কলমে: রোজিনা খাতুন
আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আজও আছি,
যেদিন তোমার মাথার চুলগুলো সাদা হবে।
শরীরের চামড়া কুঁচকে যাবে বয়সের ভারে,
লম্বা সাদা দাঁড়ি গুলো মেহেদী পাতায় লাল করবে।
গায়ে থাকবে ঢিলেঢালা পান্ঞ্জাবি,
চোখে পাওয়ারের মোটা ফ্রেমে চশমা আর
হাতে থাকবে নুইয়ে পড়া শরীরকে সাপোর্টের লাঠি।
হয়তো সেদিন আমিও তোমার মতো বৃদ্ধ হবো
দাঁত হয়তো অবশিষ্ট একটাও থাকবেনা
পান খেয়ে জিহ্বা-ঠোঁট লাল থাকবে।
কথাগুলোর মধ্যেও জড়তা আসবে।
ঝাপসা থাকবে চোখের সামনের সব কিছু।
কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে কোন একদিন হাঁটতে বের হবে
পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের খোঁজে।
রাস্তার টুকরো ইটে হুঁচোট খেয়ে পড়ে যাবে তোমার চশমাটা,হারিয়ে ফেলবে লাঠি।
হামাগুড়ি দিয়ে ধুলোর মধ্যে খুঁজতে থাকবে অন্ধের বেশে।
এভাবে কাটবে কিছুটা সময়।
আমি তখন দাঁড়িয়ে তোমার ঠিক একটু খানি দূরে।
নিজের চশমা ঠিক করতে করতে তোমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চমকে উঠবো।
ফেলে আসা অতীত আজ এতো বছর পরে চোখের সামনে।
কতটা আর্তনাদ,আহাকার,বুকের কাঁপুনি,বিশ্বাস করো সহ্য করতে ভীষণ কষ্ট হবে আমার।
গলার নিচে আটকে আসবে নিঃশ্বাস।
খুব ইচ্ছে করবে চশমা আর লাঠিটা হাতে উঠিয়ে দিতে।
কিন্তু যদি কিছু ভাবো?
যদি পুরনো অভিযোগে আবার দোষী করো?
ভাবনার আকাশে হারিয়ে গিয়েও ফিরে আসবো,
চশমা আর লাঠিটা হাতের মধ্যে ঠিক গুঁজে দিবো।
তুমি চমকে উঠে বলবে,কে?
হাতের স্পর্শ বড় চেনা চেনা লাগে।
কে?কে তুমি?
কিচ্ছু বলবো না,শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকবো।
তার পর বলবো-
কি এমন দামী জিনিস চেয়েছিলাম বলো?
শুধু চেয়েছিলাম তোমার সাথে কুড়েঘরে একটা চালের নিচে বৃদ্ধ হবো
একটা পান বেটে দুজনে ভাগ করে খাবো
খালপাড়ে হাতধরে সূর্যের আলোয় দুজনে বসবো।
কেনো তুমি বেকারত্বের দোহাই দিয়ে ছেড়ে গেলে আমায়?
এর কোন উত্তর তোমার কাছে থাকবে না জানি।কারণ ততদিনে নাতি নাতনীদের ঘিরে ভরা সংসার তোমার।
আমি শুধু তুমি হীনা শূন্য জীবন নিয়ে চলি পথের বাকে সময়ের সাথে।তবুও বলবো সুখে থেকো।