লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
জেনারেল (অবঃ) কেএম সফিউল্লাহ ২৬ শে জানুয়ারি ২০২৫ সালে কম্বাইন্ড সামরিক হাসপাতালে ৯০ বছর বয়সে মৃত্যু বরন করেন (ইন্না-লিল্লাহ –)! মৃত্যু কালে তার সহধর্মীনি সাঈদা আক্তার, তিন মেয়ে ও এক ছেলে উত্তরসূরী রেখে গেছেন। দুই মেয়ে লন্ডন এবং ছেলে ও এক মেয়ে রূপগঞ্জে থাকেন! তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন! সেখান থেকে একবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন! আমি পরিবার সহ কয়েকবার শীতালক্ষ্যার পাড়ের বাড়ীটায় গেছি । সে বাড়ীতে তার উত্তরসূরী ভাতিজা ভাতিজীরা আমাদের সব আত্মীয় স্বজন নিয়ে গেটটুগেদার করে থাকেন!
জেনারেল সফিউল্লাহ সাহেবকে বনানী কবরস্থানে যথাযথ মর্যাদায় কবরস্থ করা হয়েছে! বর্তমান সেনাপ্রধান “জেনারেল ওয়াকার – উজ – জামান” গার্ড অফ অনারে উপস্থিত ছিলেন!
মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর তিনের (সিলেট) কমান্ডার সফিউল্লাহ সাহেব সরাসরি অনেক যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কে নিজে উপস্হিত থেকে পরাস্ত করেছেন! দুইবার তিনি নির্ঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান! ১৯৭১ এর রণাঙ্গনে অধিক চাপ সৃষ্টি করতে মুজিব নগর সরকার আরো তিনটা বাহিনী তৈরি করেন ১ লা অক্টোবর! সফিউল্লাহ ফোর্স, জিয়া ফোর্স ও খালেদ ফোর্স! These were the military brigade of Bangladesh armed forces that was formed under the leadership of Shafiullah, Khaled and Zia . S. Force brigade was composed of the 2nd & 11 th East Bengal. The garison was Fatikchara under direct guidance of K M Shafiullah!
প্রিয় পাঠক, সফিউল্লাহ সাহেব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২য় সেনাপ্রধান ছিলেন, প্রথম সেনাপ্রধান ছিলেন “কর্নেল এমএজি ওসমানী! দু’জন ই ছিলেন মনে প্রানে বাঙালি ও সৎ সেনাকর্মকর্তা! জিয়াউর রহমান ছিলেন চাকুরী বয়সে সিনিয়র, ১৯৭২ সালে এপ্রিলে সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধু গঠিত করার সময় তিনি “জিয়াকে’ সেনাপ্রধান করতে চাইলেও কর্নেল ওসমানী জুনিয়র সফিউল্লাকে সেনাপ্রধান করতে অনঢ় থাকেন!
সফিউল্লাহ সততার সাথে সে কথা স্বীকার করেছেন কোথাও কোথাও! তিনি পদ লোভী ছিলেন না! ওসমানী সাহেব যুদ্ধ পরিচালনার অভিজ্ঞতায় যে সিলেকশন দিয়েছিলেন “মুজিব” তা মেনে নিয়েছিলেন “! ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর খন্দকার মোশতাক সফিউল্লাহর স্থলাভিষিক্ত করেন ” মেজর জিয়াকে”, শফিউল্লাহ সেনাপ্রধানের পদ হারান!
জেনারেল সফিউল্লাহ ৭ ই মার্চ মুজিবের রেসকোর্স ভাষন কে স্বাধীনতার ঘোষণা মানতেন বিধায় ১৯৭১ সালের ১৭ ই মার্চ সর্বপ্রথম বিদ্রোহ করেন, সম্ভবত তার ব্রিগেড তখন গাজীপুর ছিলো, সেখান থেকে পুরা ব্রিগেড নিয়ে বিদ্রোহ করেন! তিনি বুঝেছিলেন, যুদ্ধ অনিবার্য অথবা “মুজিবের” কোন গোপন নির্দেশ ছিলো সব সিনিয়র বাঙালি সেনা অফিসারদের উপর।! যেমন তাজউদ্দীনদের উপর নির্দেশনা ছিলো কোথায় যেয়ে কার সাথে দেখা করবেন! পরবর্তীতে সিআরদত্ত ও অন্যান্যরা বিদ্রোহ করেন! মেজর জিয়া বিদ্রোহ করেন ২৭ মার্চ ১৯৭১, তিনি সাপ্তাহিক বিচিত্রায় লিখেছিলেন একটা আর্টিকেল, I revolt — — —
আজ অনেক স্মৃতি পড়াশোনা থেকে জানা স্মৃতি পটে ধোয়াসায় আছন্ন! মস্তিষ্ক নিঃসৃত লেখা উনিশ-বিশ ত্রুটিবিচ্যূতি থাকলে-ও থাকতে পারে!
জেনারেল সফিউল্লাহ লেখালেখি করতেন! তার অনেক লেখা, বই না হলে-ও দুটো বই খ্যাতি পায়, ১. যুূূ্দ্ধে বাংলাদেশ ও ২. ১৫ ই আগষ্ট একটা জাতীয় ট্রাজেডি! যাদের পড়ার অভ্যাস আছে এবং কিছু জানতে চান তারা বই দু’টো সংগ্রহ করে পড়বেন। পাবেন ঐ সময়কার সত্যি ইতিহাস!
জেনারেল সফিউল্লাহ ১৫ ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালে ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারতেন যেমন চলে গেলেন
সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ হুদা হায়দার !
সবার কাছে মুক্তিযুদ্ধের এত বড় দায়িত্ব পালন কারী ও স্বাধীনতা উত্তর সেনাপ্রধানের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি এবং দূঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি, এমনি একদিন হারিয়ে যাবে স্ব চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের চাক্ষুষ সাক্ষীরা, পরবর্তী প্রজন্ম পাবে ফরমালিন যুক্ত ইতিহাস, মনগড়া!