আমির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন সোলেমানপুর থেকে শ্রীলাইন পর্যন্ত বর্ধিত গুরমার হাওরের ৯টি পিআইসির ৫টিই অক্ষত। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তবে অক্ষত এই বাঁধ গুলোতে সামান্য মাটির কাজও এখনও শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও এই উপজেলার বাঁধ নির্মাণে পিআইসি গঠন থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজেই অনিয়ম হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাওর পাড়ের কৃষকগন।
কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শত ভাগ শেষ করার নিয়ম থাকলেও সময় পেরিয়ে ২দিন অতিবাহিত হলেও শেষ হয়নি বাঁধের কাজ। এনিয়ে উপজেলার সচেতন মহল ও কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ৬নং প্রকল্প থেকে ১৪নং প্রকল্প পর্যন্ত। তবে ৬নং প্রকল্প ছাড়া কোথাও প্রকল্পের সাইনবোর্ড নেই। মাটির কাজও সঠিক ভাবে শেষ হয়নি।
এসব বাঁধ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের সোলেমানপুর থেকে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীলাইন তাহিরপুর পর্যন্ত বাঁধ গুলো প্রায় অক্ষত। এর মধ্যে ভবানীপুর থেকে জয়পুর-গোলাবাড়ি পর্যন্ত বাঁধ সম্পূর্ণই ভাল। এসব বাঁধে হাওরের জাঙ্গাল কেটে বাঁধের মাটি দায়সারা মাটি দেয়া হয়েছে। পুরনো অক্ষত বাঁধ নতুন দেখাতে দেয়া হয়েছে মাটির প্রলেপ।
আর ভবানীপুর পেরিয়ে কিছুদূর যাবার পরই নতুন অক্ষত বাঁধে সামান্য মাটি দেয়া হয়েছে। এর সামনে পুরনো অক্ষত বাঁধটি করছে ঝলমল। ৬.৫ পয়েন্ট উচ্চতায় বাঁধ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন পয়েন্টে সেই উচ্চতা নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের পুরাতন অক্ষত বাঁধকে মাটির প্রলেপে নতুন দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন হাওর পাড়ের কৃষকগন।
তাহিরপুর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান,৬-১৪নং প্রকল্প পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণে প্রায় পৌনে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এসব বাধেঁর ভবানীপুর থেকে শ্রীলাইন তাহিরপুর পর্যন্ত বাঁধ কমপেকশন করা হচ্ছেনা। দুর্বা ঘাস লাগানোর নামও নেই। কোথাও কোথাও অক্ষত বাঁধে বিশাল মাটির টুকরো রাখা হয়েছে।স্থানীয়দের চলতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন,উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের
সোলেমানপুর থেকে ১৪ নম্বর প্রকল্পের দুই তৃতীয়াংশই অক্ষত ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন সরকারি বরাদ্দ অপচয় করতে এখানে প্রকল্প বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন সামান্য মাটির প্রলেপ দিয়েই বিল হাতিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ নম্বর প্রকল্পটিকে স্থানীয়রা প্রশাসনের পিআইসি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জয়পুর গ্রামের এক কৃষক বলেন,সোলেমানপুর থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত বাঁধের বেশির ভাগই অক্ষত। তারপরও উচ্চতা লেভেল অনুযায়ী মাটি ফেলা হয়নি। কমপেকশনও বাকি। তাছাড়া ১৪ নম্বর প্রকল্পকে তিনি প্রশাসনের প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেন।
জয়পুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক মো. নূরুল আমিন বলেন,বাঁধ গুলোর কাজ দায়সারা কাজ চলছে। যেখানে বাঁধ দেয়ার কথা না সেখানেও দিচ্ছে। এতে হাওরের ক্ষতি হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন কিছু অক্ষত বাঁধ রয়েছে স্বীকার করে জানিয়েছেন,ঐসব বাঁধে বরাদ্দ কম দেয়া হয়েছে। তবে বাঁধের বিষয়ে কথা বলতে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। সেই সাথে সাইনবোর্ড গাছের আড়ালে ঢাকা পড়েছে বলে জানান।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পাউবো কমিটির সভাপতি আবুল হাসেম জানান,মাটির কাজ প্রায় শেষ। পাউবোর ডিজাইন অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে। কাজ যাতে যথা নিয়মে হয় সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।