চিঠির ভাঁজে লুকানো ক্ষত
প্রিয়তম,
পত্রের শুরুতে তোমাকে জানাই হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও তোমার প্রিয় বকুল ফুলের শুভেচ্ছা। আমার আশা নয় বিশ্বাস তুমি খুব ভালো আছো আর সারাজীবন ভালো থেকো এই কামনা করি মন থেকে।
প্রিয়তম আমি জানি না এই চিঠি টা তোমার হাতে কোনোদিন আদৌও পৌঁছাবে কি না।হয়তোবা পৌঁছাবে,হয়তোবা না।এমন ও হতে পারে কয়েকযুগ পরে তোমার হাতে পড়বে যখন আমি নামে কোনো অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে আর থাকবে না।
ঠিকানা বিহীন চিঠির পাতা গুলো কোন এক ডাকবাক্সে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকবে বছরের পর বছর ।তারপর চিঠির খাম তেলাপোকা আর ইঁদুরের খাবারের বাকি টুকরো হয়ে ডাকবাক্স পরিস্কার করার জন্য রাস্তার কোনো এক পরিত্যক্ত জায়গায় পড়ে থাকবে।
জীবনের বিষন্নতা তোমাকে ঘিরে ধরবে, বার্ধক্যের কারনে লাঠি হাতে ঠকঠক করতে করতে ভুল পথে আনমনে হাটতে হাটতে একটুকরো কাগজ উড়ে এসে তোমার পায়ের উপর পড়বে।
তোমার কাঁপা শরীর ঝুকিয়ে কাগজটা হাতে নিয়ে চশমা ঠিক করতে করতে চেনা হাতের লেখা মনে পড়ে চমকে উঠবে,আর বাকি টুকরো গুলো ময়লার মধ্যে ব্যস্ত হয়ে খুঁজতে থাকবে।
কারণ তুমি জানো আমি আট দশ পাতা করে চিঠি দিতাম তোমাকে।এতো লেখার জন্য কত বকা দিয়েছো তবুও অভ্যাস বদলাতে পারি নি,পারিনি তোমাকে কম করে চিঠি লিখতে।সত্যি বলতে আমার মনের অনুভূতি তোমার জন্য শেষ হয় না কি করবো বলো?
আকাশ সমান কাগজ আর সাগরের পানি সমান কালি হলেও তোমাকে কতটা ভালোবাসি প্রকাশ করে শেষ করতে পারবো না।
হয়তো অবশিষ্ট তারিখ ০১/০১/২০০৮ আর শেষ অংশের নামটুকুই চিঠির শেষ সম্বল হবে।তুমি কাঁদতে চাইবে আমাকে মনে করে কিন্তু শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাবে প্রচন্ড কষ্ট পাবে,বুকে হাতচাপড়াবে আর কাঁদবে শুধু আমাকে কষ্ট দিয়েছো ভেবে, জীবনের শেষ সময় একটিবার ক্ষমা চাইবার জন্য উপরোআলাকে স্মরণ করবে যদি সম্ভব হতো একটিবার ভুল গুলো সুধরে নিতে।
কিন্তু না যোগাযোগের সব রাস্তা নিয়তি বন্ধ করে দিয়েছে।চাইলেই কিছু সম্ভব না।জানো ততদিনে চিঠি লেখার সময় আমার চোখের ঝরে পড়া পানি গুলো শুখিয়ে যাবে,আর আর্তনাত ভরা কথাগুলোর কিছুই বাকি থাকবে না।
তুমি জানতে পারবে না মৃত্যুর শেষ মুহূর্তেও তোমাকে একটা নজর দেখার জন্য কত ছটফট করছি,তোমার হাতদুটো খুঁজেছি আমার মুখটি একটি বার ছুঁয়ে নিতে।
মনে পড়ে প্রিয় তুমি সব সময় বলতে “তোমার চোখ জোড়া ভীষণ সুন্দর”।আমার চোখ জোড়ার নিচে কালো দাগ পড়েছে কাঁদতে কাঁদতে,আর না ঘুমোতে ঘুমোতে শুধু তোমাকে ভেবে ভেবে।জানো প্রিয় নারী যার কাছে প্রথম প্রেম শেখে কখনও তাকে ভুলে না।চাইলেও ভুলা যায় না।
তোমার প্রিয় আমার চুলগুলো কত বার হাত বুলিয়েছো তার ঠিক নেই।আজ চুলগুলো এলোমেলো রুক্ষ কত দিন আয়নাতে মুখ দেখিনা তার হিসেব কে রাখে বলো?
শুধু চেয়ে থাকি চেনা পথের বাকে ছুটে যাবো তোমার ডাকে।কোনো কুয়াশা ঘেরা ভোরে,না হয় উত্তপ্ত দুপুরে,হতেও পারে গোধূলি লগ্নে।দেখা দিও প্রিয় স্বপ্নের ঘোরে।
কত কিছু বলতে ইচ্ছে করে অভিমান করি একাকী নিরবে কাঁদি।আমার জীবনে টাকা পয়সা ভালো চাকরি সব আছে শুধু তুমি নামে মানুষটার অভাব আমার সারা জীবন থেকে যাবে।খুব ভালোবাসি গো তোমারে।খুব মায়া লাগে তোমার জন্য, মনে হয় দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরে তোমার বুকের মাঝে মিশে অদৃশ্য হয়ে যায় যেনো কেউ খুঁজে না পাই।
কোনো অভিযোগ নেই শুধু বলবো যেখানেই থাকো ভালো থেকো।আমাকে ভুলে যেও,না হলে আমার মতোই কষ্ট পাবে।চাই না তুমি আমার মতো কষ্ট পাও।
ইতি
তোমার ভালবাসার পাগলি
আশা
————————————-
কিভাবে বিশ্বাস করি বলো?
————————————-
তুমি কি বেঁচে আছো?
সত্যি বেঁচে আছো?
জানো তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আমার।
আমাকে না পেলে তুমি বাঁচতে পারবে না,
পাগল হয়ে যাবে,
নিজের জীবন নষ্ট করে ফেলবে,
এই কথাগুলো তোমার মুখে কোটি বার শুনেছি।
আমাকে হারানোর কত ভয় তোমার চোখে দেখেছি অশ্রু হয়ে ঝরেছে।
সেই মানুষ আমাকে হারিয়ে একবার চোখের পানিও ফেলো নি,কষ্ট পাওয়া দূর আর মৃত্যু অলিক স্বপ্ন।
সত্যি বলতে কি জানো?
আমি চায় না তুমি কষ্টে থাকো,
আমার মতো দুঃখ পুষো,
আমার মতো নিরবে কাঁদো,
আমার মতো তিলে তিলে নিজেকে ধ্বংশ করো।
আমি চাই
তোমার জীবন খুশির জোয়ারে ভেসে যাক
তোমার জীবন পূর্ণতা পাক।
——————————-
ধনী গরিবের ভেদাভেদ
——————————-
মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েই
মানুষকে করি হিংসা,
মানুষে মানুষে খুন খারাবি
হয়না কখনও মিমাংসা।
ধনীর যাতায় গরিব পিষে
পায়না কভু ছাড়,
গরীব হয়ে জন্ম নিয়েই
গর্দান যায় তার।
ধনীর বাড়ি গরিব গেলে
করে কত অপমান
গরীবের বাড়ি ধনী গেলে
কত হাজার সম্মান।
গরীবের ঘরে খাদ্যের অভাব
মায়া একটু বেশি
ধনীর ঘরে পাষাণ পুরি
টাকা পয়সায় খুশি।