানা হয়ে, ঢুকেছি বিবাহবার্ষিকী বাসর
বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টার, গুলিতে গুলিতে বৃষ্টি ঝরালো বর্বর!
বিছানা ছেড়ে চলে গেলো আমার বর
দেশ মাতৃকার ডাকে,
আমি মেয়ে নিয়ে গুড়িসুড়ি মেঝে, পড়লাম বিপাকে!
রাতে গ্রামের বাড়ীতে বাঁচার জন্য দিলাম পাড়ি,
ভাগ্যের লিখন, ইচ্ছে হলে কি আর এড়িয়ে যেতে পারি?
আমি বীরাঙ্গনা, চলি একা, প্রতি পদে শুনি গোনাহ
সেই থেকে গ্রামে আমার বসবাস, ভালোবাসে দু'একজন হাতে গোনা!
কেউ বলে চরিত্রহীন, কেউ বলে বেদীন, কেউ শ্রদ্ধায় মাথা করে নত
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হাসি-তামাশা বিকৃত ইতিহাস শুনবো আর কত?