নরসিংদী সদর প্রতিনিধি
নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ভূইয়ম গ্রামের সন্তান বেলায়েত বাদল এর সাথে কিছু টা সময়,
তিনি মূলতঃ একজন কবি ও কথা সাহিত্যিক। লেখালেখির বয়স আনুমানিক পঁচিশ বছর। এ সুবাদে দেশে বিদেশে কয়েকটি পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। গ্রাম প্রকৃতির এক স্নিগ্ধ বিকেলে এ কবির মুখোমুখি হয়েছিলেন জুয়েল বিন সোলাইমান। উঠে আসে কবির লেখালেখি, দেশ, প্রকৃতি নিয়ে নানা অজানা কথা]
@কেমন আছেন কবি?
# আছি ভাল। এই যে আমাকে কবি বলে সম্বোধন করলেন, এটা আমার কাছে কেমন অদ্ভুত লাগে। আসলে আমিকি কবি? আদৌকি কবি হয়ে উঠতে পেরেছি? কবি হিসেবে নিজে নিজেকে একশোতে পাশ নাম্বার দিতে পারিনা। তারপরেও মানুষ আমাকে কবি বলে ডাকে। এখন তারা আমার কবিতার পছন্দকারী পাঠক হিসেবে ডাকুক কিংবা তাচ্ছিল্য করে বলুক, এটা ভাললাগা, উপভোগ ও উজ্জীবিত হিসেবে কাজ করে। নজরুল, লালন, মধুসূদন, সক্রেটিস -সবাইকে একসময় মানুষ তাচ্ছিল্য করেছে।
@আপনার লেখা কাব্যগ্রন্থ ঢাকা ও ত্রিপুরা থেকে বের হয়েছে। আরেকটি কাব্যগ্রন্থ খুব সম্ভব এদেশ থেকে বের হচ্ছে, তাহলেকি আপনাকে কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়না?
# কেবল কাব্যগ্রন্থ ছাপিয়ে কবি হওয়া যায়না। পাঠক প্রিয়তা থাকতে হয়। বেশিরভাগ লেখকরা এখন নিজের টাকায় বই ছাপে। প্রকাশকরা কেবল মধ্যস্বত্বভোগী। এতে অবশ্য দোষের কিছু দেখছিনা। কবি গুরু নিজের পয়সায় বই ছাপিয়েছেন। লেখকেরা তাদের মেধা, শ্রম, সময়, অর্থ খরচ করে প্রজাপতির আশায় ফুল কিনে বিছিয়ে রাখে। ফুলে সুবাস আর মধু থাকলে প্রজাপতি আসবে। না আসলেও সমস্যা নেই। ফুলতো ফুলই। আমিও ফুল বিছিয়েছি। ছন্দকে যদি আপনি কবিতা বলেন আর ছন্দকারকে কবি, তাহলে কিছু নাম্বার পেতে পারি। ছন্দ আমার প্রধান শক্তি। সত্যি বলতে কবি হবার আগে আমি গল্পকার। কিন্তু ভাল লিখিয়ে নই, বলিয়ে। সবচেয়ে পারদর্শী ও প্রশান্তি ভাল গল্প পড়াতে। আর সকলের মত কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও জীবনে প্রথম পত্রিকায় আসে আমার লেখা ‘অবশেষে’ নামের একটি ছোট গল্প। প্রথম প্রকাশিত বই হলো উপন্যাস। ‘নীল রঙের ভালবাসা’। দ্বিতীয়টিও উপন্যাস, ‘স্বপ্ন দিয়ে লেখা’ এবং গত ২০২৪ সালে অমর একুশে বইমলায় বের হয়েছে আমার তৃতীয় উপন্যাস ‘বসন্ত বধূ’। আমার সবগুলো বই ভালই ফিডব্যাক পেয়েছে। আমি ভাগ্যবান যে আমার অল্পবিস্তর পাঠক রয়েছেন। যারা ঊৎসাহ দাতা, আমার লেখার প্রাণ। তবে সত্যি বলতে মানুষ এখন কাগজের বই পড়েনা, অনলাইনে পড়ে। আমিও অনলাইনে ছড়া, কবিতা টুকলিফাই করি।
@আপনার লেখার উপজীব্য হল প্রকৃতি। আপনার বিভিন্ন কবিতায় আমরা প্রকৃতির ছোঁয়া পাই। কিন্তু প্রেম, দ্রোহ, প্রতিবাদী লেখা তেমন দেখা যায়না।
# আসলে কবিতা খুব কঠিন জিনিস। লেখা বলেন, বুঝতে পারা বলেন। বক্তব্য ফুটিয়ে তুলতে না পারলে মানুষ আপনার লেখা কেন পড়বে? পূর্বের কারো লেখা চাবালে তা গেলানো যাবে না। জীবনে তেমন ভাবে প্রেমে পড়িনি বলে আমার কনটেন্টে প্রেম অতটা আসেনা। আমি থাকি নিভৃত পল্লীতে। প্রকৃতি আমাকে খুব টানে। প্রকৃতিকে বুঝতে পারলে আপনার মনে কোন হতাশা কাজ করবেনা। অবশ্য এর সাথে মানবতাটাকেও আমি অগ্রাধিকার দিই। মানুষ গুরু আমার নিষ্ঠা। এ বিষয়ে আমার কিছু লেখা আছে। সীমান্ত যেখানে মানুষের সীমানা নির্দেশ করে, সেখানে মানবতা টিকল কই? লালন বলে গেছেন, ধর্ম, কুল, গোত্র, জাতীর, তুলবেনাগো কেহ জিকির, কেঁদে বলে লালন ফকির, এ মোরে দেখায়ে দেবে। সকল কবি সাহিত্যিকেরা এটা দেখতে চেয়েছেন। আর বৈপরীত্য বিদ্রোহাত্মক লেখা এক কাজী নজরুল যা লিখে গেছেন তারপরে কোন লেখা কি থাকতে পারে? সমাজের প্রতিটা অসংঙ্গতি তিনি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। স্বরাজ আমাদের কী দিতে পেরেছে কেবল ফেইক স্বাধীনতা ছাড়া?
@ফেইক স্বাধীনতা মানে?
#এখানে সবার ন্যায্যতা নেই। মানে স্বাধীনতা ফেইক। গুটিকয়েকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করছে, মানে স্বাধীনতা দূর্বল। চিকিৎসায় বিশৃঙ্খলা, আইন, প্রসাশন, বাজার দর সব জায়গা করাপ্টেড। স্বাধীনতা এখানে মূল্যহীন। লালনের বাণী, আমীর ফকির হয়ে এক ঠাঁই, সবার পাওনা পাবে সবাই, আতরাফ বলিয়া-রে হায়, দূরে ঠেলে নাহি দেবে, এমন মানব সমাজ কবে সৃজন হবে।
@এখন কি লিখছেন?
#এখন টুকটাক ছড়া কবিতা ছাড়া তেমন কিছুই লিখছিনা। তবে পরিকল্পনা আছে পঁচিশের বইমেলায় আগরতলা থেকে একটি কাব্যগ্রন্থ ঢাকা অমর একুশে বই মেলায় একটি উপন্যাস প্রকাশ করার। কয়েকটি ছোট গল্প লেখা আছে। পরিকল্পনা পুরাপুরি সফল করতে হলে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। মানুষ গোগ্রাসে খায়, আমাকে উর্ধ্বশ্বাসে লিখতে হবে। সব কাজই সময়ের শেষ ভাগে ধরি। আমি লেট মেকার।
@ধন্যবাদ। আপনার উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি।
# আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আমার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য। আপনার পত্রিকা গুনে, মানে, প্রচারে সেরা হোক।