কলমেঃ কামরুন নেসা লাভলী
বাবা, আমার জম্ম লগ্নে আমার কানে
আজানের সুমধুর ধ্বনি পৌঁছেছিল
কিনা আমি জানিনা,
সেদিন তুমি, আমায় কোলে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে আর্শিবাদ করে ছিলে কিনা?
খুব জানতে ইচ্ছে হয়।
সেদিন শীতের প্রথম প্রভাতে
শিশিরের দূর্বাঘাসের
শরীরে আন্দোলিত হয়েছিল কিনা
তা বোধ করি কেউ বলেনি আমায়
বাবা, শুনেছি তুমি দিলে সকলের বন্ধু প্রীতম বাবা, মার মুখে শুনেছি
তুমি ছিলে খুব স্নেহ পাগল।
বাবা, তুমি কেমন ছিলে ?
তোমাকে একবার খুব
কাছে পেতে ইচ্ছে করে
খুব ইচ্ছে করে তোমাকে
একবার ছুঁয়ে দেখতে
সবার মত আমার ও
বাবা বলে ডাকতে ইচ্ছে হয়
বাবা – বাবা,
বন্ধুরা যখন খুব আনন্দে
ওদের বারার কথা বলে,
তখন খুব বেশী মনে পড়ে তোমাকে।
বাবা, সুখে যদিও বা কখন ও ভুলি তোমায় দুঃখী আমি কি করে ভুলি তোমায় ?
বাবা, বড় জানতে ইচ্ছে হয় যে
আমার জন্ম মুহূর্তে
আকাশ মাটিতে কতখানি
শান্তি আর কতটুকু যুদ্ধের
বারতা ঘোষণা করেছিলো,
কিবা, শান্তির পায়ারা উড়েছিলো
নাকি — আকাশে ঘন কালো
মেঘ উদ্দাম নৃত্যে মেতে ছিল,
বজ্রপাতে বৈদ্যুতিক খুঁটির তারে
কোন কাকের মৃত্যু হয়েছিল কিনা —
আমার জানা হয় নি
সেদিন গোলাপ বাগানে,
একটি ফুল ফুটেছিল কি?
নাকি মাটি ও নির্মম আঘাতে
ছিল রুক্ষ সূক্ষ খাঁ খাঁ বিরান —
নদীর কুলে ও কি ঢেউ বিদ্রোহ
জানিয়ে ছিল কিনা খুব
ইচ্ছে হয় জানতে ?
বাবা কতবার, তোমাকে বা-বা
বলে ডেকেছি আমার মনে নেই।
বাবা, তোমাকে যখন ছাড়তে
হয়েছে পৃথিবীর বন্ধন
আমার জ্ঞান টুকু বোধ করি
তখন ও হয়নি তার পর
বাবা বলে কাউকে ডাকেনি কখনো
শুধু একটু জানি
তুমি যতদিন ছিলে এ মায়ার পৃথিবীতে
আমার মুখে ভালো করে শব্দের বোল ফুটেনি। জানো বাবা, মাকে – তোমায় নিয়ে
কখন ও কাঁদতে দেখিনি- পাছে তোমার সন্তানেরা তোমায় মনে করে —
ব্যর্থ আঘাতে কষ্ট পায়,
তাই নিরবে আড়ালে
চোখের জলে দুঃখ বিসর্জন
দিয়েছে একাকী নির্জন প্রহর ব্যথা।
বাবা-ঈদ এলে নতুন জামা জুতো
আরো কত কি কিনে দিতে , তুমি?
ঈদে তোমার প্রিয় সেই সুগন্ধি সাবানে মায়া
জড়ানো গন্ধ আজ ও ভাই বোনরা, ভুলিনি
বাবা-আমাকে দেয়া তোমার সেই ছোট্ট অবুঝ বেলার একটা জামা পুরোনো আলমিরায় অবহেলায় এক কোনে, পড়ে ছিল
আমি স-যতনে সেই জামাটি-
রেখেছি নিজের কাছে
মাঝে মাঝে তোমার স্পর্শ আছে বলে
জামাটিতে হাত বুলিয়ে তোমার
হাতের স্নেহ-পরশ পেতে চাই-খুব আবেগে।
বছর ঘুরে যখন তোমাকে হারাবার
দিনটি ফিরে আসে তখন
খুব কাছে পেতে ইচ্ছে হয়,
নতুন বছরের শুরুতেই আনন্দ উল্লাসে
নতুন আশাতে- পুলকিত হয় সবাই
হয়তো — বাদ পরিনা আমি ও
কিন্তু পরক্ষনেই মনে করিয়ে
দেয় আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া
তোমাকে হারাবার সেই চিরায়ত কষ্ট
গোপন ব্যথায় পরিস্ফুটিত
হই আমি, আমারা — বাবা তোমায় নিয়ে
আমার কোন সুখ স্মৃতি কিংবা
দুঃখ স্মৃতি নেই- যা আমি রোমন্থন করব
তাই মনের গভীরে এক
পশলা কালো মেঘ হয়ে,
কখন কখন ও সে বরফ গলে
চোখের জল হয়ে ঝড়ে —
বাবা, তোমার সেই একটি – মাত্র ছবি
অথচ কি বিশাল দুঃখ! বয়ে বেড়াই
নির্জন প্রহর ব্যথা
বাবা, তুমি আমার সেই প্রিয় বাবা
আজ ও রেখেছি নিভৃত সুপ্ত হৃদয়ে
মৌন গভীর অনুভূতিতে।।